মির্জাপুরে ডাকাতের হামলায় ট্রাকচালক নিহত

আগের সংবাদ

রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশি : ত্রিশ হাজার টাকায় নাগরিকত্ব!

পরের সংবাদ

স্মার্ট রাজস্ব আয় ব্যবস্থাপনা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

(গতকালের পর)

কর ফাঁকি দেয়া মানে নিজেকেই ফাঁকি দিচ্ছি- সবার মধ্যে এ বোধটা তৈরি করা জরুরি। এ সামাজিক উপলব্ধিতে সবাইকে আসতে হবে। আসার জন্য এনাবলিং এনভায়রনমেন্ট তৈরি করতে হবে। বছর চারেক আগ থেকে কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেয়ায় সেখানকার চাকরিজীবীরা সবাই কিন্তু করের আওতায় এসে গেছেন। তেমনি ট্রেড বডি সমিতি, বাড়ির মালিক সমিতির ওপর সদস্যদের কর দেয়ার দেখভালের দায়িত্ব নিতে হবে। একজন কর পরিদর্শক সুনির্দিষ্ট এলাকার নির্দিষ্টসংখ্যক বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য তলব করতে পারে। পুলিশ বিভাগ বাড়িওয়ালা থেকে ভাড়াটে সবার তথ্য, কার বাড়িতে কারা থাকে, কয়জন থাকে, সবার তথ্য নিচ্ছে। এগুলো এখন স্থানীয় থানা নিচ্ছে। কর প্রশাসনও সহজেই এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। এভাবে তথ্য সংগ্রহ করেই এনফোর্স করতে হবে। এনফোর্স করার দুর্বলতাতেই কিন্তু মানুষ ফাঁকি দেয়ার ফুরসত পায়।
আরেকটা বিষয় হলো, করের হার যৌক্তিক হওয়া উচিত। করের ভার যাতে সহনীয় থাকে, সে জন্য কর হার কমাতে হবে। যাতে মানুষ কর দিতে উৎসাহিত হয়। করের হার সুষম করে করের আওতা বাড়ানো যায়। এখন কড়াকড়ি করা হয় তাদের ওপর যারা কর দিচ্ছে। যারা দিচ্ছে না তাদের ওপর নজরদারি নেই। কারো কারো কর দেয়াটা অনেকটা পিকিউনারি পানিশমেন্টের মতো হওয়া ঠিক নয়।
আরেকটা বিষয় আছে সেটি হলো, আনুষ্ঠানিক রাজস্ব পরিশোধের বাইরে অনানুষ্ঠানিক লেনদেন বেশি হওয়ার পরিবেশে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস এবং করভার বেশি হয়। এর বিপরীতে সেই অনুপাতে সেবা পায় না মানুষ। আমরা শুধু ইনফর্মাল ট্রেড শব্দটি শুনেছি, অর্থনীতিতে ইনফর্মাল রেভিনিউ নামে একটা শব্দ বেশ মোটাতাজা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়াতে বাড়তি খাই খরচের রসিদ দেয়া হয়। স্পিড মানি বা অন্য কোনো নাম দিয়ে বলা হয়, শুল্ক যে দিয়েছেন তা ঠিক আছে, কাজটা আরেকটু গতিশীল করার জন্য কিছু অর্থ দিতে হবে। তার জন্য বিশেষ রঙের একটা সিøপ আলাদাভাবে দেয়া হচ্ছে। ফলে সেখানে হিসাব থাকছে সবকিছুর। এ দেশে প্রায় ক্ষেত্রেই নির্ধারিত হারের বাইরে আলাদাভাবে বাড়তি অর্থ লেনদেন হয় তার কোনো হিসাবায়ন নেই। এ ধরনের অস্বচ্ছতা দূর করতে রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন নিশ্চিত হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে কিছুটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্মার্ট রাজস্ব প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার জন্য সেটিকে বেগবান করা এখন সময়ের দাবি। এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা, জবাবদিহিতার তাগিদ ও বিনিয়োগ আসতে হবে।
সাধারণ করদাতার অভিযোগ জানানোর জন্য, এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় অনেক কিছু করার জন্য যে প্রতিষ্ঠান গড়া হয়েছিল, থাকা উচিত ছিল সেটি হলো ট্যাক্স ওমবুডজম্যান অফিস। ১৬৬টি দেশে আছেও। ২০০৫ সালে এ অফিস যে উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে গঠিত হয়েছিল, তা অর্জনের সুযোগ না দিয়ে ২০১১ সালে এসে পুরো অফিসটাই বিলোপ করা হয়। ২০০৫ সালে কর ন্যায়পাল অফিস গঠনের সময় বলা হয়েছিল, এখানে মানুষ কর-সংক্রান্ত হয়রানি ও বিরোধের বিচার পাবে। মাত্র ৬ বছরের মাথায় ২০১১ সালে বলা হলো, ‘করদাতার সঙ্গে ভালো আচরণ করলে, সেবা দিলে, ন্যায় বিচার করলে, কর দেয়ার পদ্ধতি সহজ করলে এ অফিস লাগবে কেন।’ আরো বলা হলো- ‘কর আইন, শুল্ক ও ভ্যাট আইনের মধ্যে কর ন্যায়পালের প্রভিশন নেই, তাই সেটিকে বিলোপ করতে হবে।’ ন্যায়পাল অফিস কর আইনের সঙ্গে সংযুক্ত না হলে আইন সংশোধন করে সংযুক্ত করে নিতে হবে। করদাতাদের আস্থায় আনতেই তো আইন করে কর ন্যায়পাল অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
