ওয়ারীতে আগুন : ৯৯৯-এ কল পেয়ে উদ্ধার ৮০ জন

আগের সংবাদ

নির্বাচন পরবর্তী বোঝাপড়া

পরের সংবাদ

বেঙ্গলিজমের লাল উৎস

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অবাঙালি মোহাজির নেতা রাগিব আহসান ১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা উর্দু’, ‘অখণ্ড পাকিস্তান’, ‘কমিউনিস্ট হিন্দুদের পূর্ববাংলা’ বিষয়ক বেশ কিছু ইংরেজি পত্র ও বিবৃতি প্রকাশ্যে এনেছেন। বায়ান্নর আন্দোলন তার কাছে ভাষা-দাঙ্গার বেশি কিছু নয়।
তার মতে ৮ মার্চ ১৯৫২ তিনি ‘বাংলা-ভাষা দাঙ্গা’র একটি বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা দাখিল করেন। এই পর্যালোচনা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। রাগিব আহসান ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা পাকিস্তান প্রেমিক বাঙালি নেতৃত্বের সমর্থনেই ঘটেছে বলে মনে করেন। পাকিস্তানের বাঙালি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলি ১৯৫৪ সালে করাচিতে বলেছেন, কমিউনিস্টরা ছদ্ম-বাঙালি জাতীয়তাবাদের ষড়যন্ত্রকারী, তারাই আন্দোলনের উদ্যোক্তা।
তখনকার বাংলা ভাষাবিরোধী এবং গোড়া পাকিস্তানপন্থিদের ভাবনা কী ছিল তা অনুধাবন করতে রাগিব আহসানের এই পর্যালোচনা সহায়তা করবে। কিছুটা সংক্ষেপে পর্যালোচনাটি ভাষান্তর করা হলো :
এটা অত্যন্ত লজ্জা ও উদ্বেগের বিষয় যে, পূর্ববাংলার মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগ উভয় দলের রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্রীয় ভাষার মতো একটি বিষয়কে উর্দু-বাংলা প্রশ্ন, নির্বাচন এবং নিজেদের দলের বিষয়ে পরিণত করেছেন। তারা ভাষা প্রশ্নকে দলীয় রাজনীতির একটি ঘুঁটিতে পরিণত করেছে। যে রাজনীতির লক্ষ্য ১৯৫৩ সালের জন্য প্রতিশ্রæত সাধারণ নির্বাচন (যদিও নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালে)। তারা একটি বিস্ফোরণ-উন্মুখ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন, যা পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য বাস্তবিকই একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বয়ং খাজা নাজিমুদ্দিন আর এই খেলাটা শুরু করার কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন।
২৮ জানুয়ারি ১৯৪৮ ঢাকায় প্রদত্ত ভাষণে খাজা নাজিমুদ্দিন বলেছেন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষা লিখতে হবে। স্পষ্টতই খাজা নাজিমুদ্দিনের উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী দলের অপযশ নিশ্চিত করে নির্বাচনে তাদের পরাজিত করা।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ হচ্ছে নেতাহীন তরুণদের একটি দল, তাদের চালায় ওকালতি পেশার কয়েকজন সেকুলারিস্ট পরিচালিত দ্বিধাবিভক্ত একটি সংগঠন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তাদের সামনে যে সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছেন, কমিউনিস্ট ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করছে। তারা সংস্কৃতধর্মী বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য গণআন্দোলন শুরু করে দিয়েছে, সঙ্গে উগ্রমূর্তি ধারণ করে যোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। স্পষ্টতই তাদের উদ্দেশ্য একটি- বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করা। খাজা নাজিমুদ্দিনের উদ্যোগটি ছিল ভ্রান্তিপূর্ণ ও সর্বনাশা। তারা যে সর্বদলীয় ভাষা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছে, তার পেছনে কাজ করেছে কমিউনিস্ট সংগঠনগুলো- তাদের যুবফ্রন্ট কয়েক মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও হোস্টেল এবং বিভিন্ন কলেজে সংগঠিত হয়েছে।

