মিয়ানমারের প্রভাব দেশে এলে চুপ থাকা হবে না : নৌ প্রতিমন্ত্রী

আগের সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ে কলঙ্কের দাগ

পরের সংবাদ

যোগ্যরা যেন অযোগ্যদের কাছে হেরে না যায়

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ব্যর্থ জীবনের যন্ত্রণা মেধাবী বেকার জানে! মাসের পর মাস দিনরাত একাকার করে পরিশ্রম করা চাকরিপ্রার্থীকে পরিবার-সমাজের কটুবাক্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। নিশ্চয়ই এটা কোনো সুখকর ব্যাপার নয়! যখন কাক্সিক্ষত পরীক্ষা দিয়েও বারবার ব্যর্থ হতে হয় এবং পরিচিত একজন অ-পড়ুয়া কোনো কথিত চ্যানেলে অর্থ ঢেলে কিংবা কোনো ক্ষমতাকে ব্যবহার করে চাকরিতে প্রবেশে চূড়ান্তভাবে সফল হয় তখন সেই পরিশ্রমী অথচ বাহ্যিকভাবে ব্যর্থের জীবন সামজিকভাবে উপহাসে পরিণত হয়। জীবনের এই পরিহাসের মোকাবিলা করে যারা টিকে গেছে তারা জানে এই যন্ত্রণার তিক্ততা কতখানি! তখন সে প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। দেশে প্রতি রাগ-ক্ষোভ জন্মে। সে এখান থেকে মুক্তি পেতে বৈধ-অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমায়।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন জেলায় ডিভাইসসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। একজন পার্লামেন্টারিয়ানের স্ত্রীর পূর্বপক্ষের মেয়েও একই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং তাকে যে কোনো উপায়ে ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছে বা ছেড়ে দেয়াও হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভুল বোঝাবুঝি ছিল অথচ এই ভুল বোঝাবুঝিতে সবাইকে না ছেড়ে একজনকে ছেড়ে দেয়ায় রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে কেউ কেউ! যা নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, পরীক্ষায় যারা অপরাধ করে আইনের আওতায় আসে শুধু সেই ক’জনই কেবল অপরাধের সঙ্গে জড়িত? এর অন্তরালে যে বিশাল সিন্ডিকেট জড়িত আছে সেটা ভেঙে দেয়া না হলে মেধাবী ও যোগ্যরা বারবার বঞ্চিত হতেই থাকবে। গত বছরের শেষভাগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রথম ধাপে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের মধ্যে এমন একজন ছিল যিনি পরীক্ষার আগের রাতে গ্রেপ্তার হয়েছে অথচ উত্তীর্ণের তালিকায় তার নাম এসেছে। এ ঘটনাকে মিরাক্কল বলা চলে! সে ধাপের পরীক্ষায়ও জালিয়াতির অভিযোগে বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার হয়েছিল শতাধিক। জেলার সম্পূর্ণ পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা একবারে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এমন এমন প্রতিষ্ঠানেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানের পর্যবেক্ষকদের এই জাতীয় পরীক্ষা গ্রহণের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না! একবার এনএসআইর মতো গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্টমেন্টের নিয়োগ পরীক্ষায়ও ফেস ও সিগনেচার ডিটেক্টর দিয়ে কয়েকজন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যারা অর্থের বিনিময়ে প্রক্সি দিতে এসেছিল! জেলা এবং বিভাগভিত্তিক নিয়োগগুলোতে মাঝে মাঝেই আর্থিক দুর্নীতির বিষয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে বডি-চেঞ্জ পরীক্ষা দেয়! চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায়ও প্রেমিকের পরীক্ষা দিতে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক প্রেমিকা গ্রেপ্তার হয়েছে! গত কয়েক বছর পূর্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি বাণিজ্য সংক্রান্ত সিরিজ রিপোর্ট প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
যেসব উচ্চশিক্ষিত মেধাবীরা খেয়ে না খেয়ে, দিন-রাতের পার্থক্য ভুলে বছরের পর বছর চাকরির চেষ্টায় লেগে আছে তাকে অনৈতিকভাবে বঞ্চিত করার চেয়ে ঘৃণিত ও ন্যক্কারজনক কাজ আর একটাও নেই। অধিকার বঞ্চিত মানুষের চোখের পানির মূল্য আছে। তাদের ক্ষোভের ক্ষমতা আছে। চাকরির ক্ষেত্রটিকে যে কোনো কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে হলেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যোগ্যরা উপযুক্ত চাকরি পাবে- এমন সেøাগানের বাস্তবতার দ্বারাই স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। অযোগ্যরা যোগ্যদের স্থান দখল করলে উন্নয়নের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে এবং সামাজিক অনাচার বাড়িয়ে তুলবে। রাষ্ট্রের সামগ্রিক দুর্নীতি হ্রাস করতে হলে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই হবে।

রাজু আহমেদ : লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়