নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে ইফতার মেয়র আতিকের

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা উধাও

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের দেয়া ১১১ সুপারিশ কাগজে-কলমেই আটকে আছে। বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগই দৃশ্যমান নয়। সড়ক-মহাসড়কের কোথাও এই সুপারিশগুলোর একটিও কার্যকর হয়নি। একইভাবে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বিধি প্রণীত হওয়ার পরও সড়কে এই আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নেই। এদিকে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গত বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আইনের ১০টি ধারায় দণ্ড কমানো ও দুটি অজামিনযোগ্য ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে- ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ, অসচেতন ও অসুস্থ চালক, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালক ও পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, প্রচলিত আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর শিথিলতা প্রদর্শন, প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ওভারটেকিং করা, বিভিন্ন স্থানে সড়কের বেহাল দশা, জাতীয় মহাসড়ক ও আন্তঃজেলা সড়কে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক থাকা। এছাড়া মহাসড়কে বাণিজ্যিকভাবে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল চলাচল, মহাসড়কে স্বল্পগতির তিন চাকার যানবাহন চলাচল, তরুণ ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি ও উদাসীনতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং হাইওয়ে পুলিশের জনবল ও অন্যান্য সুবিধার ঘাটতি, সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেক সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। সড়কে এসব অনিয়ম বন্ধ করতে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল ১১১টি সুপারিশ দেয়। এরপর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ আইন পাস হয়। পরবর্তী সময় দেরিতে হলেও আইনের বিধি প্রণীত হয়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, সড়কে আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের কোনো তৎপরতা নেই। ১১১ সুপারিশ বাস্তবায়নে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ।
বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, চালকদের বেপরোয়া আচরণ ও অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে ৬২ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক আইনে বেপরোয়া গতির জন্য যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, তা পুরোপুরি উপেক্ষিত। সড়ক আইন অনুযায়ী, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় সড়কে শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য থামছে না। আইন প্রয়োগ না থাকায় বাস চালকদের আচরণের কোনো পরিবর্তন আসছে না।
সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, এক সময় ঢাকার রাস্তায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করত। তখনো দুর্ঘটনা এখনকার তুলনায় কম হতো। এর কারণ হচ্ছে, তখন সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ছিল। এখন যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় গতি কমলেও দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে এবং আগের চেয়ে বেড়েছে। দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও চালকদের বেপরোয়া আচরণ। এখন সংশ্লিষ্টদের যে কোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো উচিত; তা না হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। ট্রাফিক পুলিশ ও সরকারি সংস্থা বিআরটিএ উদাসীন থাকলে সড়কে কখনোই শৃঙ্খলা ফিরবে না। তিনি আরো বলেন,

ঢাকায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে সব রুটে কোম্পানিভিত্তিক বাস রুট তৈরি করতে হবে। এই পদ্ধতিতে বাস চালানো হলে চালকদের মধ্যে গতির প্রতিযোগিতা কিছুটা হলেও কমবে। সড়কে পুলিশ ও বিআরটিএ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে শৃঙ্খলা ফিরবে। মামলার ভয় দেখিয়ে সামান্য কিছু ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হলে চালকরা আইন অমান্য করতেই থাকবে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না নেয়া পর্যন্ত সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বড় বড় পদে রয়েছে। তারা এমপি হয়ে জাতীয় সংসদে বসছে। তারা ভেতর ও বাহির থেকে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার, সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় হস্তক্ষেপ করছে। এ কারণে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের দেয়া ১১১ সুপারিশ, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হওয়ার পরও বাস্তবায়ন হচ্ছে না, সড়কেও শৃঙ্খলা ফিরছে না। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে সড়ক আইন শতভাগ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে ‘টেকসই পরিবহন কৌশল’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
ঢাকার রাস্তায় এখনো চলন্ত অবস্থায় বাসের গেট খুলে রাখা হচ্ছে। চালক যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। গতির লড়াই চলছে পুলিশের সামনে। বাসে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পরিচয়পত্রের ফটোকপিও টানানো নেই। কোনো বাসেই বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা খুঁজে পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক ব্যবস্থাপনায় সরকারের পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। দক্ষ চালক তৈরি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস নিশ্চিত করা, ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা হলে সড়কে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। আইনের ৬৯ ধারায় ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত ভুল তথ্য দিলে আগে দুই বছর কারাদন্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা ছিলো। সংশোধনের পর ২ বছর কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান সড়ক আইনে ৮৪, ৯৮, ১০৫ ধারায় জামিন অযোগ্য ছিল। সংশোধনের পর ১০৫ নম্বর ধারা ছাড়া সব ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। মোটরযানের কারিগরি নির্দেশ ভঙ্গ করলে আগে অজামিনযোগ্য ছিল, এখন জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
আইনের ১২ ধারায় লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও গাড়ি চালালে তিন মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ছিল। সংশোধনীতে তিন মাস কারাদণ্ড ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারের জন্য এক মাস কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়