গ্রেপ্তার ২ : স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় ক্ষোভে সতীনকে হত্যা

আগের সংবাদ

ভোরের কাগজের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : এবার বাড়বে বিদ্যুতের দাম। আগামী জুন মাসের মধ্যে ভর্তুকি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তা করছে জ¦ালানি বিভাগ। ঈদের পর বিদ্যুতের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে জ¦ালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই আপ্রাণ চেষ্টা করেও সরকার ভর্তুকি থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছে না। এই অবস্থায় বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই। দাম কিছুটা বাড়ালে ভর্তুকিও কিছুটা কমবে। তবে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেবা ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না বাড়িয়ে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ালে জনগণের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হবে।
বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক জ¦ালানির দাম আকাশচুম্বি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট ছিলো। পরবর্তী ১৫ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে ২৯ হাজার ১৭৪ মেগাওয়াট হয়েছে। দেশীয় জ¦ালানির পর্যাপ্ত যোগান না থাকায় বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে জ¦ালানির আমদানি বাড়াতে হয়েছে। এসব কারণে সরকারকে আগে যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হতো, এখন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ২০২৩ সালে ৩ দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর পরও ভর্তুকি কমছে না। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারকে প্রায় সাড়ে ৫ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে সরকারের অব্যাহতভাবে ভর্তুকি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আর্থিক দাতা সংস্থাগুলোও প্রশ্ন তুলেছে। দাতা সংস্থা আইএমএফের পরামর্শ হচ্ছে ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এই শর্তেই তারা সরকারকে ঋণ দিয়েছে। আগামীতে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতের ভর্তুকি থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে ঋণের অর্থ ছাড় বন্ধ করে দিতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে সংস্থাটি। এসব কারণে সরকার ভর্তুকি থেকে বেড়িয়ে আসতে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। পিডিবির পর্যালোচনায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় খুচরা দাম ৮ টাকা ২৫ পয়সা। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৭০ পয়সা। পাইকারিতে ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দিতে হলে পাইকারি দাম ১২ টাকা ১১ পয়সা নির্ধারণ করতে হবে। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়লে খুচরা গ্রাহক পর্যায়েও দাম বেড়ে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা হবে। পিডিবি চার ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পর্যালোচনা প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে। ধাপে ধাপে বিদ্যুতের ভর্তুকি কিভাবে এবং কত কমিয়ে শূন্যের কোটায় নামা যায় ওই পর্যালোচনায় তাও তুলে ধরা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবকিছু এখন আলোচনায় রয়েছে। তবে দাম বাড়ানোর ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সংবলিত পিডিবির পর্যালোচনা পত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এটা নিয়ে এখন পর্যালোচনা চলছে। তবে আগামী ১২ মার্চ থেকে রমজান শুরু হবে। রমজানের আগে বিদ্যুতের দাম

বাড়ানো হবে না। তবে ঈদের পরপরই বিদ্যুতের দাম বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এবার দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে নেয়া হবে না। ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। এতে জনগণের ওপর তেমন চাপ পড়বে না। সব কিছুই সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। এখন সরবরাহ ঠিক রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। উৎপাদন বাড়ানোর ফলে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ভর্তুকির পরিমাণও বেড়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমাতে পারলে ওই টাকা দিয়ে আরো উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে। এতো বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে একটি সেক্টর চলতে পারে না। এ কারণেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে পিডিবি ৮৮ হাজার ৪৫০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনেছে। এতে ৯৬ হাজার ৮৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এই বিদ্যুৎ ৬টি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০ হাজার ৮৫৮ কোটি ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। পিডিবির লোকসান হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ লোকসান ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়েছে ৩৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে পিডিবি। এভাবে আর ভর্তুকি দেয়া সম্ভব না।
বিদ্যুতের দাম বাড়াতে সরকারের চিন্তা-ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, বিদ্যুতে ভর্তুকি কমানোর কথা বলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে বলে শুনছি। এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। এমনিতেই বাজারের বেহাল দশা। মানুষ আর্থিক সংকটে আছে। এখন আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে আমি মনে করি না। জ¦ালানি ও বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এই খাতের অব্যবস্থাপনা, ভুলনীতি, অপচয় রোধ করতে পারলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। তখন ভর্তুকি এমনিতেও কমবে। এইসব বিষয়গুলো সংস্কারে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়