মোদ্দাকথা হলো কর ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না করলে করজাল বৃদ্ধি তথা কর আহরণে উন্নতি আসবে না। কর-জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশ যে তলানিতে, তার কারণটাই হলো নানাভাবে এ সমাজে কর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। মানে কাউকে ট্যাক্স দিতে বাধ্য করা হচ্ছে না বলে এমনটিই হচ্ছে। দুর্নীতিজাত অর্থ অর্থনীতির মূল ধারায় আনার উদ্যোগ ইতিবাচক হবে না, যদি বিশেষ হ্রাসকৃত হারে কর দিয়ে, উপার্জিত অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন না ওঠালে। দুর্নীতি দূর তথা সম্পদ বণ্টনবৈষম্য দূর করা কঠিন হবে। এর ফলে বরং বৈষম্য উস্কে দেয়া হবে, যদি টাকা কীভাবে উপার্জিত হচ্ছে তা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা বা প্রশ্নের মাধ্যমে বাধা না দেয়া হয়, তাহলে তা হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে নিরুৎসাহিত করার শামিল। দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালের পর থেকে দেশ ও সমাজে সম্পদের একটা বিরাট বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। জিডিপির সংখ্যাভিত্তিক পরিমাণ বেড়েছে এবং সেভাবে পার ক্যাপিটা জিডিপিও বেড়েছে বলে দেখানো হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতায় ‘গরুর হিসাব শুধু কাজির খাতায়, গোয়ালে তেমন গরু নেই’ পরিস্থিতি। ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে খুব দ্রত ধনীর সংখ্যা বাড়ছে।
কর সংস্কৃতির বিকাশ প্রত্যাশা করে ২০০৮ সালেই প্রথম তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়- (১) ১৫ সেপ্টেম্বরকে জাতীয় আয়কর দিবস ঘোষণা, (২) করমেলার আয়োজন এবং (৩) সেরা করদাতার সম্মাননা প্রবর্তন। অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ব্যক্তি আয়কর পরিশোধের বিধান ছিল বলে ১ সেপ্টেম্বরকে জাতীয় আয়কর দিবস ঘোষণার সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নœ করার কালে জানা গেল তদানীন্তন প্রধান উপদেষ্টা ১৫ সেপ্টেম্বরের আগে উদ্বোধন করতে পারবেন না। তাই ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস হলো। পরবর্তীকালে ৩০ নভেম্বরকে জাতীয় আয়কর ঘোষণা করে কর আহরণের সময়ানুবর্তিতা ও কার্যকারিতাকে দুর্বল ও দীর্ঘসূত্রতার দখলে দেয়া হয়েছে।
২০০৮ সালে আয়কর মেলা আয়োজনটি ছিল নিঃসন্দেহে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। করদাতাকে আগ্রহী করে তোলা, কর এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রশমন, আইনগত ও পদ্ধতিগত জটিলতা সহজীকরণ করমেলা আয়োজনের মাধ্যম, যদি করদাতাদের সহজে জানানোর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে মানুষের মধ্যে কর প্রদানের সচেতনতা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি তারা কর দেয়ার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারে। এর ফলে করদাতা ও কর আহরণকারীর মধ্যকার দূরত্বও কমে আসবে। ২০০৮ সালে যে মৌলিক বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ রেখে করমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়, তা ছিল দূরবর্তী অঞ্চলের করদাতারা যারা কর অফিসে আসতে