নির্বাচনী চমক হিসেবে ‘বেঙ্গলিজম’
বাংলা ভাষার জন্য তাদের সেøাগান আসলে নির্বাচনের চমক। ভাষা কমিটির কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমার কাছে স্বীকার করেছেন বাংলার দাবি তাদের দলীয় রাজনীতির একটি চাল। তারা আমার কাছে এসেছেন এবং তাদের আন্দোলনে হাজির থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছি। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ আমি পূর্ব বাংলার আওয়ামী লীগ নেতা মওলানা ভাসানীর কাছে একটি চিঠি লেখা দায়িত্ব মনে করলাম। চিঠিতে তাকে মুসলমানদের মধ্যে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ প্রচার ও বর্ণবাদ ছড়ানোর বিপদ সম্পর্কে ভালোভাবে সতর্ক করে দিয়েছি। কারণ তা পাকিস্তানের দ্বিজাতিতত্ত্বের মূলে কুঠারাঘাত করে- জাতিগত, ভাষাগত এবং ভৌগোলিক ভিন্নতার পরও মুসলমানদের একজাতি, মিল্লাত-ইসলামিয়া এবং পাকিস্তান মুসলমানদের রাষ্ট্র। আমি অনুরোধ করেছি আওয়ামী লীগ যেন তার আন্দোলন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমিত রাখে, নতুবা রাজনীতিবিদরা বাদ পড়ে যাবে এবং নির্যাতনের প্রশ্নে মুসলমানদের নিজেদের ভেতর বিদ্বেষ ছড়াবে।
আমার পুরনো দিনের বন্ধু এবং পাকিস্তানের জন্য লড়াইয়ে হাতে হাত রাখা কমরেড আবুল হাশিম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা অ্যাকশন কমিটিতে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানাতে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি একই কারণে তার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছি- বর্ণবাদ এবং ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ পাকিস্তানের আদর্শ, ইসলামিক মিল্লাত ইসলামি রাষ্ট্রের অ্যান্টিথিসিস।

