পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত দুই লাইন প্রত্যাহারের আহ্বান চুন্নুর

আগের সংবাদ

চাঁদাবাজির লাইসেন্স ‘ইজারা’

পরের সংবাদ

টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের গর্ব

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে তৎকালীন বঙ্গের টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্পের প্রসার ঘটে। সেখানকার ‘বসাক’ সম্প্রদায়ের তাঁতিরা টাঙ্গাইল শাড়ি বুনতেন। টাঙ্গাইল শাড়ির এই তাঁতিরা ছিলেন ঐতিহ্যবাহী মসলিন তাঁতশিল্পীদের বংশধর। তাদের আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার ধামরাই ও চৌহাট্টায়। তারা দেলদুয়ার, সন্তোষ ও ঘ্রিন্দা এলাকার জমিদারদের আমন্ত্রণে টাঙ্গাইল যান এবং পরবর্তী সময় সেখানে বসবাস শুরু করেন। শুরুতে তারা নকশাবিহীন কাপড় তৈরি করতেন। টাঙ্গাইল শাড়ি বুননের সঙ্গে তাঁতি পরিবারের প্রতিটি সদস্য জড়িত থাকতেন। কোনো কারিগর বা শ্রমিক নিয়োগ করা হতো না, যা ছিল বয়ন কৌশলকে তাঁতি পরিবারের বাইরে যেতে না দেয়ার রীতি। বসাক পরিবারগুলো ছিল টাঙ্গাইলের শাড়ির অন্যতম তাঁতি পরিবার। ১৯৪৭-এর বঙ্গভঙ্গের পরপরই, অধিকাংশ বসাক তাঁতি সম্প্রদায় পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে পশ্চিমবঙ্গে অভিবাসন শুরু করে।
বিভিন্ন গবেষণা এবং এই শিল্পের আদি ধারার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বয়ানে এই শাড়ির উৎপত্তিস্থল হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে উঠে আসছে পাথরাইল, নলশোধা, ঘারিন্দাসহ টাঙ্গাইলের এমন বাইশ-তেইশটি গ্রামের নাম। একসঙ্গে বাইশগ্রাম বলে চিহ্নিত করা হতো। এসব গ্রামই ঠিকানা ছিল তাঁতিদের। যাদের পদবি ছিল ‘বসাক’। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের ব্রিটিশ ভারতে টাঙ্গাইল ছিল ময়মনসিংহ জেলার এক মহকুমা। ১৮৫০ সাল বা তার কাছাকাছি সময়ে তৎকালীন ধামরাই এবং চৌহাট্টা নামে দুটি গ্রামে মসলিনের উত্তরসূরি কিছু তাঁতি বসবাস করতেন। সন্তোষ, করটিয়া, দেলদুয়ারে জমিদারি পত্তনের সময় অন্যান্য পেশাজীবীর পাশাপাশি ওই তাঁতিদেরও সেসব জায়গায় নিয়ে বসতি স্থাপন করা হয়। এসব গ্রামের মানুষ যে শাড়ি বয়ন করতেন তাই এক সময় ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
সম্প্রতি সময়ে ভারতের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে করা একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত একটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রং এবং সূ² জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত- এটি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক।’ এতে আরো বলা হয়েছে, ‘টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।’ ভারতীয় ভৌগোলিক নির্দেশক রেজিস্ট্রি দপ্তর বলছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হ্যান্ডলুম উইভারস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল শাড়িকে (জিআই স্বত্ব) ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে।
ভারতের মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশি নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অনেকের মতে, আমাদের আলস্যের ফলে টাঙ্গাইল জেলার পণ্য এখন ভারতীয় পণ্য হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাবে। অথচ টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের একটি আবহমান ঐতিহ্য। এর আগেও পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে ভারত রসগোল্লা এবং নকশিকাঁথার জিআই স্বত্ব নিয়ে গেছে। অথচ দুই পণ্যের জন্মই পূর্ব বাংলা ছিল। এর আগে ফজলি আম ও নারিকেলের মোয়ার স্বত্ব ভারত পেয়েছে। শেষ মুহূর্তের চেষ্টায় জামদানি দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। কিন্তু সুন্দরবনের মধু নিয়ে ভারতের আপত্তির ফলে ওদের নামেই জিআই স্বত্ব দিয়েছে। সারাবিশ্বেই জিআই স্বত্ব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। জিআই হচ্ছে কোনো সামগ্রীর ব্যবহার করা বিশেষ নাম বা চিহ্ন। এই নাম বা চিহ্ন নির্দিষ্ট সামগ্রীর ভৌগোলিক অবস্থিতি বা উৎস (যেমন- একটি দেশ, অঞ্চল বা শহর) অনুসারে নির্ধারণ করা হয়। ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সামগ্রী নির্দিষ্ট গুণগত মানদণ্ড বা নির্দিষ্ট পর্বত প্রণালি অথবা বিশেষত্ব নিশ্চিত করে। ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিভিন্ন সামগ্রী নির্দিষ্ট অঞ্চলটিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা প্রদান করে।
টাঙ্গাইল শাড়ি এতটাই জনপ্রিয় ও পুরনো যে তার নামে প্রবাদও প্রচলিত রয়েছে। ‘নদী চর খাল বিল গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গর্বের ধন’, ‘চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি’। এ শাড়ি বাংলাদেশের নারীদের অত্যন্ত পছন্দের কাপড়। বাংলাদেশের পরিচয় তুলে ধরার জন্য যে শাড়িগুলো পৃথিবীর সব বাঙালির কাছে পরিচিত, তার মধ্যে রয়েছে জামদানি এবং টাঙ্গাইলের ভাইটাল তাঁতের শাড়ি, বিশেষ করে নকশি বুটি শাড়ি। বাঙালি নারী যেভাবে জামদানি ও টাঙ্গাইল শাড়িতে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, তা আর কোনো শাড়িতেই হয় না। দাবি উঠেছে, বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থায় এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেন অভিযোগ জানানো হয়। আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী সম্পদ এভাবে অন্য কোনো রাষ্ট্র দাবি করবে, এটি হতে দেয়া যায় না। টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের গর্বের জায়গা।

মো. হাসনাইন রিজেন : শিক্ষার্থী, সরকারি হাটহাজারী কলেজ, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়