সব মামলায় জামিন : জহির উদ্দিন স্বপনের মুক্তিতে বাধা নেই

আগের সংবাদ

বিভীষিকাময় এই মৃত্যুর দায় কার : ভবন ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে মালিককে তিনবার নোটিস দেয় ফায়ার সার্ভিস, রেস্টুরেন্ট কিংবা দোকানের অনুমোদন ছিল না

পরের সংবাদ

চিকিৎসা খাতে খরচ কমাতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হলেও চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও নানা কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে চিকিৎসা ব্যয়ও ঊর্ধ্বমুখী। এতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব ব্যয় বেড়েছে। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্তদের জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় হার্টের রিংয়ের (স্টেন্ট) দাম নিয়ে চলছে অস্থিরতা। সরকার কয়েক দফা স্টেন্টের দাম বেঁধে দিলেও ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ তা মানেনি। উল্টো দাম কমানোর প্রতিবাদে ওই সময় স্টেন্ট সরবরাহ বন্ধ রাখে। বিপাকে পড়ে রোগীরা। বিষয়টি গড়ায় উচ্চ আদালত পর্যন্ত। গত বছরের জুন মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই দফায় স্টেন্টের দাম কমানো হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে চাইছে। ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশে ব্যবহৃত ২৭টি কোম্পানির ৪৪ ব্র্যান্ডের স্টেন্টের দাম কমিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)। ওই সময় স্টেন্টের খুচরা দাম সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা আর সর্বনিম্ন দাম ১৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত দাম কার্যকর হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বৈষম্যমূলক দাম অবৈধ ঘোষণা করতে ঔষধ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ১১ জন ব্যবসায়ী রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ফলে রোগীরা বিপাকে পড়েন। কোনো সুরাহা হয়নি এখনো। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব ব্যয় বেশি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এই পরিসংখ্যান দুঃখজনক। চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব ব্যয় কমাতে ২০১২ সালে উদ্যোগ নেয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০৩২ সালের মধ্যে রোগীর নিজস্ব ব্যয় ৩২ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। তবে দীর্ঘ এক যুগ পার হলেও এ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। চিকিৎসায় ব্যক্তির ব্যয় বেড়েই চলেছে। এতে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। কাজেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী- ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে চিকিৎসা ব্যয়ে সরকারের অংশ ছিল যথাক্রমে মোট ব্যয়ের ২৮, ২৬ ও ২৩ শতাংশ। আর ওই বছরগুলোতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল ৬৪, ৬৬ ও ৬৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যায় চিকিৎসা ব্যয়ে সরকারের অংশ ক্রমান্বয়ে কমছে আর ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় করতে গিয়ে বছরে ৮৬ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। চিকিৎসার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে ওষুধ কিনতে। এতে ব্যয় ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া রোগ শনাক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, বিকল্প চিকিৎসাসেবায় ১৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং হাসপাতালে খরচ ১০ দশমিক ১ শতাংশ। আগের বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর হাসপাতাল ও বিকল্প চিকিৎসাসেবা নেয়ায় ব্যয় বেড়েছে। এসব ব্যয়ের মধ্যে সরকার ও দাতা সংস্থা থেকে আসে ৩১ শতাংশ। শুধু সরকার বহন করে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। আমরা মনে করি, চিকিৎসা খাতে মানুষের ব্যয় না কমলে দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হুমকির মুখে পড়বে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মুনাফালোভী এক শ্রেণির হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর কিছু অনৈতিক মানসিকতার চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানির কারণে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। স্বাস্থ্য খাতে মানুষ প্রায় ৬৫ শতাংশ খরচ করছে ওষুধের পেছনে। এ কারণে ওষুধের দামের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া বেসরকারি খাতে যন্ত্রপাতি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বেসরকারি বিশেষায়িত সেবার ওপর সরকারের দৃষ্টি দেয়া দরকার। জনসাধারণের এই মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে বলে মনে করি। তবে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো, দুর্নীতি কমানো ও নজরদারি বাড়ানো দরকার। শুধু ওষুধ নয়, রোগ শনাক্তের খরচের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতিসহ অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে। এতে চিকিৎসা ব্যয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ জন্য তদারকি ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এসব যন্ত্রপাতির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেও সরকার ব্যয় বাড়িয়েছে। আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। মোট কথা, চিকিৎসা খাতে জনগণের খরচ কমাতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ও বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়