বেঙ্গলিজমের নেতৃত্ব কমিউনিস্টদের হাতে চলে গেছে
উদ্যোগী ও উৎসাহীরা যে বাংলা ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং সম্পূর্ণভাবেই একটি সাহিত্য আন্দোলন হিসেবে পরিচিত ছিল, শিগগিরই সে আন্দোলনের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ ও ছাত্রদের কাছ থেকে কমিউনিস্ট ও সেকুলারিস্টদের হাতে চলে যায়, তারা এটাকে একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দেয় এবং পাকিস্তান সৃষ্টির মৌল দর্শনে আঘাত করে কেন্দ্র থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চক্রান্ত চালিয়ে যেতে থাকে। কমিউনিস্ট, হিন্দু, ভারতীয় অধ্যাপক-শিক্ষক এবং এজেন্টরা কেবল যে এই আন্দোলনের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন এমন নয়, তারাই পরিণত হয়েছেন আন্দোলনে শীর্ষস্থানীয় সমর্থকে, তারাই পরিচালনা করেছেন ছাত্রদের।
এই আন্দোলনের পুরো নেতৃত্ব দিয়েছে, পরিচালনা করেছে এবং নিয়ন্ত্রণ করেছে দুটি লাল সংগঠন : সর্বদলীয় ভাষা আন্দোলন কমিটি এবং অ্যাকশন ফর ডেমোক্রেটিক কনফেডারেশন অব পাকিস্তান। উভয়েরই লক্ষ্য এক- বর্ণবাদী জাতীয়তাবাদের ধুয়া তুলে পাকিস্তানের বিখণ্ডীকরণ।
শুরুতে বাংলা ভাষার জন্য উৎসাহী তমুদ্দন মজলিশ ধরনের সংস্থা আন্দোলন শুরু করলেও শিগগিরই তা কমিউনিস্ট সেকুলারিস্ট ও পাকিস্তানের শত্রæদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আর তারা নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাদের ব্যবহার করতে থাকে। বাংলা ভাষা আন্দোলনের মূল কারিগর কমিউনিস্টরা ধূর্ততার সঙ্গে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়েছে- তাতে অচিরেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ইচ্ছাতে হোক কি অনিচ্ছাতে হোক, সচেতনভাবে হোক কি অসচেতনভাবে- এই আন্দোলনে অংশীদার হয়েছে বিষয়টিকে বিদ্রোহ ও বিপ্লবে রূপান্তরিত করেছে।
জাতীয়তাবাদের মার্ক্সীয় তত্ত্বে প্রচারণার নেতৃত্ব যাদের, তাদের প্রধান আবুল হাশিম বাংলা ভাষা আন্দোলনে সোভিয়েত ইউনিয়ন মডেলে ব্রেইন ট্রাস্ট গঠন করে যাচ্ছেন। তারা দাবি করছেন বাঙালি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পাকতুন এবং বালুচি ও কাশ্মিরিরা প্রত্যেকে পৃথক জাতি, তাদের ভাষা ও ভৌগোলিক অবস্থান আলাদাভাবে শনাক্ত করা যায়। তাই তাদের বর্তমান অবস্থা থেকে ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তান ফেডারেশনের অধীনে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। তারা অতঃপর বর্ণবাদ ও ভাষার ওপর ভিত্তি করে পৃথক পৃথক রাষ্ট্র গঠন করবেন।
১৯৪৫ সালে বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগের খসড়া ম্যানিফেস্টোতে আবদুল হালিম বর্ণবাদী জাতীয়তাবাদের ‘লাল’-তত্ত্ব গ্রহণের প্রস্তাব করেছিলেন। ইশতেহারের খসড়া তৈরি করেছিলেন তার এক কমিউনিস্ট আত্মীয় এবং তা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বোম্বাইয়ের ‘পিপলস ওয়ার’ এবং কলিকাতার ‘জনযুদ্ধ’ দুটি সাময়িকীতে। দুটিরই প্রকাশনা স্বত্ব ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির। আবুল হাশিমের ফুল সাইজ ছবি ছাপা হয়েছিল। ছবিতে দেখা যায় তার সঙ্গে ছিলেন তার এক লাল অনুসারী এবং ঢাকা মুসলিম লীগের সেক্রেটারি সামসুদ্দিন; ঢাকা থেকে তা পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। তার সঙ্গে আমার মতানৈক্যের সূচনা সেখান থেকেই।
তখন আমাকে তাদের সঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্নও হতে হয়। মূলত তিনি আমার কলিকাতা মুসলিম লীগের সমর্থন নিয়ে বেঙ্গল মুসলিম লিগের সেক্রেটারির পদ লাভ করেন, তখন তার তীব্র বিরোধিতা করে মুসলিম লিগের খাজা নাজিমুদ্দিন গ্রুপের সদস্যরা; তার লাল ইশতেহারের বিরোধিতায় আমি নেতৃত্ব দিই। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন এবং মওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ তার লাল ইশতেহার প্রত্যাখ্যান করেন। দলের অজ্ঞাতে কোনো অনুমোদন না নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকায় এটি ছাপানোর জন্য নিন্দা জ্ঞাপন করে। এ জন্য তাকে মুসলিম লিগের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয় এবং পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে তাকে ঘোষণা করতে হয় যে, প্রকাশিত মেনিফেস্টোর সঙ্গে মুসলিম লিগের কোনো যোগসাজশ নেই। দেখা গেল ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় আবুল হাশিম তার পুরনো খেলাটাই আবার খেলে গেছেন। তার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য যাই হোক এর ফলাফল হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের লালন ও পরিচর্যা। এই আন্দোলনে জড়িত অন্যরা হচ্ছেন :
২. বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠায় উৎসুক ব্যক্তিবর্গ
৩. বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের সমালোচকবৃন্দ
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ
৫. ব্যক্তিস্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের দাবি জানানো গণতন্ত্রীগণ
৬. সেকুলারিস্ট
৭. বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির একত্রীকরণের দাবিতে আন্দোলন করা বামপন্থি জাতীয়তাবাদীগণ
৮. কমিউনিস্ট ও ইয়োথ লীগ
৯. পাকিস্তানবিরোধী, কেন্দ্রীয় সংস্কারবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদীগণ
১০. সুযোগসন্ধানী
১১. অসন্তুষ্ট ও অতৃপ্ত রাজনীতিবিদ
১২. কংগ্রেস নেতৃত্ব, শ্রমিক, প্রফেসর ও শিক্ষকবৃন্দ
১৩. পাক-ভারত খণ্ডীকরণ যারা ঠেকাতে চেয়েছে এবং পুনঃযোগদানের মাধ্যমে পাকিস্তানকে অস্বীকার করতে যারা উদ্যোগী
১৪. বিহার থেকে আগত আরএসএস এজেন্টগণ
১৫. ফরওয়ার্ড ব্লক, রিভ্যুলুশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি এবং পশ্চিমবঙ্গের সন্ত্রাসী দলের প্রতিনিধি
১৮. নাশকতাকারী, শত্রæর এজেন্ট এবং ফিফথ কলাম
১৯. হিন্দুস্তানি কুলি ও শ্রমিক
২০. পুলিশের গুলিবর্ষণের কারণে ভিকটিম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছাত্র
২১. ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জের অনেক হিন্দু বিশেষ করে সাহা; ঢাকার শাঁখারি

