নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে গুমোট হয়ে ওঠে ঢামেক প্রাঙ্গণ : বেইলি রোড ট্র্যাজেডি

আগের সংবাদ

দায়ীরা পার পেয়ে যায় যেভাবে

পরের সংবাদ

শিক্ষকতা পেশা নয় প্যাশন

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী- এ তিনটি শব্দ বড় অদ্ভুত। শাব্দিক গড়ন, ছান্দিক, নান্দনিক অর্থ দ্যোতনায়। শিক্ষা হলো জ্ঞানলাভের একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া এবং ব্যক্তির সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ লাভের অব্যাহত অনুশীলন। শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলির পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহদান এবং তাকে সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা হয়।
সাধারণ অর্থে দক্ষতা বা জ্ঞান অর্জনই হলো শিক্ষা। আর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিতদেরই শিক্ষক বলা হয় এবং যারা নিয়মিত লেখাপড়া করে এবং সর্বদা জ্ঞান অর্জনের প্রতি আগ্রহী ও যতœশীল থাকে তাদের শিক্ষার্থী বলা হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, শিক্ষার্থী তো তারাই, যারা সব সময় জ্ঞান অর্জনের বিষয়ে আগ্রহী থাকে এবং বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন ঘটায়।
শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদানের কাজটি যিনি বা যারা করেন, তাদের বলা হয় শিক্ষক এবং তাদের পেশাটির নাম হলো শিক্ষকতা।
শিক্ষকতা পেশা নয় প্যাশন। আমরা জানি সব সময় সর্বকালে সর্বত্র উচ্চারিত হয়ে আসছে শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। শিক্ষকতা যে একটি মহৎ পেশা এতে কোনো সন্দেহ নেই। পেশা অর্থ হলো কাজ, ব্যবসা বা জীবিকার উপায়। যে কোনো কাজই যে মহৎ নয় তাও সমাদৃত। শিক্ষকতাও একটি কাজ এবং এর বিনিময়ে শিক্ষকরা জীবিকাও নির্বাহ করে থাকেন। অথচ এটি মহৎ পেশা, কেন? ওই যে বলা হয়েছে প্যাশন! প্যাশন থাকলেই পেশাটি মহৎ হয়।
শিক্ষকতা আর দশটা কাজের মতো নয়। এখানে থাকতে হয় প্যাশন। প্যাশন অর্থ ভাবাবেগ বা প্রেম-ভালোবাসা। প্রেম ভালোবাসা থাকলেই শিক্ষকতা হয় মহৎ। এ প্রেম পেশা বা কাজের প্রতি, শিক্ষা ও শিক্ষার্থীর প্রতি, দেশের প্রতি সর্বোপরি স্রষ্টার প্রতি। প্রেম থাকলে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে কাজের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর আচার-আচরণে, তবেই জীবন হবে সার্থক।
একটি বাস্তব উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। জনৈক শিক্ষক প্যাসেঞ্জারবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আরোহন করে বাড়িতে ফিরছিলেন। তার এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওই নৌকার ছইয়ে (ছাদ) বসা ছিল। শিক্ষক নৌকায় আরোহণ করতেই শিক্ষার্থীটি দাঁড়িয়ে সালাম জানাল এবং কুশল বিনিময় করে সে নিচে নেমে গেল। শিক্ষক সাবেক শিক্ষার্থীকে অনেক বলার পরও ওপরে থাকল না। যদিও ওপরে থাকাটা তার দোষের ছিল না। অনেক প্যাসেঞ্জার আছে ওপরে এবং অনেক আসনও আছে। শিক্ষার্থীটি নৌকার ভাড়াও দিতে দিল না শিক্ষককে।
ওই শিক্ষকের এক শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি তার পরিবার নিয়ে নৌকার ভেতরে ছিলেন তিনিও একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। যুবকটিকে তিনি চিনেন না। নৌকার ভেতরে আসার কারণ জানতে চাইলে সে জানাল আমার শিক্ষক আছেন নৌকার ওপরে তাই নিচে চলে আসলাম। একসঙ্গে এক কাতারে বসতে লজ্জা লাগছে। পরে নৌকার ভেতরে থাকা শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক ছইয়ের ওপরে উঠে আসলেন এবং ছাত্রটির আচার আচরণ ও প্রেম ভালোবাসার বিবরণ দিলেন। আর বললেন এ জন্যই শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা।
তখন প্রথম শিক্ষক আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, আমার ৩৫ বছর শিক্ষকতার জীবনে এমন বহু শিক্ষার্থীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়েছি যাদের জন্যে শিক্ষকতার প্রতি আমার আমৃত্যু মোহ থাকবে। আমি আমার কাজকে এই শিক্ষকতাকে বড় ভালোবাসি, ইবাদত বা উপাসনা মনে করি।
সুতরাং শিক্ষকতা পেশা নয় প্যাশন, প্রেম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার আসন।

কাজী মো. আতাউর রহমান : প্রধান শিক্ষক, ভলাকুট ক্ষেত্রনাথ বিশ্বাস উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়