সব মামলায় জামিন : জহির উদ্দিন স্বপনের মুক্তিতে বাধা নেই

আগের সংবাদ

বিভীষিকাময় এই মৃত্যুর দায় কার : ভবন ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে মালিককে তিনবার নোটিস দেয় ফায়ার সার্ভিস, রেস্টুরেন্ট কিংবা দোকানের অনুমোদন ছিল না

পরের সংবাদ

কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি কিশোর গ্যাং অপরাধ নতুন করে আলোচনায় এসেছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। ওইদিন ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করার জেরে নীরব হোসেন নামের ১৭ বছরের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। একইভাবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ধূমপানে বাধা দেয়ায় সালমান খন্দকার নামের এক যুবক কিশোর গ্যাং গ্রুপের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ১৮ বছরের যুবক সালমান খন্দকার এবং তার দুই বন্ধু একটি খালি মাঠে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় জাহিদ (২০) তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ধূমপান করলে সালমান ও তার বন্ধুরা অন্যত্র সরে গিয়ে ধূমপান করতে বলে। এতে জাহিদ তাদের ওপর চড়াও হয় এবং ১০-১২ জনের একটি দল নিয়ে কাঠের ডাসা ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা করে। সালমানকে গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব কিশোর গ্যাং বাহিনী একদিনে গড়ে ওঠেনি। রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এসব বাহিনী এখন ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এগুলো এখন সমাজব্যবস্থার গলার কাঁটা। শুধু রাজধানীতে নয়, বড় বড় শহর ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের নিরাপদ বসবাসের ক্ষেত্রে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে এসব কিশোর গ্যাং বাহিনী। যারা মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নারীর শ্লীলতাহানিসহ নানা অপকর্মে যুক্ত। এ চক্রের সদস্যদের বড় অংশ কিশোর হলেও নেতাদের বয়স ১৯-৩৮ বছর। চক্রের সদস্যরা তাদের ‘সিনিয়র’ বা ‘বড় ভাই’ বলে ডাকে।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক তথ্যে বলা হয়েছে, পুলিশ সূত্রে ঢাকায় গাংচিল বাহিনীর মতো অন্তত ৮০টি বাহিনীর খোঁজ পাওয়া গেছে, যেগুলোর বেশির ভাগ ‘কিশোর গ্যাং’ নামে পরিচিত। নামে কিশোর গ্যাং হলেও এসব বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যের বয়স ১৮ বছরের বেশি। তারা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখলে সহায়তা, ইন্টারনেট সংযোগ, ডিশ ব্যবসা ও ময়লা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, উত্ত্যক্ত করা, যৌন হয়রানি করা, হামলা, মারধরসহ নানা অপরাধে জড়িত।
বাহিনীর নেতাদের কেউ কেউ সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কেউ কেউ রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও আশ্রয় পায় রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ২১ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ‘গ্যাং’ প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ এসেছে। যদিও কয়েকজন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ ২০২২ সালের শেষ দিকে সারাদেশের ‘কিশোর গ্যাং’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। তাতে বলা হয়েছে, সারাদেশে অন্তত ১৭৩টি কিশোর গ্যাং রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে এদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৭৮০টি এবং এসব মামলায় আসামি প্রায় ৯০০ জন। রাজধানীতে কিশোর গ্যাং রয়েছে ৬৬টি, চট্টগ্রামে আছে ৫৭টি এবং মহানগরের বাইরে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ২৪টি গ্যাং। বেশির ভাগ বাহিনীর সদস্য ১০-৫০ জন। পুলিশের তালিকার বাইরে ঢাকায় আরো অন্তত ১৪টি কিশোর গ্যাংয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরা শুধু ভয়ংকর অপরাধই করে না, আধিপত্য বজায় রাখতে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়ায়। ডিএমপি সূত্র বলছে, ২০২৩ সালে রাজধানীতে যত খুন হয়েছে তার ২৫টির বেশি কিশোর গ্যাং-সংশ্লিষ্ট।
কিশোরদের গ্যাং কালচার এবং কিশোর অপরাধ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে সর্বপ্রথম এর কারণ চিহ্নিত করা দরকার। বখাটেপনা বা কিশোর গ্যাং অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করার উপায় না থাকায় অভিভাবকরা চরম শঙ্কিত। কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর আইনের প্রয়োগ করলেই চলবে না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পারিবারিক সুশিক্ষা ও ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পৃষ্ঠপোষকতা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে সরকারের উঁচু স্তর থেকে বিষয়টি তদারকি করতে হবে। তবেই সমাজ থেকে কিশোর অপরাধের মতো গ্যাং কালচার নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

মো. জিল্লুর রহমান : ব্যাংকার ও লেখক
গেন্ডারিয়া, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়