আমাদের অদম্য অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

আগের সংবাদ

বাজার তদারকি দৃশ্যমান নয়

পরের সংবাদ

হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির দাবি : হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ হয়নি

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক সুনামগঞ্জের হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, তাদের হিসাব অনুযায়ী হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত শেষ হয়েছে। বর্তমানের কাজের শেষ পরিমাপ চলছে, সেটি শেষ হলেই চূড়ান্তভাবে বলা যাবে বাঁধের কাজ কতটুকু শেষ হয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলছেন, চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল সুরক্ষায় ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ৭৩৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী চলতি বোরো মৌসুমে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু ও চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত ১৫ ডিসেম্বর নিয়ম রক্ষার্থে কয়েকটি বাঁধে লোক দেখানো কাজ উদ্বোধন করা হয়। সর্বশেষ মার্চ মাসেও কিছু কিছু বাঁধের কাজ শুরু করা হয়েছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন হাওরপাড়ের প্রান্তিক কৃষকরা।
ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারিতে যে বাঁধের কাজ শেষ হবে সে বাঁধ আগাম বন্যার চাপ সামলাতে সক্ষম হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে মার্চ মাসে যেসব বাঁধের কাজ শুরু করে নিয়ম রক্ষার কাজ করা হয়েছে আগাম বন্যা এলে প্রথমেই সেসব বাঁধ ভেঙে যাবে বলে শঙ্কা করছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল বলেন, এবার বাঁধের কাজে শুরু থেকেই এক ধরনের ঢিলেমি লক্ষ করা গেছে। মাঠপর্যায়ে গণশুনানি করে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের দাবি থাকলেও সেটি করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে পিআইসি গঠন করা হয়। এতে প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তাদের একটা যোগসাজশ থাকে, যে কারণে ওই ব্যক্তিরা কাজে গাফিলতি করেন।
সাধারণ সম্পাদক শহীদ নুর আহমদ ও বাঁধবিষয়ক স¤পাদক রাজু আহমদ বলেন, হাওরের কৃষকের স্বপ্নের সোনালি ফসলকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। এবার কৃষকের ধান গোলায় তুলতে কোনো সমস্যা হলে এর দায় কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটিকেই নিতে হবে। তারা আরো বলেন, প্রাক্কলনে কিলোমিটারের যে মাপ

