রোগী মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টের তদন্ত কমিটি গঠন : ল্যাবএইড হাসপাতাল

আগের সংবাদ

জলদস্যুদের সাড়ার অপেক্ষা : জাহাজে খাবার আছে ২০-২৫ দিনের > অতীত অভিজ্ঞতায় জিম্মিদশা থেকে মুক্তির আশা

পরের সংবাদ

বাজারের আগুনে রোজার আঁচ

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : রোজা শুরুর আগেই বাজারে সবজিসহ কাঁচামালের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর আমদানি করা পণ্যসহ আরো কিছু পণ্যের দাম আগেই বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই দাম কোন পর্যায়ে যায় তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে সাধারণ মানুষের মনে। এর মধ্যে রোজা হতেই আরেক দফা চড়েছে বাজার। ইফতারসামগ্রীসহ সব ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। অথচ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে কোনো পণ্যেরই সংকট নেই। মজুদ পর্যাপ্ত, সরবরাহও স্বাভাবিক। বিশ্লেষকদের মতে, মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই রমজানের বাজার অস্থির। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, দামের উর্ধ্বগতি দুই-তিন দিনের। এরপর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বেশির ভাগ ভোজ্যতেলসহ অধিকাংশ পণ্যের দামই স্থিতিশীল আছে। আর ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা অভিযান শুরু করেছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- খাদ্যপণ্য, খাদ্যবহির্ভূত পণ্য, কৃষিপণ্য, বেকারি পণ্য থেকে শুরু করে মাছ-মাংস, ডাল-তেল-চিনি- এমন কোনো জিনিস নেই যার দাম বাড়েনি। এর মধ্যে গত এক বছরের ব্যবধানে ৫০টি পণ্যের রেকর্ড দাম বেড়েছে। পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে প্রায়ই বাগবিতণ্ডা থেকে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সূত্রপাত হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে হয়তো কখনো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে, কখনো বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আবার কখনো ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দুয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। কিন্তু এখনকার মতো একসঙ্গে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার রেকর্ড অতীতে কখনো দেখা যায়নি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একসঙ্গে সব ধরনের পণ্যের দাম আগে কখনো এভাবে বাড়তে দেখিনি। তিনি বলেন, কোনো ক্ষেত্রেই কোনো জবাবদিহিতা নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেও মন্ত্রীদের কেউ বলছেন, ‘ঘুম থেকে উঠে দেখবেন ধনী হয়ে গেছেন।’ কেউ বলছেন, ‘দেশের মানুষের আয় ইউরোপের মানুষের আয়ের মতো।’ মন্ত্রীরা এসব কথা বলে ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে আড়াল করে দিচ্ছেন। তাদের মতো দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এ ধরনের মন্তব্য কাম্য নয় বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
বাজারের চিত্র : রোজার বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি চার ধরনের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয় সরকার। পণ্যগুলো হলো : চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর। সেদ্ধ ও আতপ চালের আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম তেল আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। খেজুরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়। আগে আমদানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ। অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক কমিয়ে করা হয় দুই হাজার টাকা, আগে যা ছিল তিন হাজার টাকা। বিশ্লেষণে দেখা