লাল ষড়যন্ত্র
লাল ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও আবেগ ছড়ানো, যাতে ছাত্র এবং তরুণ লীগারদের মধ্যে উন্মাদনা এনে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা, নাশকতা এবং উর্দুভাষী ও বাঙালিদের মধ্যে ভ্রাতৃহত্যাকারী দাঙ্গা সৃষ্টি করা যায়, স্থানীয় ও মোহাজির মধ্যেও তা করা যায়; রেল সড়ক, টেলিভিশন-টেলিগ্রাফ বিচ্ছিন্ন করে দেশে ‘অ্যানার্কির’ উদ্ভব ঘটানো। তারা সেতু উড়িয়ে দেয়ার, স্টেট ব্যাংকে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা হেড পোস্ট অফিস, ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট, কালেক্টরেট, সেক্রেটারিয়েট ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অফিসে নাশকতা চালাবে; পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি করবে, সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও বিপ্লব করবে। তারা সচিবালয়, রেডিও দখল করে কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটাবে এবং দেশ দখল করার জন্য বিদেশি শক্তিকে আমন্ত্রণ জানাবে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ঢাকা ট্রাঙ্ক টেলিফোন লাইন কেটে দেয়া হয়েছে, রেলওয়ে, পোস্টাল ও টেলিগ্রাম অচল করা হয়েছে। বাঙালি পুলিশ বিদ্রোহ করেছে, আদেশ অমান্য করেছে। পূর্ববাংলার সেক্রেটারিয়েটেও বিদ্রোহ হয়েছে। মর্নিং নিউজ পত্রিকার অফিস ও ছাপাখানায় আগুন দেয়া হয়েছে। হামিদুল হক চৌধুরীর বাংলাদেশ অবজার্ভার পত্রিকা বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও কেন্দ্রীয় সরকারবিরোধী প্রচারণায় শীর্ষে রয়েছে। এই আন্দোলনে সাধারণ শ্রমিকরা শুরুতে নিরপরাধ ছিলেন; কিন্তু যখন দাঙ্গা শুরু হয়ে গেল তারা অসহায় হয়ে পড়লেন। ছাত্রদের গুলি করার পর তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আন্দোলনের নেতৃত্ব উদ্যোক্তাদের হাত ফসকে কমিউনিস্ট সেকুলারিস্ট ও শত্রæর এজেন্টদের কাছে চলে গেল। মুসলিম লীগ এবং আওয়ামী লীগ উভয় দলেরই নেতৃত্ব সংকট ছিল। প্রকৃতপক্ষে কোনো নেতাই তাদের ছিল না। চাতুর্যের সঙ্গে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা কমিউনিস্ট সেকুলারিস্ট এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী- তারা কী করতে যাচ্ছে এ সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা ছিল। তারা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে, অবাঙালিদের বিরুদ্ধে মোহাজিরদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-স্তূপীকৃত করতে সক্ষম হয়। যেখানে নিরীহ ছাত্ররা সেøাগান দিয়েছে ‘উর্দু-বাংলা ভাই ভাই’ সেখানে কমিউনিস্ট ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মোহাজির মালিকানাধীন দোকান, কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ চালিয়েছে, অপদস্ত করেছে, তছনছ করেছে, নিপীড়ন চালিয়েছে। মোহাজির অধ্যুষিত এলাকায় পানির সরবরাহ বন্ধ করেও দেয়া হয়েছে, হত্যা করে তাদের প্রতিবাদ বন্ধ করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কোনো উপায় ছিল না। তারা জয় হিন্দ সেøাগান দিয়েছে, পাকিস্তান ধ্বংস হোক, পূর্ববাংলা পশ্চিম বাংলা এক হোক সেøাগানও দিয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও অন্যত্র এসব সেøাগান শোনা গেছে।
(এই পত্রের অনেকটাই যে বানোয়াট, তা স্পষ্ট। এমনকি সরকার পক্ষীয় সংবাদপত্র বাঙালদের দ্বারা মোহাজিরদের এমন নিগ্রহের কোনো চিত্র তুলে ধরা হয়নি।)
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত)

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়