রাজধানীতে বাইক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

আগের সংবাদ

‘কোটা’ নিয়ে কূটকৌশল

পরের সংবাদ

নির্বাচন পরবর্তী বোঝাপড়া

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুটা মতপার্থক্য থাকলেও বর্তমানে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে নতুন প্রয়াস শুরু করেছে ঢাকা-ওয়াশিংটন। নির্বাচনের পর শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশে এসেছেন তারা। শেখ হাসিনার টানা চতুর্থবারের সরকার গঠনের পর এই প্রথম বিদেশি প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরকে ‘নির্বাচনপরবর্তী বোঝাপড়ার’ প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে- নির্বাচন ইস্যু, মানবাধিকার, সুশাসন ও নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালের উত্তপ্ত আবহাওয়া থেকে বেরিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দুই পক্ষের আলোচনা হবে। দ্বিপক্ষীয় এসব ডায়ালগে দুই দেশের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে- এমন প্রত্যাশা সব মহলের।
গতকাল ঢাকায় আসা মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন- মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ডিরেক্টর এলিন লাউবাকের, ইউএসএআইডির এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর এ্যাসিস্ট্যান্ট এডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার এবং ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার।
ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন তারা। বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন দূতাবাস বলছে, মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিকের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নেয়া, মানবাধিকারকে সমর্থন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আন্তর্জাতিক হুমকির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সহনশীলতার শক্তিকে এগিয়ে নিতে এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। এছাড়া তিন দিনের সফরে তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট, সুশীল সমাজ, শ্রম সংগঠক এবং মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
ইন্দো প্যাসিফিক নিয়ে আউটলুকের বাইরে যাবে না বাংলাদেশ : ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরে আলোচিত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশ নেয়া নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন দেশ ও জোট। দেশগুলোর অর্থনীতি, বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তারা এতে অংশীদার হওয়ার কথা বলে আসছে। জো বাইডেন সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ওই কৌশলে পরিবর্তনও আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের পথ ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপানসহ বিভিন্ন দেশ এর আগে তাদের কৌশলপত্র প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই চায় বাংলাদেশ অন্যান্য আঞ্চলিক দেশের মতো এ কৌশলগত জোটে অংশ নিক। এ ব্যাপারে ২০১৮ সাল থেকেই দেশটি আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত বছর ইন্দো-প্যাসিফিক ‘রূপরেখা’ ঘোষণা করে সরকার; যেখানে গঠনমূলক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তা বাংলাদেশের টেকসই অর্থনীতি ও সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে লক্ষ্য ধরা হয়েছে। চার মৌলিক নীতিমালা এবং ১৫ অভীষ্ট লক্ষ্যের প্রথম শর্ত জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে

সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা, অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র স¤প্রসারণ এবং সংলাপ ও বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, নিরাপত্তা রক্ষার কথা রূপরেখায় তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে কখনোই রূপরেখার বাইরে যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশ আউটলুক তৈরি করেছে। সেখানে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে, আমরা কী চাই। কীভাবে চাই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আউটলুক অনুযায়ী তার অবস্থান বজায় রাখবে এবং ভবিষ্যতেও তাই করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের অগ্রাধিকার আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার এক নয়। অনেক পার্থক্য আছে। আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে আমরা এই অঞ্চলের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকুক সেটি আমরা চাই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চাই। তবে বিশেষ কোনো অঞ্চলের সঙ্গে বিশেষ কোনো সম্পর্ক নয়।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক মুন্সী ফয়েজ আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়টি খুব জোরালো আলোচনায় রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ ব্যাপারে স্পষ্ট করেছে। আর্থসামাজিক বিষয়ে আমরা আছি। নিজস্ব কূটনীতি মেনেই সম্পর্ক এগিয়ে নেবে বাংলাদেশ।
ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক শক্তিশালী হবে : বিশ্লেষকদের মতে, জো বাইডেনের চিঠি এবং ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নির্বাচনের বেশ আগে থেকে শ্রম অধিকারসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। সামনের দিনগুলোতে ব্যবসাবাণিজ্য, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর পাশাপাশি মানবাধিকার ও সুশাসনের বিষয়গুলোও থাকবে। এছাড়াও মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের মাত্রা বেড়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ প্রতিনিধি দল এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারে। বাংলাদেশের গুরুত্ব শুধু অর্থনীতির কারণে নয়, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেও। ফলে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগ দিচ্ছে।
অধ্যাপক ড. দেলোয়ার বলেন, নির্বাচনের পর শুভেচ্ছা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। দুপক্ষের মধ্যেই কথাবার্তা হয়েছে। নির্বাচনের পর থেকেই সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নজর রয়েছে। মালদ্বীপের সঙ্গে তারা সম্পর্ক শক্তিশালী করছে। ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনোত্তর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরো অর্থবহ করা যায়, বোঝাপড়ার মধ্যে যে কিছুটা গ্যাপ ছিল, তা কীভাবে কমানো যায়, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরে এসব বিষয় প্রাধান্য পাবে। আমার মনে হয় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, মিয়ানমার পরিস্থিতিসহ নির্বাচনের আগে দুদেশের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে তা নিরসন করে কীভাবে আরো এগিয়ে যাওয়া যায়- সবকিছুই মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই ঢাকা সফরে গুরুত্ব পাবে।
বিভিন্ন দিক থেকেই মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই ঢাকা সফর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক, রাজনীতি- সব বিষয়েই আলোচনা হবে। তবে নির্বাচনের পর এই প্রথম মার্কিন প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর দুদেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা। পারস্পরিক সহযোগিতা আরো বাড়বে। কতগুলো বিষয় নিয়ে আগে থেকেই কথা হচ্ছিল। এর মধ্যে তিনি বলেন, আরো কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতা চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করতে চায়, বিমান বিক্রি করতে চায়। এসব বিষয়েও বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। এসব বিষয়েও আলোচনা হয়তো হবে। সবচেয়ে বড় কথা দুদেশের মধ্যে পুরোদমে আবার ডায়লগ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আমরা যেসব জিনিস রপ্তানি করি, বিশেষ করে পোশাক খাতে আমাদের কোনো সুবিধা দেয় না যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই কথা বলবে ঢাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়