গাজীপুরে দেড় কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার ২

আগের সংবাদ

রাজধানীজুড়ে মশার রাজত্ব

পরের সংবাদ

বন্ধ হোক পলিথিন, সন্ধি হোক পাটের সঙ্গে

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একসময় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হওয়ার কারণে ‘সোনালি আঁশ’ নামে খ্যাতি পায় পাট। তবে বর্তমানে পলিথিনের অত্যধিক ব্যবহার, পাটের উৎপাদন কমে যাওয়া, সহজলভ্য থেকে দুর্লভ হয়ে যাওয়া, দেশের অধিকাংশ পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়া, পাট ব্যবসা ও চাষ অলাভজনক হওয়াতে পাটের ব্যবহার একদমই কমে গিয়েছে। পাটের ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে মূলত মুখ্য ভূমিকা পালন করে পলিথিন। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবেশ দূষণ। পলিথিন একটি অপচনশীল এবং দীর্ঘস্থায়ী উপাদান। বাংলাদেশে খাবার, পোশাক, ইলেকট্রিক জিনিসপত্র, প্রসাধনী ও ওষুধসহ ইত্যাদি প্যাকেজিং, পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের পাত্র, বোতল, কৃষি ক্ষেত্রে বীজ রোপণ, সার প্রয়োগ, সেচ, ফসল সংরক্ষণ, গ্রিন হাউস, প্লাস্টিকের পাইপ, মালচিং, ভবন নির্মাণে পানি ধরে রাখা, ছাদ ঢাকা, মেঝে ঢাকা, পানির ট্যাংক নির্মাণ, প্লাস্টিকের দরজা-জানালা নির্মাণ, খেলনা, ফার্নিচার, জিনিসপত্র, প্লাস্টিকের মোড়কসহ ইত্যাদি নানা কাজে পলিথিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পলিথিন হলো এক প্রকার প্লাস্টিক, যাতে পেট্রোলিয়াম থাকে এবং প্লাস্টিককে নরম করে পলিথিন বানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পলিথিনে সিসা, ক্যাডমিয়াম, পারদসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী ধাতু রয়েছে। পলিথিনে থাকা এসব উপাদান মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পলিথিনের কারণে মাটি ও পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই পলিথিন দায়ী।
এদিকে সহজেই পচনশীল, দ্রুত মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া, সহজেই উৎপাদন যোগ্য পাট খুবই কম ব্যবহার করা হচ্ছে। একসময় বাংলাদেশের অর্থনীতি যেটির ওপর নির্ভরশীল ছিল, যেটি ছিল অন্যতম প্রথম ও প্রধান রপ্তানির শীর্ষে থাকা পণ্য, তা আজ অবহেলিত এবং দুর্লভ হয়ে পড়েছে। পাট পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ভালো এবং উপকারী একটি জিনিস। পাট সাধারণত ব্যাগ, বাক্স, বোতলের বিকল্প, খাবার ও ওষুধ প্যাকেজিং, বস্তা, দড়ি, সারের ব্যাগ, মালচিং, জৈব সার, ছাউনি, মেঝে ঢাকার উপাদান, দেয়ালের উপাদান, পানির ট্যাংক, জৈব ভিত্তিক প্লাস্টিক, খেলনা, ফার্নিচার, জিনিসপত্র, মোড়কসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী। এছাড়া পাট খুবই টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী। এটি দ্রুত বর্ধনশীল ফসল হওয়াতে প্রতি বছর কাটা যায়। এর আরেকটি বড় উপকারি দিক হলো, এটি বৃদ্ধি পাওয়ার সময় বায়ু থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে থাকে। পাটের চাষ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাহায্য করে থাকে।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পলিথিন পাটের চেয়ে ভালো। পলিথিন কম খরচে পাওয়া যায়, এটি পানি ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা যায়, ওজনে হালকা, বিভিন্ন আকারে ও বৈশিষ্ট্যে পাওয়া যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে পলিথিনের ব্যবহার রেখে এবং সেসব ক্ষেত্রে পলিথিনের পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করে আমাদের উচিত বাকি সব ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনে মানবদেহ, পরিবেশ, দেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ও সুরক্ষায় পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি করা ও পাট যাতে সব প্রয়োজনীয় কাজে সর্বদা ব্যবহৃত হয় তা সুনিশ্চিত করা।
তাই পাট উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জনগণ ও সরকার সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পাটের তৈরি সব জিনিসপত্র ব্যবহার করে পাটের চাহিদা বৃদ্ধি করতে হবে, যারা পাট চাষ করে তাদের সাহায্য করার জন্য সব উপায়ে সহায়তা করতে হবে, পাটের ব্যবহার ও সুবিধা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। সরকারকে উন্নত পাটের জাত উদ্ভাবন এবং পাট উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ করতে হবে, পাট চাষিদের জন্য ভর্তুকি, ঋণ, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য প্রণোদনা প্রদান করতে হবে, পাটের বাজারজাতকরণে উন্নত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার, কীটপতঙ্গ ও রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পাটের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার মাধ্যমে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। পরিশেষে, পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ গঠন এবং পাটকে অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা তৈরি করতে হবে।

মো. মিনহাজুর রহমান মাহিম : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়