যায়, এই শুল্ক কমানোর ফলে চিনি কেজিতে ৭৫ পয়সা, সয়াবিন তেল লিটারে সাত-আট টাকা, পাম তেল লিটারে সাত-আট টাকা, সাধারণ মানের খেজুর কেজিতে ৩৩ টাকা এবং আমদানি করা চাল কেজিতে ৩৩ টাকা কমার কথা। তবে এখন চাল আমদানি করা হচ্ছে না। কিন্তু ভোজ্যতেল লিটারে ১০ টাকা কমানো হলেও আর কোনো পণ্যে দাম না কমে উল্টো বেড়েছে।
বাজারে যে ৫০ পণ্যের রেকর্ড দাম বেড়েছে তার মধ্যে দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম গত এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। গত বছর প্রতি কেজি চিকন চালের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, এ বছর দাম হয়েছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে চিকন চালের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। গত বছর মোটা চালের কেজি ছিল ৪৫ টাকা, এখন কেজি ৫৫-৫৬ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। এছাড়া পোলাও চালের কেজি এক বছর আগে ছিল ১১০ টাকা, এখন হয়েছে ১৪০ টাকা। আরেক প্রধান খাদ্যপণ্য আটা-ময়দার দাম গত এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গত বছর খোলা আটার কেজি ছিল ৩০-৩২ টাকা, এখন হয়েছে ৫০-৫২ টাকা। বছরের ব্যবধানে খোলা আটার দাম বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। প্যাকেটজাত আটার কেজি এক বছর আগে ছিল ৩৬ টাকা, এখন হয়েছে ৬০ টাকা। বছর ব্যবধানে বৃদ্ধির হার ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। খোলা ময়দার কেজি ছিল ৩৫ টাকা, এখন হয়েছে ৬৫ টাকা। দাম বেড়েছে ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্যাকেটজাত ময়দার কেজি ছিল ৪৫ টাকা, এখন হয়েছে ৭৫ টাকা। বৃদ্ধির হার এখানেও ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
সব ধরনের ডাল এবং মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে অনেকখানি। মসুর ডালের কেজি এক বছর আগে ছিল ১১০ টাকা, এখন হয়েছে ১৫০ টাকা। দাম বাড়ার হার ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশের বেশি। মুগ ডালের কেজি ছিল ৯৫ থেকে ১৩৫ টাকা, এখন দাম ঠেকেছে ১৭০ টাকায়, দর বাড়ার হার ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া চিনির দাম এক বছর আগে ছিল ১১৫-১২০ টাকা, এখন হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আট পিসের প্যাকেটজাত নুডলসের দাম ছিল ১২০ টাকা, এখন হয়েছে ১৪৫ টাকা। ২০২৩ সালের রোজায় খুচরা বাজারে যে ছোলা ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল- এ বছর একই ছোলা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে অতি প্রয়োজনীয় পেঁয়াজের। গত বছর রোজায় যে পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকায় পাওয়া গেছে; এ বছর রোজায় পেঁয়াজের দাম ১১০ থেকে ১২০ টাকা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ২৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া মসলার মধ্যে আদার দাম বেড়েছে ৬০ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত বছর ১৫০ থেকে ১৮০ টাকার আদা এবারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। ব্যবসায়ীরা রোজার বাজারে দাম বাড়াবেই। তাদের ঠেকানোর দৃশ্যমান কোনো প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে না। খেজুর আমদানিকারকরা সরকারকে পাত্তাই দিচ্ছে না। নতুন করে খেজুরের দাম বেধে দেয়া হয়েছে। এটাও কার্যকর হবে বলে মনে হয় না। চিনির দাম বেধে দিয়েও কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমদানি পণ্যের দাম রোজার আগেই ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে নিয়েছে। এখন মাছ-মাংস আর সবজির দাম বাড়ছে।
মাংসের বাজারে আগুন : সব ধরনের মাংসের দাম বাড়ার রেকর্ড হয়েছে গত এক বছরে। গত বছর গরুর মাংসের কেজি ছিল ৫৭০ থেকে ৬০০ টাকা, এখন দাম হয়েছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা। দাম বাড়ার হার ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। খাসির মাংসের কেজি ছিল ৭৫০ টাকা, এখন হয়েছে ১০০০ টাকা। দাম বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। দেশি মুরগির কেজি ছিল ৪০০ টাকা, এখন হয়েছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম ছিল ২০০ টাকা, এখন হয়েছে ৩২০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৪০ টাকা, এখন হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। মুরগির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে ডিমেরও। গত বছর এক ডজন লাল ডিমের দাম ছিল ৯০ টাকা, এখন হয়েছে ১৫০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ছিল ১৮০ টাকা, এখন হয়েছে ২৪০ টাকা। আর হাঁসের ডিমের ডজন ছিল ১৮০ টাকা, এখন হয়েছে ২১০ টাকা।
নতুন করে দাম বেড়েছে আলুর : হঠাৎ করেই দাম বেড়েছে আরেক নিত্যপণ্য আলুর। গত বছর রোজায় ১৮-২২ টাকায় যে আলু পাওয়া গেছে তা এবার ৩০ থেকে ৪০ টাকা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এতদিন ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ায় পণ্যটি ক্রেতার নাগালেই ছিল। কিন্তু সোমবার থেকে রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি আলুতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোল্ডস্টোরেজ থেকেই দাম বাড়ানো হয়েছে আলুর। তার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম দ্বিগুণ : সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে রসুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমদানি করা এক কেজি রসুন কিনতে এখন ক্রেতাদের ২০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীরা আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি করছেন ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়, যা তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। আর দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, যা তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
