সব মামলায় জামিন : জহির উদ্দিন স্বপনের মুক্তিতে বাধা নেই

আগের সংবাদ

বিভীষিকাময় এই মৃত্যুর দায় কার : ভবন ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে মালিককে তিনবার নোটিস দেয় ফায়ার সার্ভিস, রেস্টুরেন্ট কিংবা দোকানের অনুমোদন ছিল না

পরের সংবাদ

প্রসঙ্গ গাজা : লেবারের প্রার্থী প্রত্যাহারে আবারো গ্যালওয়ে

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ব্রিটেনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটা এলাকা রচডেলের সংসদ সদস্য স্যার টনি লয়েড মারা গেছেন সম্প্রতি। লেবার দলীয় এ এমপির মারা যাওয়ার পর এখানে গতকাল ২৯ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপনির্বাচন ব্রিটেনের রাজনীতিতে যেন আরেকটা চমক।
সাধারণত এ আসনটিতে লেবারই বিজয়ী হয়। সংখ্যার দিক দিয়ে এখানকার একটা বড় জনগোষ্ঠী হলো পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। মুসলিমদের একটা বড় ভিত্তি আছে এখানে। স্বাভাবিকভাবে এ আসনে জয়-পরাজয় অনেকটা নির্ভর করে এই জনগোষ্ঠীর ওপর। টনি লয়েড মারা যাওয়ার পর লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পান ল্যাংকাশায়ার কাউন্সিলের নির্বাচিত কাউন্সিলর আজহার আলী। তিনি পেয়েছেন রানির দেয়া সম্মান ওবিই। লেবার রাজনীতির ক্যারিয়ারসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনি মূলত একজন জনপ্রিয় প্রার্থী। কিন্তু হঠাৎ করে গত সপ্তাহে একটা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে লেবার পার্টি তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। গাজা নিয়ে তার এ মন্তব্যটিতে কিছুটা হলেও বাস্তবতার ছোঁয়া আছে। তিনি বলেছেন, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে সংঘটিত হামাসের হামলা ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে সমর্থন (এলাউ) করেছে। রেফারেন্স হিসেবে বলেছিলেন, মিসর তাদের ১০ দিন আগে, এমনকি আমেরিকা ১ দিন আগেও সতর্ক করে বলেছে এরকম আক্রমণ হতে পারে; কিন্তু তারা কিছুই করেনি। অর্থাৎ পরবর্তী পরিস্থিতি তৈরি করতে এ হামলা এক ধরনের প্লট মাত্র। আজহার আলীর এ রকম মন্তব্য হাটে হাঁড়ি ভাঙার মতোই। তাই স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটা লেবার পার্টি সহজভাবে নেয়নি। বিশেষত ইসরায়েল নিয়ে লেবার দলীয় নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার এক ধরনের একচোখা নীতিতেই আছেন। তিনি এমনকি ব্রিটেন সরকারের চেয়ে কোনো কোনো অংশে বাড়িয়ে কথা বলছেন ইসরায়েলের পক্ষে। তিনি এর আগে গাজায় ইসরায়েলের বর্তমান হামলাকে দেশটির অধিকার হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
এ রকম প্রশ্ন তো আসতেও পারে। ইসরায়েলের মুসাদ একটা বিচক্ষণ নিরাপত্তা (সিকিউরিটি সংস্থা) সংস্থা হিসেবে সারা পৃথিবীতেই খ্যাত। তাদের চোখ ফাঁকি দেয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। অথচ ইসরায়েলের মতো দেশের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার চোখে আঙুল দিয়ে এক ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমেই পাখির মতো উড়ে উড়ে তারা সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করল, সেটি ধরতে পারল না মুসাদের অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এটা কীভাবেই সম্ভব। অন্যদিকে হামাসও কি জানল না কিংবা অনুধাবন করল না ইসরায়েলের মতো দেশে হামলার পরবর্তী হত্যাযজ্ঞ কী হতে পারে। এখানেই সন্দেহ উভয় গ্রুপেরই ওপর। হামাস কিংবা মুসাদ- কার হয়ে কে খেলেছে কিংবা খেলছে এই নৃশংস খেলা?
এই মন্তব্যের কারণেই লেবার পার্টির ‘নিরাপদ আসন’ হিসেবে পরিচিত এ সংসদীয় আসন থেকে মনোনীত প্রার্থীর ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছে, অথচ তিনি জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবেও পরিচিত। তাছাড়া এই আসনের একটা বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীও ইসরায়েলের এই হামলাকে সহজভাবে নিচ্ছে না। এই শহরের নির্বাচনে যে সময়টাতে লেবার পার্টি তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে, সে সময়ে ইতোমধ্যে তার নাম লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে ব্যালট পেপার কিংবা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে। সুতরাং আজহার আলীকে কাগজপত্রে থাকতেই হচ্ছে নির্বাচনের মাঠে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল তিনি হয়তো মাঠে থাকবেন না, কিন্তু শেষপর্যন্ত সরে দাঁড়াননি এবং প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী