মিয়ানমারের প্রভাব দেশে এলে চুপ থাকা হবে না : নৌ প্রতিমন্ত্রী

আগের সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ে কলঙ্কের দাগ

পরের সংবাদ

প্রকাশক, লেখক ও বইমেলা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন জাতির ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে ইতিহাস সৃষ্টি করার জাতির নাম বাঙালি জাতি। বাংলা ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম সফল না হলে বাংলাদেশের স্বাধীন মানচিত্র পেতে আরো বহু বেগ পেতে হতো। বাংলা ভাষা আন্দোলনের অনেক নেতৃত্ব দানকারী শ্রেষ্ঠ গর্বিত সন্তান আজ আমাদের মাঝে নেই। ইতিহাসে তাদের গৌরবগাথা আন্দোলন সংগ্রাম লিপিবদ্ধ আছে। প্রতি বছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে জাতি নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভাষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের স্মরণ করে থাকেন। মায়ের ভাষার জন্য যুদ্ধ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী সেই মহান বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে দুয়েকটি কথা লিখতে চাই। মায়ের ভাষার মর্যাদা আনন্দ সেটি বলে লিখে শেষ করা যাবে না। বাঙালি জাতি মায়ের ভাষার শব্দ উচ্চারণ করে পরিবার থেকে শিক্ষাগ্রহণ করছে। পারিবারিক শিক্ষা থেকে বিদ্যালয় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বাংলা ভাষার ধারাবাহিক চর্চা চলে আসছে। বাঙালি জাতি বাংলা ভাষাকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে অফিস আদালত জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত বাংলা ভাষার পরিধি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলা ভাষার চর্চা পাঠ লিখন বই পত্রিকা ম্যাগাজিন প্রবন্ধ নিবন্ধ কবিতা ছড়া ইত্যাদির মাধ্যমে আমার মায়ের ভাষা আজ অর্ধ পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। যেখানেই বাঙালি জাতি পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে সেখানেই বাংলা ভাষার চর্চা পাঠ লিখন চালু হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই অর্ধ শতাব্দীতে মাতৃভূমিতে বাংলা ভাষার চর্চা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর হাজার হাজার সাহিত্য প্রবন্ধ গল্প নাটক ছড়া কবিতা ইতিহাস সমৃদ্ধ বই মাতৃভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মানে ভাষার মাস। ভাষা শহীদদের বারবার স্মরণ করার মাস। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে প্রকাশক লেখক কবি সাহিত্যিক তাদের লেখনীর মাধ্যমে ইতিহাস ও গবেষণালব্ধ মেধার মাধ্যমে বাংলা ভাষার অফুরন্ত ভাণ্ডারের সংমিশ্রণে বই প্রকাশ করে। সেই বইয়ে অবদান রেখে যাচ্ছে প্রকাশক। লেখকদের মেধা বিকশিত করতে সেই পাণ্ডুলিপি বই আকারে বের করতে কয়েকশ প্রকাশক বাংলাদেশে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই প্রকাশকদের আন্তরিক ভালোবাসায় লেখকরা নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। সরকারের নানাভাবে সহযোগিতা আন্তরিকতায় প্রকাশকরা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। প্রকাশকদের ব্যয়বহুল এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো আমার জানামতে তাদের আন্তরিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
সেই জায়গা থেকে প্রকাশকরাও লেখকদের নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে তৃণমূল পর্যায় থেকে তাদের উঠিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকেন। একজন নবীন লেখককে প্রবীণ লেখকে পৌঁছাতে প্রকাশকের অবদান অনস্বীকার্য। কিছু কিছু প্রকাশক প্রকাশনার জগতে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচয় লাভ করতে পেরেছে। পক্ষান্তরে কতিপয় প্রকাশক তাদের কার্যক্রম ও লেখকদের প্রকাশনাকে ডেভেলপ করতে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আদান প্রদানে ঠিকমতো কথা রাখতে পারে না। নবীন লেখকদের মধ্যে অনেকেরই মুখে অভিযোগ শোনা যায় ঢাকাকেন্দ্রিক কতিপয় প্রকাশক নবীনদের বই প্রকাশ করার চুক্তি করেও যথাসময়ে ও যথাযথভাবে তাদের বই প্রকাশ করে দিতে পারে না। মাঝপথে বহু প্রকাশক অনেক নবীন লেখকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতেও শোনা যায়। এসব কথাবার্তা অভিযোগ মোটেও প্রকাশক লেখক গোষ্ঠীর জন্য শুভকর নয়। এতে অনেক নবীন লেখক বই প্রকাশের ইচ্ছে হারিয়ে ফেলে। একজন লেখক অনেক পরিশ্রম মেধা যোগ্যতা ত্যাগ সাধনার মাধ্যমে নানা বিষয়ের ওপর তিনি বই করার নিমিত্তে পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। যখন মাঝপথে প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি ও অর্থ লেনদেনে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি ভেঙে পড়েন। এ ধরনের অভিযোগ বর্তমান লেখক প্রকাশক পরিবেশে শোনা যায়। ফলে বহু নবীন লেখক এই সৃজনশীল কর্মকাণ্ড থেকে সরে যেতেও চোখে পড়ে। এ ধরনের আচরণ অভ্যাস কর্মকাণ্ড যেই পক্ষই করুক না কেন গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে অথবা সমাজ থেকে নবীন লেখকদের তুলে আনার প্রবণতা চোখে পড়ে না। একজন লেখক ধীরে ধীরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে তৈরি হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাকে উৎসাহ দেয়া তার কর্মকাণ্ডে মানসিক আর্থিক সামাজিকভাবে সহযোগিতা করার মতো পরিবেশ আমাদের দেশে এখনো তৈরি হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় ভাষার জন্য সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য মেধা বিকাশে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করার কথা শোনা যায়। বাংলাদেশে লেখক গবেষক প্রাবন্ধিক কবি সাহিত্যিকদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বেঁচে থাকার মতো সহযোগিতা করার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। তবুও যারা কঠোর পরিশ্রম, সাধনা, অর্থনৈতিক নানা সংকটের মধ্যেও বাংলা সাহিত্যকে আরো গতিশীল সমৃদ্ধশালী করতে সচেষ্ট আছে তাদের সফলতা কামনা করছি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ও সামাজিকভাবে তরুণ নবীন-প্রবীণ সব লেখকের প্রতি আন্তরিক সহযোগিতা ও সার্বিকভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করছি। বাংলা সাহিত্যকে ও ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করতে হলে লেখক গবেষক ভাষা বুদ্ধিজীবীদের অবশ্যই রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার আওতায় আনা চাই।
বাংলা ভাষার চর্চা আরো সমৃদ্ধ করার জায়গায় কোনোভাবেই বিকৃত ভাষার ব্যবহার মেনে নেয়া যায় না। বাংলা সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্যকে বাঙালিদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে। ভিনদেশি সংস্কৃতি ইতিহাস কৃষ্টি কালচার আমাদের গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। জাতি হিসেবে বাঙালি জাতির স্বকীয়তা স্বাধীনতা ইতিহাস ঐতিহ্য তাহযীব তমুদ্দুন যথাযথভাবে লালন পালন ধারণ করে বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধশালী করার প্রত্যয় থাকতে হবে। ভাষার মাসে সব ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

মাহমুদুল হক আনসারী : সংগঠক ও গবেষক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়