সবজি ও পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির সময় গ্রেপ্তার ২২

আগের সংবাদ

চমক দেখাল ইমরানের দল

পরের সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ে কলঙ্কের দাগ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ আবাসিক হলে ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে গত শনিবার রাতে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর, সাগর সিদ্দিক, হাসানুজ্জামান, মুরাদ ও মামুনুর রশীদ মামুন। মামলায় মুরাদকে ভুক্তভোগীর স্বামীকে আটকে মারধরের অভিযোগে আসামি করা হয়েছে। প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তারই এক ছাত্রীর করা যৌন নিপীড়নের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তথ্যানুসন্ধান কমিটি। বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠানো হয়েছে। ওই সেলকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
স্নাতকোত্তর পর্বের থিসিস করতে গিয়ে শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক ছাত্রী। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং থিসিসের সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি উপাচার্যের কাছে অভিযোগপত্র দেন ওই ছাত্রী। এনিয়ে উত্তাল ক্যাম্পাস।
দেশের তিনটি সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই তিন ঘটনা পর পর ঘটেছে। তবে এবারই প্রথম নয়; যৌন হয়রানির মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা বার বার কলঙ্কিত করেছে সবচেয়ে ‘পরিশীলিত’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রত্যাশিত ক্যাম্পাসে। ‘বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষতান্ত্রিক ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধের কৌশল (স্ট্র্যাটেজিস ফর প্রিভেন্টিং মাসকুলিনিটি অ্যান্ড জেন্ডার বেজ্ড ভায়োলেন্স ইন হায়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন ইন বাংলাদেশ : আ স্টাডি অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি)’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, ৫৬ শতাংশ নিপীড়কই ছাত্রীদের সহপাঠী। ২৪ শতাংশ তাদের চেয়ে ছোট বা বড়। ১১ শতাংশ বহিরাগত ও ৯ শতাংশ শিক্ষক। গবেষণায় ১০ শতাংশ ছাত্রী জানান, নির্যাতনের ৩০ শতাংশ বাজে মন্তব্য ও ৬০ শতাংশ সাইবার হয়রানি। নিপীড়নের ঘটনায় মাত্র ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন। এর মধ্যে ৫ শতাংশ বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এবং বাকি ৫ শতাংশ সেলে। ৯২ শতাংশ জানান, ন্যায়বিচার না পাওয়া ও চরিত্র হননের ভয়ে তারা সেলে অভিযোগ করেননি।
বিশেষজ্ঞ ও নারী আন্দোলন কর্মীদের মতে- পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, মূল্যবোধের অবক্ষয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রভাব, বিচার পাওয়া সম্পর্কে প্রচারের ঘাটতি, লোকলজ্জা, সামাজিক চাপ, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে- এসব কারণে যৌন নিপীড়ন বাড়ছে। একই মনোভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরও।
দায়ী বিচারহীনতার সংস্কৃতি : বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেই যৌন নিপীড়নের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেলের আহ্বায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা ভোরের কাগজকে বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, সামাজিকীকরণ ও মনস্তাত্ত্বিক জায়গাটা থেকে অনেকেই বের হতে পারেন না। আর এ কারণে নানা কৌশলে নারীর জন্য সূ² ফাঁদ পেতে রাখে ধর্ষণকামী পুরুষ মন। যাতে মেয়েটি না বুঝেই জড়িয়ে যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ

কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জেবউননেছা ভোরের কাগজকে বলেন, সমাজ বিচ্যুতির একটি বড় কারণ এই যৌন নিপীড়ন। মূল্যবোধের অবক্ষয় বেড়েই চলেছে।
এদিকে যৌন হয়রানির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়ছে বলে মনে করছেন মনোবিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহজাবীন হক ভোরের কাগজকে বলেন, যৌন হয়রানির ঘটনায় একদিকে যেমন নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
চাকরিচ্যুতই যথেষ্ট ‘শাস্তি’ নয় : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকীর পদোন্নতি ৩ বছরের জন্য স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেলের তথ্য অনুসারে, সেল গঠনের পর ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০টি অভিযোগ এসেছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ৭টি। ২০১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটি গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত পাঁচজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছেন দুজন শিক্ষককে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এক্ষেত্রে বহিষ্কার, পদাবনতিই যথেষ্ট শাস্তি নয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত মন্তব্য করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান মানিক ভোরের কাগজকে বলেন, ধর্ষণকামী মন সব সময় সুযোগ নেয়ার প্রবণতা খুঁজে। বিভিন্ন প্রলোভন তৈরি করে। অভিযুক্তের অভিযোগ প্রমাণিত হলে বহিষ্কার সমাধান নয়; মামলা করা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর বাতিলকৃত ধারা ১০(২) পুনর্বহাল করা; সব বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার নীতিমালা তৈরি এবং এই নীতিমালা সম্পর্কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন দেয়া; যৌন হয়রানির ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও প্রতিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; শিক্ষাব্যবস্থাকে জেন্ডার সংবেদনশীল করার লক্ষ্যে শিক্ষা কারিকুলামে জেন্ডার সমতা, মানবাধিকার, নারীর অধিকারের বিষয় যুক্ত করা দরকার। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ভোরের কাগজকে বলেন, যৌন নিপীড়নের বিচার হচ্ছে না। কমিটি দায়সারা কাজ করছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি পর্যন্ত নেই। আবার কমিটি থাকলেও তাদের ওপর নানারকম চাপ থাকে। শিক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি কোনো শাস্তি হতে পারে না। কিন্তু ওইটুকু শাস্তি নিশ্চিত করতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।
প্রয়োজন আইন প্রণয়ন : ২০০৮ সালের দিকে দেশে ইভটিজিং বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে অনেক নারী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে এবং অনেকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কার্যত ইভটিজিং নিরোধে দেশে তখন কোনো আইন ছিল না এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কোনো কার্যকরী কমিটি বা নির্দেশনা ছিল না। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউ) তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির ঘটনার বিচার চেয়ে একটি রিট করেন। ওই রিটের পরিপেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৪ মে দেশের উচ্চ আদালত যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিখিত নির্দেশনা জারি করেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০(ক) ধারায় যৌন হয়রানির সংজ্ঞার ভেতরে নারীকে অশালীন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি, সাংকেতিক চিহ্ন প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট ও মোবাইলে হয়রানিকেও আওতাভুক্ত করেন। যৌন হয়রানির বিচার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্য শেষ করতে বলা হয়েছে, ব্যর্থ হলে প্রচলিত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা আছে উচ্চ আদালতের আদেশে।
২০০৯ সালের রায়ের প্রেক্ষাপটে ১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষকদের আলোচিত বিক্ষোভের কথা তুলে আনা হয়েছিল। এ ধরনের নিপীড়নের বিচার করতে একটি আইনি কাঠামোর দাবি তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকরা। রায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে এক নারী কর্মকর্তার আদালতে যাওয়া এবং উল্টো চাকরি হারানো, ২০০৬ সালে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর অভিযোগসহ যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ১৯টি ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়। যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী, অপরাধের মাত্রা অনুসারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৌখিক বা লিখিতভাবে সতর্ক করা, ১-২ বছরের বহিষ্কার (শিক্ষার্থী), চাকরিচ্যুত, প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত রাখা, অর্থদণ্ড দেয়া (শিক্ষক ও কর্মচারী) এবং ক্যাম্পাসে চলাচল নিষিদ্ধ (বহিরাগত) করার বিধান রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নির্দেশনা দেন হাইকোর্টে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে একটি আইন তৈরির কথা। কিন্তু এই আইনের খসড়া নিয়ে যতটুকু চর্চা হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে খুব কম।
এছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেল গঠন করা হয়নি। বিএনডব্লিউ তথ্যমতে, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ৭১ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমিটি থাকলেও কার্যকর মাত্র ৪৪ শতাংশ। এ ব্যাপারে মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়ের পর দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনার আশানুরূপ বাস্তবায়ন হয়নি। আইন হয়নি।
সমাধান কী : অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, সামাজিকীকরণ সবচেয়ে জরুরি। যদিও এটি দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের আগে অতীত ইতিহাস জানা জরুরি। আর নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি ঘটনা প্রমাণিত হয়, তাহলে অভিযুক্ত শাস্তি পাবে; আর অভিযোগ মিথ্যা হলে অভিযোগকারী শাস্তি পাবে। সচেতনতা দরকার যেন কেউ কাউকে শারীরিক, মানসিক, মৌখিক কোনোভাবেই হেনস্তা না করতে পারে।
অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান মানিক বলেন, শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক যেমন সৎ হওয়া উচত; তেমনি শিক্ষকদেরও আরো বেশি সৎ হওয়া উচিত।
অধ্যাপক ড. জেবউননেছা বলেন, শিক্ষার্থীদের আস্থায় আনা জরুরি। তাদের সমস্যা শোনা, সমাধানে উদ্যোগ নেয়া যেমন প্রয়োজন; তেমনি কেউ নিপীড়নের শিকার হলে সেটিও প্রকাশ্যে আনা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেলেরও দায় আছে। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর গত দুই বছরে ১৩টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছি। উপাচার্যের নির্দেশনা পাওয়ার পর সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা অভিযোগ নিষ্পত্তির চেষ্টা করি। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছি। এরপর প্রতিটি বিভাগ পরিদর্শন করব।
প্রতিটি বিভাগে অভিযোগ বক্স চায় শিক্ষার্থীরা : সংশ্লিষ্টদের মতে, হয়রানির শিকার হওয়ার পরও লোকলজ্জার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থীই চুপ থেকে যান এবং অভিযোগ করেন না। যেসব ঘটনা নিয়ে হয়রানির শিকার নারী শিক্ষার্থীরা মুখ খোলেন শুধু সেগুলোই লোক জানাজানি হয়; প্রতিবাদ হয় এবং সেসব ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেয়া হয় অভিযুক্ত শিক্ষক ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) কথা হচ্ছিল একজন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তার অভিযোগ, বিভাগের এক শিক্ষক বেশি নম্বর দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে প্রেম নিবেদন করেছিলেন। এই অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেও পৌঁছেছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি হয়রানির ওই ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে স্যার যে আচরণ করছিলেন তা আমি মানতে পারিনি। আমাকে ফেল করানোর হুমকি দেয়ার পরও আমি চলে এসেছি।’
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি বন্ধে প্রতিটি বিভাগে অভিযোগ সেল প্রয়োজন। সেল কমিটির সদস্যদের রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা ধরনের বলয়ের বাইরে এসে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অর্ক সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, এসব কমিটি নামকাওয়াস্তে। কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা বা সোচ্চার আন্দোলন দেখি না। কমিটি সোচ্চার হলে শিক্ষার্থীরাও সোচ্চার হতো। কিছু কিছু বিভাগের শিক্ষকদের হাতে অনেক নম্বর থাকে। ফেল করার ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী মুখ খোলে না। তিনি বলেন, প্রতিটি বিভাগে অভিযোগ বক্স থাকা উচিত। ওই বক্সগুলো শিক্ষকদের সভায় খুলে পড়া হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়