রাজধানীতে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

আগের সংবাদ

ঝুঁকির মধ্যেই অনিয়ম বহাল

পরের সংবাদ

অবন্তিকার আত্মহত্যা : একটি বিশ্লেষণ ও কয়েকটি প্রশ্ন

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি ফাইরুজ অবন্তিকা নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার আগে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তার আত্মহত্যার জন্য দুজন মানুষকে দায়ী করেছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আরেকজন তার ব্যাচমেট আম্মান সিদ্দিকী। সে লেখায় অবন্তিকা উল্লেখ করেন, তার ব্যাচমেট আম্মান সিদ্দিকী তাকে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করে। আর প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আম্মানের হয়ে তাকে বিভিন্ন সময়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে এবং বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা শুরু করে। এক পর্যায়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে তার ছাত্রত্ব খেয়ে ফেলার হুমকি দেন প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন দৃশ্য দেখারও কি বাকি ছিল! অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় প্রক্টর দ্বীন ইসলাম কি করে দায় এড়াবেন? যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মকাণ্ডে অবন্তিকা শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে দ্বীন ইসলাম যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা কি তিনি করতে পারেন? একটি সম্ভাবনাময় জীবনকে অপমৃত্যুর কোলে ঠেলে দিলেন! এর জন্য কি শেষ পর্যন্ত তার কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে?
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে বড় একটা ‘ফাঁদ’। যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এসে নানামুখী যন্ত্রণা আর সহিংসতার শিকার হয়ে নিজেকে বলি দিতে হয়। অবন্তিকা যার জ্বলন্ত উদাহরণ। এরকম হাজারো অবন্তিকার প্রতিনিয়ত অপমৃত্যু ঘটে এমন ফাঁদে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন আর শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। শুধু শিক্ষার পরিবেশই নয়, ঠিকভাবে বেঁচে থাকারও পরিবেশ নেই। নানা অনিয়ম, সংকট আর সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নষ্ট রাজনীতি ও নৈতিক স্খলন এখন প্রকট আকারে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় তার আদর্শ ও উদ্দেশ্যের জায়গায় আর নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতন এখন চরম পর্যায়ে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বীন ইসলাম যার প্রমাণ। মেয়ে শিক্ষার্থীদের তারা নানাভাবে হেনস্তা ও যৌন হয়রানি করে থাকেন। যেগুলো ওপেন-সিক্রেট, সবার জানা। কিন্তু ভুক্তভোগী অনেক মেয়ে নিজের ভবিষ্যৎ আর সামাজিকতার কথা ভেবে নিশ্চুপ থাকেন। একে ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ বলে মেনে নিয়ে মানিয়ে চলেন। কঠিন এক মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করতে হয়। তবে কেউ কেউ এ যাত্রায় টিকে থাকতে পারেন না। যেমনটা পারেননি ফাইরুজ অবন্তিকা। নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। অবন্তিকার আত্মহত্যা এক নীরব প্রতিবাদ। তার এই আত্মহত্যা আমাদের জন্য বড় এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। তার আত্মবিসর্জন এই সমাজ আর রাষ্ট্রের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শিক্ষাঙ্গনে মেয়েরা কতটা সহিংসতার শিকার হয়, তারা কতটা অনিরাপদ। আমরা তো এক অবন্তিকাকে হারালাম। আর কোনো অবন্তিকা যাতে সে পথে না যায়, সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব তো? আর অবন্তিকার অভিযুক্ত ঘাতকদের কি কিছু হবে? বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ‘কিছু না হলেও’ অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

ইমরান ইমন : লেখক ও গবেষক ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়