যাত্রাবাড়ীতে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

ব্যাংক খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেকর্ড তারল্য সহায়তা

পরের সংবাদ

খাদ্যই কি আমাদের মূল সমস্যা?

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

না, হয়তো হ্যাঁ। কেবল খাদ্য উৎপাদন, বিতরণ আর প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং ন্যায্যমূল্যে তা বিক্রি করা, যাতে খাদ্যের সরবরাহ সংকট না থাকে এবং তা সাধারণের কেনার সামর্থ্যরে মধ্যে থাকে- সেটাই তো নিশ্চিত করে সরকার ও তার শাখা-প্রশাখাময় প্রশাসনের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়নকারীরা।
নগরে, মহানগরে এবং বিভাগীয় জেলা শহরগুলোতে খাদ্যশস্যের সরবরাহ যতটা দেখা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি আছে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব গোডাউনে। এটা আমরা জানি। তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যারা সত্যটা উপস্থিত করে, সেগুলো ধরে এগোলেই বেরিয়ে আসে প্রকৃত সত্যচিত্র। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ওই সব গবেষণার তোয়াক্কা করেন না। তারা বলেন, আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামেই তা বিক্রি করব। খুচরা ব্যবসায়ী থেকে আড়তদার পর্যন্ত সবারই একই বাণী আমরা শুনতে পাই। কিন্তু ভোক্তা-ক্রেতাদের কষ্টের ধ্বনি তাদের কানে পৌঁছায় না। সরকারি তরফের লোকেরা ব্যবসায়ীদের দাবি নিয়ে যতটা উৎসাহী এবং তৎপর, ঠিক তার উল্টোটা জনগণ নিয়ে তাদের ভাবনা শূন্য চেহারা আমরা দেখি।
এবং স্পর্শকাতর পণ্য খাদ্যশস্য নিয়ে আমাদের যতটা দুর্ভাবনা, সহযোগী পণ্যের দাম নিয়ে যতটা বিচলিত, ততটা নেই স্বাস্থ্যসেবা খাতের এসেনসিয়াল ওষুধ নিয়ে। ওষুধ কি খাদ্য তালিকার অন্তর্গত? কে জানে? অথচ এসেনসিয়াল ফুড আরে ওষুধের মধ্যে যে ফারাকটুকু আছে, সেখানে গণমানুষেরই বসবাস। ওষুধের দাম যে মাসে মাসে কিংবা ৬ মাসে একবার করে বাড়ানোর রেওয়াজ চলছে, তা নিয়ে নেতাদের কোনো রাজনৈতিক বাণী আমরা মাঠের বক্তৃতায় পাই না। এমনকি তা নিয়ে আমাদেরও তেমন কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে করি না। রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্তম্ভ ঘোষণায় তথাকথিত চতুর্থ স্তম্ভ বলে চিহ্নিত করলেও গণমাধ্যম’ এখন সেই দায়িত্ব কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়েছে। কারণ গণমাধ্যমগুলো এখন আর সরকারের মতো ক্ষমতা চায় না, কষ্ট স্বীকার করতে রাজি নয়। গণমাধ্যমের মালিক ও সাংবাদিকরা এখন সরকারের লেজুড় হতে বেশি উৎসাহী। আসুন, আমরা একটি রিপোর্টের খণ্ডাংশ পড়ে আসি, তাহলে অনুমান করতে পারব স্বাস্থ্যসেবা কতটা বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছে, আর কতটা সেবায় নিয়োজিত।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশাহারা হলেও ওষুধের দাম ফের বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়াতে তৎপর ঔষধ শিল্প সমিতি। তারা বলছে, ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর হওয়ায় ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে ওষুধ উৎপাদনে। তাই দাম সমন্বয় জরুরি।