স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ক্রাইম রিপোর্টাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগী

আগের সংবাদ

সংরক্ষিত আসনেও চমক

পরের সংবাদ

ভাষার ব্যবহার সার্বক্ষণিক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের জাতীয় তিনটি দিবসকে কেন্দ্র করে আমরা দিবসের নামানুসারে মাস হিসেবে চিহ্নিত করে বলে থাকি। যেমন- ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের ভাষার মাস। মার্চ স্বাধীনতার মাস, ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। ধর্মীয়ভাবে সংযম সাধনার রোজার মাসও রয়েছে। সে মোতাবেক আমরা এখন ভাষার মাসের অভিমুখে প্রবেশ করছি। রোজার মাসের পর আর রোজা থাকে না। কিন্তু ভাষাতো সার্বক্ষণিক এবং প্রতিমুহূর্তের বিষয়, ভাষাকে মাসে বা নির্দিষ্ট পরিসরে সীমাবদ্ধ করা তো রীতিমতো উপহাসতুল্য। ভাষার মাস, স্বাধীনতার মাস, বিজয়ের মাস প্রচারণা বাস্তবিকই হাস্যকর। তথাকথিত ভাষার এই মাসে প্রতি বছর সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ মাসব্যাপী বইমেলা আয়োজন করে থাকে বাংলা একাডেমি। এই বইমেলা নিয়ে আবেগ-উচ্ছ¡াসে মুখর হয়ে ওঠে আমাদের গণমাধ্যম থেকে লেখক-পাঠক অনেকেই। মাতৃভাষা নিয়ে আবেগ-স্তুতির যেন সীমা-পরিসীমা থাকে না। প্রাণের মেলা, হৃদয়ের মেলা, ভালোবাসার মেলা, নানা বিশেষণে ভূষিত করা হয় বইমেলাকে। বইমেলা প্রকৃতই যে চিত্ত-বিনোদনের, ভোগ-বিলাসের, উৎসব-আনুষ্ঠানিকতার মেলা নয়, অনিবার্যই জ্ঞানের মেলা। এটা সর্বাধিক বস্তুনিষ্ঠ ও বাস্তবানুগ, এটা স্বীকার করতেই হবে। জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞান আহরণের সুযোগ সৃষ্টিতে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণও বটে। জ্ঞানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাহন হচ্ছে বই। প্রকাশকরা হরেক বই নিয়ে হাজির হয় বইমেলায় জ্ঞান বিতরণে, আর পাঠকরা বই ক্রয়-সংগ্রহ করে জ্ঞান আহরণে সুযোগপ্রাপ্ত হয়। বই তো পণ্য নয়। অনিবার্যই জ্ঞানের বাহন। জ্ঞানের অনুশীলনে বইয়ের বিকল্প নেই। অথচ এই জ্ঞানের বইমেলাকে চিত্ত-বিনোদনের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা-চেতনায় অতিমাত্রায় আবেগ-উচ্ছ¡াসে আমরা ভেসে বেড়াই। আবেগ-উচ্ছ¡াসের ফলে চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে অঙ্গীকার না-থাকায় শুধু আবেগতাড়িত চিন্তার জগতে বই স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে না। আবেগ বাস্তবিকই ক্ষণস্থায়ী, এই আছে-এই নেই। কিন্তু চেতনাগত দৃষ্টিভঙ্গির অঙ্গীকার স্থায়ী। এই সত্যটি মানতেই হবে।
আমাদের দেশে জাতীয় নানা উৎসব-পার্বণে মেলা হয়। এছাড়া হালে বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করেও অজস্র দিবস পালনের হিড়িকও লক্ষ্য করা যায়। যেগুলোর বাহুল্য পূর্বে কখনো ছিল না। গত দুই-আড়াই যুগে আমাদের জাতীয় জীবনে যুক্ত হয়েছে অনেক বিজাতীয় দিবস পালনের আনুষ্ঠানিকতাগুলো। যার সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির, একুশের চেতনাগত কোনোই মিল নেই। অমিলই সর্বাপেক্ষা। বই ভিন্ন তো জ্ঞানার্জনের অন্য কোনো বিকল্প নেই। তাই সাধারণ মেলার সঙ্গে বইমেলাকে একাকার করা যাবে না। বইমেলা প্রাণের মেলা হিসেবে গণ্য হতে পারে যদি তার সঙ্গে চেতনাগত অঙ্গীকারের সমন্বয় ঘটে। নয়তো এসব স্তুতি তামাশাপূর্ণ বলেই গণ্য করা যায়। আবেগ-উচ্ছ¡াসে বইমেলা এবং মাতৃভাষার আনুগত্যের মৌলিক অঙ্গীকারটি ঢাকা পড়ে যাবে। আমাদের সামগ্রিক জীবনাচারে মাতৃভাষাকে অবজ্ঞার অজস্র দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়ে আছে। যেগুলো কাক্সিক্ষত ছিল না। স্বাধীন দেশে তেমন শঙ্কারও সম্ভাবনার কথা ছিল না।
ভাষার এই মাসে অত্যন্ত দুঃখ-বেদনার সঙ্গে বলতে হয় আমরা ক্রমেই ঔপনিবেশিক ভাষার পাশাপাশি হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির আগ্রাসনে মাতৃভাষাকে রীতিমতো উপেক্ষাই করে চলেছি। অতীতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বাংলার পরিবর্তে উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আমরা ত্যাগে-আত্মত্যাগে প্রতিরোধ করতে পেরেছিলাম। রাষ্ট্রভাষা রূপে বাংলা ভাষা পরিত্যাগে উর্দু ভাষাকে গ্রহণ করিনি। অথচ বিনা চাপাচাপিতে এখন হিন্দি ভাষা সানন্দে আমাদের গোটা সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। আমাদের হিন্দি প্রীতিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিশ্ব হিন্দি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ টেলিভিশনে নিয়মিত হিন্দি ভাষার সিরিয়াল ও চলচ্চিত্র দেখেন। বাংলাদেশে হিন্দি ভাষার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ হিন্দি ভাষা বোঝেন, তবে লিখতে ও পড়তে পারেন না। যারা হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতি সম্পর্কে আরো বিস্তৃত জানতে আগ্রহী তাদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে হিন্দি বিভাগ বড় সুযোগের সৃষ্টি করেছে। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক আরো দৃঢ় ও গভীর হবে।’ আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই হিন্দি ভাষার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করে গেছেন হিন্দি ভাষাতেই। আমাদের বিজ্ঞ শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, জাতীয়তাবাদী নেতা-মন্ত্রী এবং দক্ষিণপন্থি রাজনীতিকরা মোদির হিন্দি বক্তৃতায় মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে আনন্দ-উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই নবাগত পাকিস্তান রাষ্ট্রের গভর্নর জেনারেল জিন্নাহর রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণার পর মুহূর্তে সর্বপ্রথম প্রত্যক্ষ প্রতিবাদ জানিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ বলেছিলেন, ‘উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ জিন্নাহ তার ভাষণ দুটি উর্দুতে নয়, ইংরেজিতে দিয়েছিলেন, রেসকোর্স ময়দানে এবং কার্জন হলে। জিন্নাহর কঠোর ঘোষণার পরক্ষণে জোর প্রতিবাদ জানিয়েছিল উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ‘নো-নো’ বলে। জিন্নাহর মাতৃভাষা গুজরাটি। গুজরাটি শিয়া মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ছিলেন জিন্নাহ। তিনি ছিলেন না ধার্মিক, ছিলেন না উর্দুভাষীও। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ প্রত্যাখ্যানে। এবং এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পরিণতিতেই বহু ত্যাগ-আত্মত্যাগেই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মলাভ করে।
ধর্মীয় বিভাজনে অর্থাৎ দ্বিজাতিতত্ত্বে খণ্ডিত ভারতবর্ষে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ আওয়াজটি আজাদ পাকিস্তান রাষ্ট্রের এক বছর অতিক্রান্তে পূর্ব বাংলায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। পূর্ব বাংলায় ক্রমেই প্রত্যাখ্যাত হয় ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্ব। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে প্রাণ হারায় বেশ ক’জন ছাত্র-জনতা। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার ছাত্রসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। পরিণতিতে বাংলা ভাষা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ মানুষের ভাষা কিন্তু উর্দু ছিল না। উর্দু ভাষার বর্ণমালা আরবি-ফার্সি বর্ণমালার আদলের কারণে ধর্মীয় অনুভূতি তখন অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল ছিল বলেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা ধর্মীয় আনুগত্যে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণে দ্বিধা করেনি। নিজেদের মাতৃভাষা বিলোপে করেনি প্রতিবাদও। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল একাধিক জাতি। যাদের ভাষা-সংস্কৃতিও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। যেমন পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (বর্তমান খাইবার পাখতুনখোয়া), কাশ্মির, সিন্ধু, বেলুচিস্তান। এই পাঁচ জাতি নিয়েই অতীতের পশ্চিম পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের পাকিস্তান রাষ্ট্র। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু। এছাড়া বিভিন্ন জাতিসত্তার পাঞ্জাবি, সিন্ধি, সারাইকি, পশতু, বেলুচি, ব্রাহুই ইত্যাদি ভাষা স্ব-স্ব জাতির মাতৃভাষা রূপে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও; উর্দু ভাষার চাপে ওইসব ভাষা ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে বিলীন হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের ভূখণ্ডের সীমানা থেকে প্রায় দুই হাজার মাইল দূরত্বের পূর্ব বাংলা প্রদেশ। পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া উর্দু ভাষা গ্রহণ না করে নিজেদের মাতৃভাষাকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিল, ত্যাগ-আত্মত্যাগে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পথ ধরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ রাষ্ট্র আমরা পেয়েছি। রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হয়েছে। অথচ সর্বস্তরে বাংলা ভাষার অবাধ প্রচলনে নানাবিধ সীমাবদ্ধতা আজো দূর করা সম্ভব হয়নি।