পণ্যের ঘাটতি নেই, তাবু দাম বাড়ছে : সরকারি সংস্থা এনবিআরের তথ্য বলছে, দেশে গত তিন মাসে রমজানে ব্যবহার বাড়ে এমন চার ধরনের পণ্য খালাস হয়েছে প্রায় সাত লাখ ৮৬০ মেট্রিক টন। এই চার ধরনের পণ্য হলো : ছোলা, চিনি, খেজুর ও ভোজ্যতেল। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত তিন মাসে খেজুর খালাস হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৪০ দশমিক ৭৯ মেট্রিক টন। চিনি এক লাখ ৬০১ মেট্টিক টন, ভোজ্যতেল চার লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪ দশমিক ০৮ মেট্রিক টন এবং ছোলা ৯১ হাজার ৩৫৪ দশমিক ৩৩ মেট্টিক টন। রমজানের জন্য আনা আরো প্রায় সাত-আট শতাংশ পণ্য খালাসের প্রক্রিয়ায় আছে বলে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা দেড় লাখ মেট্রিক টন। রমজানে এ চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় তিন লাখ মেট্রিক টনে। দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮-২০ লাখ টন। চিনির মাসিক চাহিদা দেড় লাখ টন, তবে রমজানে সেটি বেড়ে তিন লাখ মেট্রিক টনে গিয়ে দাঁড়ায়। দেশে প্রতি বছর ছোলার চাহিদা এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হয় রোজার মাসকে কেন্দ্র করে। রমজানে ছোলার চাহিদা এক লাখ টন। এছাড়া, খেজুরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই ৪০ হাজার টন খেজুর প্রয়োজন হয়।
অথচ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরের মধ্যে এবারই রোজার বাজারে চিনি, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজ ও অ্যাংকর ডালের দাম সবচেয়ে বেশি। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রোজার আগে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এ বছর চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। তাতে এক বছরে চিনিতে খরচ বেড়েছে সর্বনি¤œ ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা।
টিসিবির হিসাবে, বাজারে ছোলার দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫ থেকে ৪০ টাকা। তবে টিসিবির দামের চেয়ে বাজারে চিনি ও ছোলার দাম আরো বেশি। বাজারে এখন চিনির কেজি ১৫০ টাকা। ছোলা ১১০ টাকা কেজি। বাজারভেদে এ দুটি পণ্যের দাম টিসিবির দেয়া দামের চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি।
রোজার বাজার স্থিতিশীল রাখতে যা করছে সরকার : পণ্যের বাজার মনিটরিং করতে সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয় ও ১১টি সংস্থা আছে। সেগুলো হলো : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, টিসিবি, বিএসটিআই, সিটি করপোরেশন, প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্যারিফ কমিশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন।
এর মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় রোজার মাসে ঢাকার ৩০টি স্পটে গরুর মাংস ৬০০ টাকা ও খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। আর মুরগির ডিম প্রতি হালি বিক্রি করবে ৪২ টাকায়। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে টিসিবি রোজায় এক কোটি পরিবারকে ছয় ধরনের পণ্য দিচ্ছে ন্যায্যমূল্যে। পণ্যগুলো হলো- ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর, ছোলা ও মসুর ডাল। টিসিবি জানিয়েছে, প্রতিটি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে চিনি ছাড়াও দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, এক কেজি খেজুর ও পাঁচ কেজি চাল বিক্রি করা হবে। প্রতি লিটার তেলের দাম ১০০ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০, চিনি ৭০, খেজুর ১৫০ টাকা দরে কিনতে পারবেন কার্ডধারী ক্রেতারা।
বাজার মনিটরিংয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে। রবিবার রাত থেকেই ভোক্তা অধিদপ্তর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজারে অভিযান শুরু করেছে।
যা বললেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, পেঁয়াজ আমদানির জন্য ভারত থেকে অনুমোদন পেয়েছি। এখন দাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দুয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের শুল্ক বাংলাদেশের জন্য ৮০০ ডলার, আর যুক্তরাজ্যের জন্য এক হাজার ২০০ ডলার। আমাদের সিনিয়র সেক্রেটারি গত তিন দিন ধরে দাম কমাতে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন, আলোচনা করছেন। দুয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে আমাদের কথা বলার দরকার নেই। এটা যার যার বিষয়। যে যেটা দিয়ে ইচ্ছা ইফতার করবেন। কিছু খেজুরের শুল্ক কমানো হয়েছে। আমরা উঁচু জাতের দামি খেজুরের শুল্ক কমাইনি। সাধারণ মানুষ যেটা খায়, সেটার দাম কমাতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
চিনি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, খোলা বাজারের চিনির সর্বোচ্চ দাম ১৪০ টাকার বেশি হবে না। তারা আমাদের কথা দিয়েছে, তাদের যথেষ্ট মজুত আছে। প্যাকেটজাত চিনির দামও ১৪৫ থেকে ১৪৬ টাকার বেশি হবে না। সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। রমজানে চিনির দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গেও আমাদের কথা চলছে। সেখানেও অগ্রগতি হতে পারে। দাম সব জায়গায়ই বেশি। আমি যখন ডলারে কনভার্ট করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও চিনি আমদানি করি- তাহলে দাম কম পড়বে না। পাঁচ টাকা হয়ত এদিক-ওদিক হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী। আমরা চাচ্ছি, চিনির দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে। যে দাম আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি, রোজার মাসে চিনির দাম একই থাকবে।
এর আগে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, রোজায় দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধগতি দুই-তিন দিনের। দেশে সবধরনের পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে। সমস্যা হচ্ছে- আমরা যে এক কোটি পরিবারকে ছয় ধরনের পণ্য দিচ্ছি, তা যদি টিসিবির মাধ্যমে আমদানি করে দিতে পারতাম- তাহলে বাজারে তার বড় প্রভাব পড়ত। আমরা তো খোলাবাজার থেকে কিনে দিই। আবার একই বাজারে দেখা যাচ্ছে, একই পেঁয়াজ তিন দামে বিক্রি হচ্ছে। সুপার শপের চেয়ে কাঁচাবাজারে আলুর দাম বেশি, এই ধরনের নানা সমস্যা আছে। আমাদের সরবরাহ লাইনে এগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি।’
তার কথা, কিছু পণ্য ছাড়া অন্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। কৃষিপণ্য নিয়ে নানা কারসাজি আছে। বেগুনের কেজি ১৪০ টাকা হতে পারে না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে তাই আরো কার্যকর করার উদ্যোগ নিচ্ছি। খাদ্যের একটা বাফার স্টক গড়ে তুলব টিসিবির মাধ্যমে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়