প্রধানমন্ত্রীর তিন বিশেষ সহকারী নিয়োগ

আগের সংবাদ

অনন্য সংসদের ঐতিহাসিক সূচনা

পরের সংবাদ

চার পণ্যে শুল্ক কমানোর নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী : মন্ত্রিসভার সায় পেল দ্রুত বিচার আইন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রমজানে দাম সহনীয় রাখতে ভোজ্যতেল, খেজুর, চিনি ও চালের আমদানি শুল্ক কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। গতকালের বৈঠকে দ্রুত বিচার আইনও স্থায়ী করার অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্বাচনের পর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরবরাহ ঘাটতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে মন্ত্রীদের কাছ থেকে এটির সর্বশেষ অবস্থা জেনেছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রীরা কী কী কাজ করেছেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। রমজানে যে পণ্যগুলোর দরকার হয় বিশেষ করে খেজুর, ভোজ্যতেল, চিনি ও চাল- এ চারটি পণ্যের শুল্কহার কমানোর জন্য এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটি নিয়ে এখন তারা কাজ করছে। কী পরিমাণ শুল্ক কমানো হবে সেটি এনবিআর হিসাব করে দেখবে, যাতে দ্রব্যমূল্যের চাপটা মানুষের ওপর কম থাকে।
মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রীরা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। বেশ কিছু পণ্যের ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামী রমজান মাস বিবেচনা করে আরো যাতে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সেজন্য এই চারটি পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বাজারে যেন সরবরাহ ও চাহিদার কোনো ঘাটতি না থাকে, প্রধানমন্ত্রী সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন এলসি খোলার পরিমাণ অনেক বেশি আছে, খাদ্য মজুতের পরিমাণ অনেক বেশি আছে, এ তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরবরাহে যেন কোনো ঘাটতি না হয়, সেদিকে সমন্বিতভাবে নজরদারি করতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে মন্ত্রীরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাঠে যেভাবে কাজ চলছে সেটি চলমান রাখতে বলেছেন। সাপ্লাই যাতে কোনোভাবেই বিঘœ না হয়, সেজন্য এলসি ওপেন করে দিচ্ছেন যাতে কেউ কোনো কারসাজি করতে না পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসির সমস্যা নেই জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছরের এ সময়ে ৩৭ হাজার ১০৭ টন খেজুর আমদানির এলসি

খোলা হয়েছিল, এবার এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৭৩৪ টন এলসি খোলা হয়েছে। গত বছর একই সময় ৯৭ হাজার ২৮৭ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানির এলসি করা ছিল। এবার এক লাখ ২৫ হাজার ৩৭৪ টনের এলসি করা আছে। গত বছর ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭০ টন অপরিশোধিত চিনির এলসি করা হয়েছিল। এবার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৮ টন চিনি আমদানির এলসি করা আছে। দ্রব্যমূল্য কমাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
মেয়াদ না বাড়িয়ে স্থায়ী হচ্ছে ‘দ্রুত বিচার আইন’ : আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন)-২০২৪ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর মধ্য দিয়ে আইনটির মেয়াদ বারবার না বাড়িয়ে স্থায়ী হচ্ছে। আগে দুই বছর পরপর আইনটির মেয়াদ বাড়ানো হতো। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত নতুন মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় সভায় আইনের খসড়াটি নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ যখন প্রথম জারি করা হয়, তখন এর মেয়াদ ছিল দুই বছর। পরবর্তী সময়েও মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী ৯ এপ্রিল। মন্ত্রিসভা এটিকে স্থায়ীরূপ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন নতুন করে মেয়াদ বাড়াতে হবে না।
আইনটি স্থায়ী করার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে এই আইনটি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার কাজে লেগেছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আগে যা ছিল, সেই আইনটিই থাকবে। শুধু মেয়াদ বাড়াতে হবে না। একেবারে স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত হলো।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী কোনো অপরাধ করলে তিনি অন্তত দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনকালে সরকার বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতিসাধন করলে আদালত তা বিবেচনা করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে ওই দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আদেশ দিতে পারবেন এবং এই ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকারি দাবি হিসেবে আদায়যোগ্য হবে। সরকার গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রতিটি জেলায় এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় এক বা একাধিক দ্রুত বিচার আদালত গঠন করতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে প্রতিটি দ্রুত বিচার আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করে দিতে পারবে। সরকার বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটকে এই আদালতের বিচারক নিযুক্ত করবে। বিচারপদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, আদালত এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করবেন। বিচারকাজে ফৌজদারি কার্যবিধির পদ্ধতি, যত দূর প্রযোজ্য হয়, তা অনুসরণ করবেন। এছাড়া এই আইনের অধীন কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি হাতেনাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে বা অন্য কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে ধরা হয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলে, পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক রিপোর্টসহ তাকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করবে। পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে অপরাধ সম্পর্কে আদালতে অভিযোগ পেশ করবে এবং আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে ওই রিপোর্ট বা অভিযোগ পাওয়ার তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি হাতেনাতে ধরা না পড়লে, অপরাধ সংঘটনের পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ধারা ৯(২) এর অধীন অভিযোগ দাখিল করতে হবে। এই অভিযোগ দায়েরের পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে (ধারা ১১ এর বিধান সাপেক্ষে) আদালত বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন। এছাড়া এই আইনের অধীন {(৪) উপধারা (২) ও (৩) এ যা কিছুই থাকুক না কেন} কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ধরা না হয়ে (উপধারা (২) এ উল্লিখিতভাবে) অন্য কোনোভাবে ধরা হলে বা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে, এই অপরাধের বিষয়ে, যত দ্রুত সম্ভব, রিপোর্ট বা অভিযোগ দাখিল করতে হবে। এবং আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে অভিযোগ পাওয়ার তারিখ হতে ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন।
এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি আইন-২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে যেসব আইনের খসড়া জাতীয় সংসদে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ায় পাস হয়নি, সেগুলো এখন নতুন করে মন্ত্রিসভায় আবার অনুমোদন নিতে হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়