স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পরে অত্যন্ত দুঃখ-বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করা যায় ঔপনিবেশিক এবং হিন্দি ভাষার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কবলে ক্রমেই মাতৃভাষা-সংস্কৃতি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। উর্দু ভাষার ন্যায় হিন্দি ভাষা আমাদের ওপর বলপূর্বক চাপানো হয়নি। হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটেছে প্রযুক্তির কল্যাণে, বিনে বাধায়। এবং ক্রমেই হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতি অনায়াসে ঢুকে পড়েছে আমাদের ঘরে-ঘরে। আমাদের সমষ্টিগত টিভি দর্শকরা হিন্দি সিরিয়াল-সিনেমায় সর্বাধিক আকৃষ্ট। অথচ ভারতে আমাদের দেশের একটি চ্যানেলের সম্প্রচারও কিন্তু নেই। আমাদের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিনে পয়সায়ও ভারতে সম্প্রচারের সুযোগ পায়নি। বাংলা এবং হিন্দি ভাষার সাংস্কৃতিক বিনোদনের এই বৈষম্যেই প্রতীয়মান; ভারতীয় চানক্য বুদ্ধির কৌশলতায় হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির দাপটে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি কোণঠাসা হয়ে যে পড়বে না তার নিশ্চয়তা নেই। বিশ্বায়ন নামক দৈত্য তো তৎপর রয়েছেই।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গভীর আস্থায় বলতে পেরেছেন, বাংলাদেশে হিন্দি ভাষার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা। অথচ বহুজাতি ও ভাষাভাষীর দেশ ভারতে হিন্দি ভাষা সরকারি ভাষার মর্যাদায় আসীন। হিন্দি ভাষাও কিন্তু অপরাপর প্রাদেশিক ভাষার ন্যায় আঞ্চলিক ভাষাই। হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির চাপে-দৌরাত্ম্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অহিন্দি ভাষার প্রদেশগুলোর চিড়ে-চ্যাপ্টা হওয়ার দশা। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ ভারতের চার রাজ্যের-চার ভাষাভাষী তামিল, তেলেগু, মালায়ালম, কন্নড়ভাষীরা নিজেদের মাতৃভাষার মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে, প্রবল প্রতিরোধে হিন্দি ভাষা পরিত্যাগে। যে-আমরা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক প্রবল চাপাচাপির পরও উর্দু ভাষাকে পরিত্যাগ করতে পেরেছিলাম। সেই আমরাই এখন বিনা চাপে সানন্দে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতিকে বরণ করে নিয়েছি, মাতৃভাষা-সংস্কৃতি পরিত্যাগে। এ বিষয়ে একটি গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। গল্পটি মওলানা ভাসানী বলেছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের প্রধান উদ্যোক্তা বেলাল মোহাম্মদকে। তার ‘স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’ বইতেও গল্পটি রয়েছে। গল্পটি এই রকমের : ‘একটা ছাগলকে তাড়া করেছিল একটা হিংস্র বাঘ। একজন মৌলভী তখন বাঘের হাত থেকে ছাগলটিকে রক্ষা করেছিলেন। মৌলভী ঘাস-পাতা ইত্যাদি পুষ্টিকর খাদ্য খাইয়ে ছাগলটিকে মোটা-তাজা করে তুলেছিলেন। একদিন স্বয়ং মৌলভী ছাগলটিকে জবাই করতে উদ্যত হলে ছাগলটি বলেছিল : আপনি সেদিন আমাকে বাঘের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। এখন নিজেই আমাকে জবাই করে খেতে চাচ্ছেন কেন? উত্তরে মৌলভী বলেছিলেন : বাঘ তো তোমাকে হারাম পন্থায় খেতে চেয়েছিল। আমি তো তোমাকে হালাল উপায়ে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী জবাই করেই খাব।’ গল্পটির হারাম এবং হালালের সংজ্ঞার মধ্যেই নিহিত রয়েছে আমাদের মাতৃভাষার ওপর আগ্রাসনের প্রসঙ্গটি। স্বৈরতান্ত্রিক পন্থায় উর্দু ভাষা চাপানোর বিষয়টি এবং বিনা চাপে প্রযুক্তির সাহায্যে সুদূরপ্রসারী কৌশলে হিন্দি ভাষার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিদ্যমান অবস্থাটি।

মযহারুল ইসলাম বাবলা : নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়