পারেন না বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, তাদের কথা বিবেচনা করে দূরবর্তী অঞ্চলে অর্থাৎ উপজেলা পর্যায়ে যে করদাতা রয়েছেন তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করার মাধ্যমে কর অফিসের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিতি হয়ে কর সম্পর্কে তাদের বিভিন্ন তথ্য জানাবেন। উদ্দেশ্য, তারা যেন উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে কর প্রদান করতে পারেন। লক্ষণীয়, করমেলা করা হয় বিভিন্ন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার (যারা মোট করদাতার মাত্র ৩০ শতাংশ) জন্য, এখানে করপোরেট এবং কোম্পানির কর প্রদান ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ উঠেছে করমেলাতে কর প্রদানের পরও পরবর্তীতে করদাতাকে আবার কর অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাকে নতুন করে আসতে বলা হচ্ছে। করমেলাতে বেশি ভিড় হওয়ার নেপথ্যে কিন্তু এটাও একটা কারণ যে, কর প্রদানে আগ্রহীরা কর অফিসে গিয়ে কর দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এটা থেকেও শিক্ষা নেয়ার রয়েছে। প্রত্যেকটা কর অঞ্চলে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র খোলা আছে। কর দেয়ার পদ্ধতিটাকে সহনশীল ও টেকসই করতে হলে ঘোষিত নীতিপদ্ধতির মধ্যে কনসিসটেন্সি রাখতে হবে, তা ঘন ঘন পরিবর্তন করা ঠিক নয়। কর প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতি বছরই নতুন নতুন পরিবর্তন আনা হলে বাস্তবায়নে জটিলতা বাড়ে। একটা আর্থিক আইন জারি করলে সর্বনিম্ন চার থেকে পাঁচ বছর তা বহাল থাকা উচিত। তাহলে সবাই আইনটি সম্পর্কে অবগত থাকবে। প্রতি বছর যদি বিধি-বিধানের পরিবর্তন করা হয়, তাহলে অনুসরণে সমস্যা হয়।
আরেকটি জটিল বিষয় হচ্ছে, জুনে যে বাজেট পেশ হয় তার সঙ্গে একটি অর্থ আইন দেয়া হয়। অর্থ আইনটি পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এটির প্রয়োগ শুরু হয়। ধরা যাক সঞ্চয়ের ওপর করের হার পরিবর্তন হলো। ফলে করদাতা যখন আগের অর্থবছরের রিটার্ন জমা দিচ্ছেন তখন নতুন হারে তা দিতে হচ্ছে। এ রকম বাড়তি হারের বিষয়টি তিনি আগে অবহিত ছিলেন না। বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকালে এ ব্যাপারে তার প্রস্তুতি ছিল না। এটি কর প্রয়োগ, প্রক্রিয়া ও হিসাবায়নের ক্ষেত্রে জটিলতার অন্যতম একটি কারণ। করদাতাকে একসঙ্গে প্রশিক্ষিত, উৎসাহিত ও বারবার অবহিত করা যায় না। আয়কর পরিপত্র-১ জারিতে বিলম্ব করেও তাতে কিছু কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা নিরসনে ব্যাখ্যার অবকাশ থেকে যায়।
সরকারকে রাজস্বের ইনফ্লেটেড ফিগার দেখানোর সমস্যা হলো উল্লেখিত আয়ের অঙ্ককে ধরে অন্য খাতে ব্যয়ের কর্মসূচি ঠিক করা হয়, তাই জোর দেয়া উচিত প্রকৃত ও নেট ফিগারের দিকে। ভুল ফিগারকে সঠিক ধরে ব্যয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে কর আহরণের প্রকৃতি এবং বাজেট প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনা প্রয়োজন। বাজেট-পূর্ব আলোচনায় সবাই এমন এক সময় নিজেদের দাবি ও সুপারিশ উত্থাপন করেন তখন বাজেট প্রস্তাব সংশোধনের কোনো সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে আলোচনা ও দাবি-দাওয়া পেশ করার সময়ও পাওয়া যায় না ঠিকমতো। ফলে যে দাবি ও সুপারিশ আসছে তার বিবেচনায় কোনো ভিত্তি হয়ে ওঠে না, ফলে দাবিগুলো ও সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন বা পূরণ করা সম্ভব হয় না ঠিকমতো। আর রাজস্ব আইন প্রবর্তনের দায়িত্ব রাজস্ব আহরণকারী বা বাস্তবায়নকারীদের ওপর থাকা আদৌ সমীচীন নয়। করদাতারা তাদের অভিযোগ, আর্তি-আবেদন এনবিআরকে জানালে তার প্রতিকার পাওয়া যায় না। আইনপ্রণেতা, জাতীয় সংসদ বা জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোতে এগুলো বিচার-বিবেচনা পর্যালোচনার জন্য পেশ করা হলে তারাই উপযুক্ত নির্দেশনা দিতে পারবেন।
