মিয়ানমারের প্রভাব দেশে এলে চুপ থাকা হবে না : নৌ প্রতিমন্ত্রী

আগের সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ে কলঙ্কের দাগ

পরের সংবাদ

পাহাড়ের শান্তি ফিরবে কখন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এমন একটি পাহাড়ি অঞ্চল, যে অঞ্চলের সুভাষিত সবুজের স্পর্শ পাওয়ার তাড়নায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন সমতলের মানুষ। শুধু কি দেশের মানুষ? বিদেশি পর্যটকদের কাছেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল। আর এই পর্যটন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি কোম্পানির বাণিজ্যিক হোটেল, রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। যার বেশির ভাগ অংশ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চাষাবাদের ভূমি দখল করে। প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্যে সুভাষিত সবুজ পাহাড় দিনে দিনে কেটে কেটে পর্যটনকেন্দ্র করা হচ্ছে। এই পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উল্টো পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভূমি হারাতে হয়। পাহাড়ে প্রায় খবরের শিরোনাম হতে হয় হত্যা, গুম, নির্যাতন। এই হত্যা, গুম স্বাধীনতার পূর্বেও ছিল স্বাধীনতার পরও দীর্ঘ ৫৩ বছর এই হত্যা, গুম অবধারিত। পাহাড়ের শিশুরা বাবা, মা, ভাই হারানোর বেদনা নিয়ে বড় হয়। কিন্তু বারবার কেন সবুজ পাহাড় রক্তাক্ত হয়? কেন পাহাড়ের শিশুরা তাদের বাবা, মা, ভাই হারানোর বেদনা নিয়ে বড় হবে? তারা কি দেশের নাগরিক না? নাগরিক হিসেবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা কোথায়?
পাহাড়ে আধুনিক কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই, যা রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে অত্যন্ত কম। পাহাড়ে চিকিৎসাসেবার সঠিক কোনো ব্যবস্থা নেই, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও সেখানে মানসম্মত কোনো চিকিৎসাসেবা নেই। ডাক্তার, নার্স সংকট তো রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামেরও ব্যাপক সংকট। দুর্গম পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা এখনো অনুন্নত হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা হাসপাতালে আনার পথেই মৃত্যুঝুঁকিতে থাকতে হয়। অন্যদিকে এখানকার বাঙালি জনগোষ্ঠী পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বর্ণবাদী দৃষ্টিতে দেখেন। যার ফলে বাঙালি জনগোষ্ঠী দ্বারা পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নির্যাতিত নিপীড়িত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৮০, ১৯৯২, ১৯৯৬ সালে বাঙালি ও তৎকালীন সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর বারবার হামলা, নির্যাতন, ঘরবাড়ি পোড়ানোরসহ প্রায় হাজারের অধিক হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ জনগণ হিসেবে একজন সমতলের নাগরিকের যেমন অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনি একজন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু এর বাস্তব চিত্র হুবহু বিপরীত, পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অধিকার বঞ্চিত। এই অধিকার বঞ্চনার যন্ত্রণা থেকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী আন্দোলন সংগ্রাম করে। নিজেদের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক দাবি নিয়ে লড়াই করে। ঠিক তখনই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে একদল বিচ্ছিন্ন গ্রুপ পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, নির্যাতন চালায়।পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামের লড়াকু কর্মী কল্পনা চাকমাকে গুম করা হয়েছে দীর্ঘ ২২ বছর। এখনো কোনো খোঁজ নেই, প্রশাসন এই বিষয় স্পষ্ট কোনো তদন্ত রিপোর্টও দিতে পারেনি। পাহাড়ে শান্তি চুক্তির নামে অঘোষিত সেনাশাসনও জারি হয়েছে। সেনাশাসন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে আরো অবরুদ্ধ ও আতঙ্কিত করছে বলে অভিযোগ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর। পাশাপাশি পাহাড়ে বারবার সংঘটিত হওয়া হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনীর প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাতে পানছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, পিসিপির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। ঘটনার পর লাশ উদ্ধারের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সময়ক্ষেপণ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। প্রশাসনের এমন নীরব ভূমিকার ফলে ৪৩ দিনের মাথায় নতুন বছর শুরু হতে না হতেই পাহাড়ে আবারো হত্যার ঘটনা ঘটে। গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ‘দূরছড়ি গ্রামের নিজ বাড়িতে তিন ইউপিডিএফ সদস্য রবি কুমার চাকমা, শান্ত চাকমা ওরফে বিমল ও রহিন্তু চাকমা ওরফে ত্রিপল সেখানে অবস্থান করছিলেন। সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় রবি কুমার চাকমা ও শান্ত চাকমা (বিমল) নিহত হয়েছেন। পরে আবারো ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রবিবার সাজেকের মাচালং ব্রিজ পাড়ায় প্রতিপক্ষের গুলিতে ইউপিডিএফ প্রসিত দলের দুজন নিহত হয় চিফ কালেক্টর আশিষ চাকমা (৫০) ও সহযোগী দিপায়ন চাকমা (৩৭)। এ যেন পাহাড়ে হত্যার উৎসব চলছে, পাহাড়ে এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ফলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ের স্বায়ত্তশাসন ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকার যদি এই পরিস্থিতি কালক্ষেপণ বা সময়ক্ষেপণ করে, তাহলে পাহাড়ের এমন ভয়াবহ বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ড বাড়তে থাকবে। যার ফলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জনজীবন পরিচালনা ব্যাহত হবে।

মারুফ হাসান ভূঞা : লেখক, মিরপুর, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়