ডা. মোদাচ্ছের আলী : বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে

আগের সংবাদ

বাজারের আগুনে রোজার আঁচ

পরের সংবাদ

রমজানে ভোগাবে তিন সমস্যা

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যানজট- এই ৩ সমস্যা নিয়ে রমজানে নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রান্নার গ্যাস সংকটের কারণে অনেক এলাকায় সেহরি ও ইফতারে বড় ধরনের ঝামেলা পোহাতে হবে। এর সঙ্গে আছে বিদ্যুৎ সংকট। ভোররাতে ও সন্ধ্যায় যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকে তাহলেও নগরবাসীকে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। অপরদিকে ঘর থেকে বাইরে বের হলে যানজট সমস্যার কোনো সমাধান আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ সমস্যা : বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ¦ালানি আমদানি করতে না পারায় দেশে জ¦ালানি সংকট চলছে। চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন না থাকায় পিডিবি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলোও গ্রাহকদের বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। এর ফলে, রমজান মাসে নগরবাসীকে বিদ্যুৎ সংকটে ভুগতে হবে। গরম শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী চলতি মাসে ৬৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাসের পর্যাপ্ত জোগান নেই। এ কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে। তাই বিতরণ কোম্পানিগুলোকে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পিডিবি ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি সরবরাহ করতে পারছে না। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। কিন্তু জ¦ালানির অভাবে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকছে। এতে উৎপাদন কয়েকগুণ কমে যায় এবং বিদ্যুৎ সংকট তৈরি হয়। এসব কারণে রমজান মাসে বিদ্যুৎ সংকট নগরবাসীকে ভোগাবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানিয়েছেন, রোজা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি মাথায় রেখেই উৎপাদন পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জ¦ালানি না পাওয়া গেলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
গ্যাস সমস্যা : এদিকে গ্যাস সংকট দিন দিন বেড়েই চলছে। রমজান মাসে গ্যাস সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করে। রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের আয়োজনে রান্না বেড়ে যায়। রাজধানীর হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতেও ইফতার-সেহরির আয়োজন চলে। বাসাবাড়ির পাশাপাশি নগরজুড়ে সব হোটেল-রোস্তোরাঁয় ইফতারসামগ্রী তৈরির ধুম পড়ে। এতে গ্যাসের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়েই নগরীর অনেক এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না তিতাস। রমজান মাসেও তারা চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলে নগরবাসীকে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হবে। যেসব এলাকার পাইপলাইনে মাঝরাতে গ্যাস আসে; সেসব এলাকার লোকজনকে শুধু রান্নার জন্যই নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে।
তিতাস গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, বহুদিন থেকেই গ্যাসের সমস্যা চলছে। দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে ২৫ শতাংশ কম গ্যাস দিচ্ছে পেট্রোবাংলা। যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যায়, তা থেকে শিল্প খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করতে হয়। যানবাহনের জন্য রাখতে হয়। এরপর অগ্রাধিকারভিত্তিক এলাকাগুলোতে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করতে হয়। ফলে আবাসিকে সব জায়গায় গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। সরবরাহ কম পাওয়া গেলে রমজান মাসেও গ্যাস সংকট হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে গেছে। ঘাটতি মেটাতে এলএনজি আমদানি করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানির দাম ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো পর্যাপ্ত জ¦ালানি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে তিতাসকে চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, তিতাস গ্রাহকদের পাইপলাইনে পর্যাপ্ত গ্যাস দিতে পারছে না। নতুন কূপ থেকে কিছু গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এতে সংকট কিছুটা কাটলেও রমজান মাসে সমস্যা থেকেই যাবে।
যানজট সমস্যা : রমজান মাসে রাজধানীর যানজট সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু তারপরও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে জনজীবন। রোজা রেখেই লোকজন অফিস করে, ব্যবসাসহ সব কাজই করে। কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের জন্য সবাইকেই বাইরে বের হতে হয়। কাজ শেষে আবার ঘরে ফেরার তাগিদ বেড়ে যায়। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে নগরবাসীকে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়। অপর দিকে ঈদ সামনে রেখে রোজার মাসে নগরীর ফুটপাথের দোকান থেকে শপিংমল পর্যন্ত সর্বত্রই কেনাকাটার ধুম পড়ে। দুপুরের পর থেকে সব বয়সি লোকজন মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে কেনাকাটা করতে থাকে। রাস্তার পাশে
দোকানের সংখ্যা বেড়ে যায়। এর ফলে রাস্তা ছোট হয়ে যায় এবং যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে। অপরদিকে রমজান মাসে সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ব্যস্ত রাস্তায় যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। এর ফলে ছোট-বড় সব রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যানজটে পড়ে অনেকেই বাসায় ফিরে ইফতার করতে পারেন না। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ যানজট নিরসনে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েও তা বাস্তবায়ন

করতে পারে না। এসব কারণে রমজান মাসে যানজট অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
যানজট প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, এরবার রমজান মাসে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। রমজানে মানুষ যাতে বাসায় গিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ইফতার করতে পারেন- সেই লক্ষ্যে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ক্রাইম বিভাগও কাজ করবে। মার্কেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে ট্রাফিক ও ক্রাইমের অফিসাররা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, রমজান মাসে ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ অন্যান্য সংস্থা যে উন্নয়ন কাজ করে- তা বন্ধ রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইফতারের আগে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়