খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি

আগের সংবাদ

শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা উধাও

পরের সংবাদ

নদী রক্ষায় সরকারকেই মূল ভূমিকায় নামতে হবে

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ নদনদী এখন দখল-দূষণ-বর্জ্যে মৃতপ্রায়। বিশেষ করে ঢাকাকে ঘিরে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার সর্বত্রই চলছে দখলবাজদের আগ্রাসী থাবা। তবে আশ্চর্যের খবর হলো, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে। নদনদীর দখল রোধে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনাকে অনেকাংশেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এ পরিস্থিতিতে নদীর প্রতি মানুষের করণীয়, দায়িত্ব এবং মানুষের দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে গতকাল পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নদী সুরক্ষা দিবস। ১৯৯৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। নদী গবেষকরা বলছেন, শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অন্তত ২৮টি নদনদী দখল আর দূষণের শিকার হয়ে এখন মৃতপ্রায়। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর বেহাল দশা। আবর্জনা আর বর্জ্যরে কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গার পানি। দেশের প্রধান নদীগুলোর প্রায় একই অবস্থা। বাঙ্গালি, ধলেশ্বরী, বালু, ব্রহ্মপুত্র, লৌহজং, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, কীর্তনখোলাসহ অনেক নদী নাব্য সংকটে পড়েছে। চলছে আগ্রাসী থাবায় নদনদী দখলবাজির দুর্বৃত্তপনা। যে কোনো নদীর পাড়ে চোখ মেলে তাকালেই দখলবাজির পরিমাণটাও স্পষ্ট হয়ে যায়। অবস্থা এমনই, অনেক নদনদীর অস্তিত্ব মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। দখল ও দূষণের কারণে গত ৪ দশকে দেশের ৪০৫টি নদনদীর মধ্যে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে ১৭৫টি। বাকি ২৩০টিও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ কমে গিয়ে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে যা ৪ হাজার কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়। এই চিত্র ব-দ্বীপটির কৃষি, যোগাযোগ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছুর জন্যই ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। নদনদী, জলাশয় রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এখানে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নদনদী, জলাশয় রক্ষার তাগিদ প্রতিনিয়ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানানো হচ্ছে। পরিবেশ সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের পদাধিকারীরা বলছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত উপেক্ষিত হচ্ছে। সংকট কোথায়? দখল-দূষণকারীরা কি এতই শক্তিশালী যে রাষ্ট্রীয় সব উদ্যোগ তাদের কাছে অসহায়। নাকি সরকারের এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিথিলতা রয়েছে। অভাব রয়েছে সংশ্লিষ্টদের দৃঢ়তায় ও সদিচ্ছায়। আমরা দেখছি, বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে নদনদী মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে, কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই তা আবার থেমেও যায়। নদনদী রক্ষা করতে হবে জাতীয় স্বার্থকে সব ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে। নদী রক্ষায় শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। যে মানুষদের উদ্দেশ্য করে প্রকল্প নেয়া হয়, তাদের স্বার্থ আসলেই সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যপরিধি বাড়ানোর জন্য ২০২০ সালে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এ জন্য জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০২০ এর খসড়া সরকারের কাছে পেশ করেছিল কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এটি দীর্ঘ চার বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। এসব নীতি ও আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি পানি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে। নদীকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়