দক্ষ লোকবল নিয়ে রাজস্ব বিভাগ পরিচালিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশে এনবিআরে তুলনামূলকভাবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকবলের অভাব স্পষ্ট। বিশেষ করে আশির দশকে রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্ব তেমন ছিল না। আর রাজস্ব অবকাঠামো তখন যে ক্ষুদ্র পরিসরে ছিল তা স্থির ছিল বহু বছর। ২০০৮ সালের দিকে রাজস্ব বোর্ডের লোকবল ও অবকাঠামোগত সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাব রাখা হয়। লোকবল ও কাঠামো প্রায় ২-৩ গুণ বৃদ্ধি করার যে প্রস্তাব তখন রাখা হয়েছিল তার বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৩ সালের দিকে। সেখানে দক্ষ ও উপযুক্ত লোকবল নিয়োগ দিতে একটু সময় লেগে যাচ্ছে, যারা সেখানে নিয়োগ পাবেন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না পেয়ে তারা এই কাজ কতটুকু করতে পারবেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। বিশেষ করে রাজস্ব বিভাগে যারা কাজ করবেন তাদের মেধা ও দক্ষতা আর ১০টা দপ্তর বা বিভাগের চেয়ে বিশ্লেষণ ক্ষমতায়, পারঙ্গমতায় অবশ্যই বেশি হওয়া আবশ্যক। আশির দশকে বিশেষ বিবেচনায় একটি বিশেষ পর্যায়ের কিছু কর্মচারী এই বিভাগে আত্মীকৃত হন। দুই দশক তাদের সঠিকতা নির্ণয় ও আত্মীকরণ যৌক্তিকতা প্রমাণ উপলক্ষে রজ্জুকৃত প্রায় ৮ ডজন মামলার ফেরে পড়ে রাজস্ব বিভাগে প্রারম্ভিক পর্যায়ে কর্মকুশল কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ বন্ধ ছিল। ফলে উপযুক্ত ও দক্ষ লোকবলের অভাবে ন্যায্য রাজস্ব আহরণ শেষ অবধি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করতে ধকল সইতে হচ্ছে।
যৌথ ও সমন্বিত দেখভালের দর্শন বাস্তবায়নুগ পাওয়া যায় না আন্তঃসমন্বয় সমস্যার কারণে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারযোগ্য বিষয় হলো নীতি (ঢ়ড়ষরপু) প্রণয়নকারী ও বাস্তবায়নকারী, কার্যসম্পাদনকারী ও তার প্রতিকার প্রার্থনা (ধঢ়ঢ়বধষ) শ্রবণকারী একই কর্তৃপক্ষ/কর্মকর্তা হওয়া। বাস্তবায়নকারী নীতি প্রণয়ন কিংবা নীতি প্রণয়নকারী বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকলে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন উভয়ই সুবিবেচনা প্রাপ্ত হয় না। একইভাবে বাস্তবায়নকারীর দ্বারা সৃষ্ট অনিয়মের পরীক্ষা পর্যালোচনা বা আপিল শ্রবণের দায়িত্ব তার কাছে থাকলে সুবিচার নিশ্চিত হয় না।
রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে ও পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় আইন সঙ্গত স্বচ্ছতার আলোকে গতিশীল করণের স্বার্থে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আইন ও প্রক্রিয়ার যৌক্তিকতা যথা বিশ্লেষণ হওয়া উচিত। বিশেষ করে কর আহরণ প্রক্রিয়ার যেসব আইনি জটিলতা সেটা ঠিকমতো সংস্কারের মাধ্যমে স্পষ্ট করা না গেলে সমস্যা থেকেই যাবে। অন্তত এই অবস্থায় রেখে ব্যাপক কর আদায়ের যে কথা চিন্তা করা হয়ে থাকে তা অর্জন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে আইনের আর্থ-প্রশাসনিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি আরো কিছু অসম্পূর্ণতা ও ফাঁকফোকর থেকে থাকে তা সংশোধন করা না গেলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দেয়া কঠিন হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ : উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়