সেটা একটা চালাকি। আমরা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে অক্টোবর, নভেম্বর মাসে যে জরিপ পরিচালনা করি তাতে দেখা যায় অনেক বাঁধে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার মাটি ভরাটের প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রাক্কলনের সময় অক্ষত বাঁধকে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে সরকারের টাকা লুটপাটের কাজ সেখান থেকে শুরু করা হয়। হাওরে অনেক বাঁধ রয়েছে যেখানে মাটি ভরাট না করে শুধু দুর্বাঘাস পরিষ্কার করে মাটির প্রলেপ দেয়া হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেয়া ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোনো বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। আমাদের জরিপে আমরা দেখেছি সেই সময় ৩০-৩৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। এরপর পাউবো ও প্রশাসন গোপনে ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ায়। সেই সময়েও বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। পাউবো সে সময় ৮৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। আমাদের হিসাবে ৭ মার্চ পর্যন্ত ৬০ ভাগ কাজ হয়েছে। গত শুক্রবার পাউবো জানায়, হাওরে শত ভাগ কাজ হয়েছে বলা যায় না, আজ পর্যন্ত ৯৮ ভাগ কাজ হয়েছে। সেটাই শতভাগ। আমরা এ রিপোর্টও প্রত্যাখ্যান করছি। ২২ মার্চ আমাদের বিভিন্ন উপজেলা কমিটির নেতাদের হাওরে পাঠিয়ে দেখেছি, অনেক বাঁধে মাটির কাজ হচ্ছে। অধিকাংশ বাঁধেই ঘাস লাগানো ও দুরমুজ করা হয়নি। তাহলে কীভাবে পাউবো বলছে বাঁধের কাজ শেষ, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাাদক বিজন সেন রায় বলেন, সব উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন কমিটি ও সংবাদ মাধ্যমে বুঝতে পারছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি। নির্ধারিত সময় শেষে ১০ দিন বাড়িয়ে ৭ মার্চ কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ সময়েও ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি ১৫ ডিসেম্বর আপনাদের নিয়ে যেভাবে বাঁধের কাজ শুরু করেছিল সেভাবে আপনাদের আবার নিয়ে বাঁধের শতভাগ কাজ সমাপ্তির ঘোষণা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
২২ মার্চ হাওর বাঁচাও আন্দোলন বিভিন্ন উপজেলা কমিটির নেতারা বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাতে দেখা যায়- দিরাইয়ে বাঁধ নিয়ে পাউবো লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছে। দিরাই উপজেলার ২৭ ও ২৮ নম্বর পিআইসিতে মাটির কাজ যখন শেষ পর্যায়ে হঠাৎ করে পাউবো সেই বাঁধ পরিত্যক্ত দেখিয়ে এ দুই পিআইসির অনুকূলে আরো ৪টি পিআইসি তৈরি করে কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করার পাঁয়তারা চালায়। কৃষকরা তা বুঝতে পেরে বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে বাঁধ এলাকায় কৃষক সমাবেশ করেন। এরপরই পাউবো কৃষকদের প্রতিপক্ষ ভাবতে থাকে। কৃষক সমাবেশে যেসব কৃষক উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে নেতৃত্বদানকারী কৃষকদের আসামি করে পাউবো দিরাই উপজেলার দায়িত্বরত এসও কৃষকদের বিরুদ্ধে দিরাই থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। বৈশাখ মাসকে সামনে রেখে এসওর মামলায় কৃষকরা এখন ফেরারি রয়েছেন। জগদল ইউনিয়নের অনেক বাঁধ রয়েছে যার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি অ্যাড. স্বপন কুমার দাস রায় বলেন, তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়াইন হাওরে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিআইসিতে এখনো কাজ চলছে। ৬৩, ৭৮ ও ৭৯ নম্বর পিআইসির একই অবস্থা। জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরের ২৬ নম্বর পিআইসির ঘনিয়ার বিলের ক্লোজারটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁধ। প্রায় ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে সম্প্রতি কাজটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁধটি।
এদিকে ঘনিয়ার বিলের বিপরীত পাড়ে শনির হাওরের ২ নম্বর পিআইসি নান্টুখালী ক্লোজারটি প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শেষ করা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় আবারো ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাঁধের দ্বিতীয় ধাপের কাজটির অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জামালগঞ্জের উপসহকারী প্রকৗশলী জাহিদুল ইসলাম জনি জানান, হালির হাওরের ঘনিয়ার বিলের ক্লোজার ও শনির হাওরের নান্টুখালী ক্লোজারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। নান্টুখালী বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় আরো ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া শাল্লা উপজেলার ভান্ডাবিল হাওরের ২৮ নম্বর পিআইসির কাজ শুরু হয়নি। ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ নম্বর পিআইসিতে দুর্বাঘাস ঠিকমতো লাগানো হয়নি। ৩৫ ও ৬৪ নম্বর পিআইসির কাজে অসঙ্গতি রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ক্লোজারে কার্পেট ব্যবহার করা হয়নি।
মধ্যনগর উপজেলার ২৪ নম্বর পিআইসি সভাপতি বলেন, বৃষ্টির জন্য কাজ শুরু করতে পারছেন না তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, আমাদের হিসাব অনুযায়ী হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ৯৫ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত শেষ হয়েছে। বর্তমানের কাজের শেষ পরিমাপ চলছে, সেটি শেষ হলেই বলা যাবে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ কতটুকু শেষ হয়েছে। তাছাড়া হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে কারো কোনো গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়