হিসেবেই তার বিশ্বাসে অটুট থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। লেবার দল তাকে অস্বীকার করলেও তিনি হয়তো নির্বাচনে জয়ী হয়েই যেতেন, কিন্তু সেখানে বাগড়া দিয়েছেন ব্রিটেনের আরেক বহু আলোচিত রাজনীতিবিদ জর্জ গ্যালওয়ে। জর্জ গ্যালওয়ে আরেক রাজনীতিবিদ, যার রাজনীতিতে যেন রহস্য আছে। তিনিও আলোচিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমালোচিত। বড় কথা হলো, স্রোতের বিপরীতে থাকা এ মানুষটি ‘ঝোপ বোঝে কোপ মারতে’ পারেন। মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে উপলব্ধি করতে পারেন এবং সেজন্যই তিনি ব্রিটেনের রাজনীতিতে একজন সফল রাজনীতিবিদ।
একসময়ের লেবার পার্টির এমপি জর্জ গ্যালওয়ে ২০০৩ সালে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন, তাও তৎকালীন লেবার সরকারের ইরাক আগ্রাসী নীতির বিরোধিতা করতে গিয়ে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই তিনি যুদ্ধবিরোধী মানুষের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন তখন থেকেই। স্কটল্যান্ড থেকে এসেছিলেন বাঙালি অধ্যুষিত বেথনালগ্রিন-বো এলাকায়। তার মাত্র দুই বছর পর ইরাক আগ্রাসন আর যুদ্ধবাজদের বিরোধিতা করে আরেক লেবারের দুর্গে তিনি আঘাত হেনেছিলেন সে সময়। ইসরায়েলের বন্ধু এবং ইরাক আগ্রাসনের সমর্থক উনা কিং তখন পরাজিত হয়েছিলেন। গ্যালওয়ের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিজয় নিয়ে এসেছিল বাঙালিরা সে সময়। বলতেই হয় গ্যালওয়ে বেথনাল গ্রিন-বোতে জয়ী না হলে আজকের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপির পথচলা হয়তো প্রশ্নবোধকই থেকে যেত। কেননা গ্যালওয়ে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়েই নিশ্চিত হয়েছিল এই কনস্টিটিউন্সিতে লেবারের বাঙালি প্রার্থীর মনোনয়ন।
জর্জ গ্যালওয়ে চমক দেখিয়েছিলেন ব্রিটেনের আরেকটা উপনির্বাচনে, ২০১২ সালে। ব্রাডফোর্ড ওয়েস্ট বলতে গেলে পাকিস্তানি মুসলমান অধ্যুষিত একটি এলাকা। সেখানে লেবার পার্টি প্রায় ৪০ বছর দাপটের সঙ্গে টিকেছিল। কিন্তু সেই ভিত্তিমূলে নাড়া দিয়েছিলেন জর্জ গ্যালওয়ে। ঠিক একইভাবে গ্যালওয়ে এবারো এমন এক শ্বাসরুদ্ধকর গাজা-ইসরায়েল পরিস্থিতির মাঝে এই সংসদীয় আসনে প্রার্থী হয়েছেন, যখন মানুষ লেবার পার্টির ওপরও ক্ষুব্ধ এই ইস্যু নিয়ে। সেই ২০০৫ সালের ইস্ট লন্ডন কিংবা ২০১২ সালের ব্রাডফোর্ডের নির্বাচনের মতোই জনগণও তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক, কারণ বিশ্বপরিস্থিতির এই সময়ে মানুষ একটা কণ্ঠ খুঁজছে, খুঁজছে একটা নির্ভরতা, যেখান থেকে উচ্চারিত হবে অন্তত নিজের কথাগুলো। সত্যি কথা হলো মূলধারায় ব্রিটেনের কোনো রাজনীতিবিদই এই ইস্যু নিয়ে তার মতো সোচ্চার হতে পারছেন না।
একদিকে লেবার পার্টি থেকে আজহার আলীর সমর্থন প্রত্যাহার, অন্যদিকে গাজা ইস্যুতে লেবার পার্টির বর্তমান অবস্থানে পার্টির একটা বিশাল অংশ হতাশ। এ সময়ে আজহার আলী যদিও গাজা ইস্যুতে তিনি তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াননি, কিন্তু পার্টির সমর্থকরা কি তাকে আগের মতোই গ্রহণ করবে- এ একটা প্রশ্নও। তাছাড়া তিনি নির্বাচিত হলে যেহেতু পার্টি তাকে আর লেবার পার্টির প্রতিনিধি কিংবা এমপি হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না অর্থাৎ তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই সংসদে থাকতে হবে।
তাই ওয়েস্ট মিনিস্টারে কোন কণ্ঠ জোরালো হবে- গাজা ইস্যুই যদি প্রাধান্য পায়, তাহলেও আজহার আলী এই কারণেই লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন এবং স্থানীয় ভোটারদের একটা বড় অংশও তার এ মতকে সমর্থন দিচ্ছেন। অন্যদিকে এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি হিসেবে রচডেলের স্থানীয় সমস্যা তিনি চিহ্নিত করতে পারবেন বলেই অনেকে বিশ্বাস করে আর সে বিবেচনায় তিনি উতরে যাওয়ার কথা। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এখনো যেন জর্জ গ্যালওয়েই এগিয়ে আছেন। আর যদি তাই হয়, তাহলে জর্জ গ্যালওয়ে হবেন সেই রাজনীতিবিদ, যিনি লেবার পার্টির স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে কেটে ব্রিটেনে যে ক’জন মানুষ (যেমন সাবেক লন্ডন মেয়র কেন লিভিংস্টন, নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান) নিজস্ব জায়গা করেছেন সময়ে সময়ে, তাদের মাঝে একজন অন্যতম প্রধান সফল ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ান।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়