নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজি চালক নিহত

আগের সংবাদ

এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি

পরের সংবাদ

অনন্য সংসদের ঐতিহাসিক সূচনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইখতিয়ার উদ্দিন : যাত্রা শুরু হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদের। এই সংসদ নানা কারণে অনন্য, ঐতিহাসিক। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে। টানা চারবার সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা; সব মিলিয়ে এবার পঞ্চম মেয়াদে এই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এর মাধ্যমে নারীনেত্রী হিসেবে টানা দীর্ঘসময় ধরে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিশ্বরেকর্ড গড়লেন শেখ হাসিনা।
বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জন ও নাশকতানির্ভর আন্দোলনের মুখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হওয়া ২৯৯টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩টি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছেন। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন। স্থগিত হওয়া নওগাঁ-২ আসনে ভোট হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। এই সংসদের মতো এত বেশি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আগের কোনো সংসদে দেখা যায়নি। যদিও এদের ৫৮ জনই সংসদের প্রধান দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
এই সংসদে মাত্র ১১ জন সদস্য নিয়ে বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি; যা নিকট অতীতে দেখা যায়নি। আগের দুটি সংসদেও জাতীয় পার্টিই ছিল প্রধান বিরোধী দল। তবে সেখানে তাদের সদস্য সংখ্যা আরো বেশি ছিল। অবশ্য তেমন জোরালো ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি তাদেরও। ক্ষমতাসীন দলের বিশেষ আনুকূল্য নিয়ে সংসদে আসা জাতীয় পার্টি এবার এত কম সংখ্যক সদস্য নিয়ে কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে; তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। যদিও দলটির মহাসচিব মুজিবুল চুন্নু বলেছেন, তারা এবার ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা ঘুচিয়ে সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে চান। তবে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজেই এ বিষয়ে সন্দিহান। তার মতে, সদস্যদের সংখ্যার বিচারে বর্তমান সংসদে ভারসাম্য রক্ষা হয়নি। তিনি বলেন, আসন সংখ্যা বিচারে এবার সংসদে শতকরা ৭৫ ভাগই সরকারি দলের। স্বতন্ত্র ২১ ভাগ। তারাও প্রায় সরকারদলীয়। ৩-৪ ভাগ শুধু বিরোধী দলের। এ কারণে এই সংসদে পুরো জাতিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। এই সংসদ কখনো নিখুঁতভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে না।
জি এম কাদেরের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি শুনা যায় বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর মুখেও। গতকাল তিনি বলেন, ‘এই সংসদে নামে-বেনামে ছদ্মনামে সবাই আওয়ামী লীগ। পৃথিবীতে অদ্ভূত সরকারের অভিনব কিসিমের এই সংসদের সব সদস্যই এক দলের’।
রিজভীর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সরকারি দলের নেতারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ ও সরকার উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা- যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। গতকাল সংসদের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সফলভাবে নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক শক্তি আরো সুদৃঢ় হয়েছে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই, জনগণের রায় মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচন বর্জনকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে একটি মহল সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের শান্ত-স্নিগ্ধ যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাদের গণতন্ত্রবিরোধী ও সহিংস কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে জনগণকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখলেও গণতন্ত্রের শাণিত চেতনা ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সব পদক্ষেপ স্বার্থক হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করবে; সরকারও এক্ষেত্রে সংযত আচরণ করবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
এবারের সংসদে অনেক তরুণ নেতা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। এদের মধ্যে কনিষ্ঠতম সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম। মাত্র ২৮ বছর বয়সে যশোর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নিজের গাড়ি না থাকায় গতকাল অধিবেশনে যোগ দিতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সংসদ ভবনে এসে শুরুতেই সবার নজর কাড়েন তিনি। সংসদে এবারই প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন একাধিক তারকা। ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তাদেরই একজন। জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ফেরদৌসও এবার জনপ্রতিনিধি হয়ে সংসদে এসেছেন। বিদায়ি সরকারের এক প্রতিমন্ত্রীকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে এবার সংসদ সদস্য হয়েছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারও রয়েছে তারকাখ্যাতি। স্বাভাবিকভাবেই সংসদে তাদের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর থাকবে অনেকের।
দল ছেড়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এবার নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। আরেক বিএনপি নেতা জে কে একরামুজ্জামান দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তাদের দিকেও থাকবে কৌতূহলী চোখ। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন- এমন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আছেন চারজন। যদিও তারা সরকারঘনিষ্ঠ থেকে সংসদে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এরই মধ্যে। তাছাড়া স্বতন্ত্র লড়ে সংসদ সদস্য হওয়া ৫৮ জন আওয়ামী লীগ নেতা কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কারো কারো। কারণ গত রবিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দলের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আবদার জানিয়েছেন তারা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদে এলেও ক্ষমতাসীন দলের অবস্থানের বাইরে গিয়ে তারা সংসদে কথা বলবেন- এমন সম্ভাবনা কম।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে ডেপুটি স্পিকার সবাইকে স্বাগত জানান। এরপর নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হয়। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার হয়েছেন যথাক্রমে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। তারা দুজন একাদশ সংসদেও একই দায়িত্বে ছিলেন। পরে দ্বাদশ সংসদের সূচনা বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ সময় সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদেরসহ সরকারি ও বিরোধী দলের প্রায় সব সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়