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের দাম গত বছর অযৌক্তিকভাবে অনেক বাড়ানো হয়েছে। আবারো দাম বাড়লে চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংকট তৈরি হবে। বিপাকে পড়বে সাধারণ মানুষ। অনেক রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারবেন না। সরকারের তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতায় নকল, ভেজাল আর নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে বিরূপ প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যের ওপর।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে ওষুধের দাম বাড়ানোর দাবি তোলেন ঔষধ শিল্প সমিতির নেতারা। প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দাম বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিশ্রæতি দেন সালমান এফ রহমান। কোন কোম্পানির ওষুধের দাম কত শতাংশ বাড়াবেন, সে বিষয়ে একটি সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত করেছেন ব্যবসায়ীরা। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হবে এ তালিকা। (সমকাল/২৫ জানুয়ারি, ২০২৪)
এটুকু রিপোর্ট পড়ে আমাদের কী মনে হলো? এটা যে একটি পাতানো দেখা-সাক্ষাৎ আর প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কানে তুলে দিয়ে সালমান এফ রহমানই দাম বাড়ানোর কথা জানিয়ে দিলেন। এবং এই দেখা-সাক্ষাতের সৌজন্যতার আড়ালে যে আগেই কোনো কোম্পানির কত শতাংশ দাম বাড়ানো হবে তার একটি সম্ভাব্য তালিকাও ঔষধ শিল্প সমিতির নেতারা তৈরি করেই গিয়েছিলেন সালমান এফ রহমানের কাছে। আপনারা তো জানেন, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ঔষধ শিল্পের মালিক। তার কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের সুনাম আছে দেশে ও বিদেশে, আছে চাহিদাও। স্কয়ার, ইনসেপ্টা, এসিআই, একমিসহ বড় সব কোম্পানিই এই দাম বাড়ানোর উদ্যোগের সঙ্গে আছে। আছে মাঝারি ও ছোট ওষুধ উৎপাদকরাও। অর্থাৎ ওষুধ সমিতির নেতারা বেশ সংঘবদ্ধ। এ রকমটা আমরা দেখে চলেছি প্রায় ৫০ বছর ধরেই, সব রকম পণ্য উৎপাদক সমিতির কথাবার্তায়, আচার-আচরণে। এমনকি যারা বিদেশ থেকে পেঁয়াজ-কাঁচামরিচ এনে বিক্রি করেন তারাও সংঘবদ্ধ। একেই কি বলে সিন্ডিকেট? ব্রয়লার মুরগি ও ব্রয়লার মুরগির খাদ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও এই সংঘবদ্ধতা আমরা দেখে চলেছি।
একমাত্র ক্রেতা-জনগণ বা ভোক্তাদের মধ্যে নেই কোনো সংঘপ্রেম-পিরিতি, সংঘবদ্ধতা। তারা সবাই ইন্ডিভিজুয়াল, কিছু বিক্রির ক্ষেত্রে এবং কিছু কেনার ক্ষেত্রেও। জনগণের কোনো সমিতি নেই। কিন্তু তারা রাজনৈতিক দলগুলো সদস্য, তবে সবাই নয়। তবে রাজনৈতিক দলের সদস্য না হলেও সমর্থনের বিষয়টি অনেকটাই পাকা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনে থাকা বিএনপিরই সমর্থক ও সদস্য সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কখনোই জোরালো নয়। এক বছর ধরে বিএনপি অহিংস মিছিল মিটিং করে সরকারের দায় কর্তব্য ও ব্যর্থতা নিয়ে জোর গলায় এর সমাধান চাইছে। কিন্তু সরকারের কানে সেই প্রতিবাদ পৌঁছালেও তারা একে বিএনপির ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিচ্ছিল। শাসক দল ও তার অনুসারীরাও যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে অনেকটাই হতবাক, তারপরও তারা সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে রাজপথে, প্রতিবাদের পতাকা তোলেনি। এর কারণ কী? আমার মনে হয়েছে- তারা কিছু রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে আর্থিক কাজ পেয়ে খুশি। তারা নিজ দলের সরকারের ব্যর্থতাকে নিজেদের ব্যর্থতা বলেও মনে করে না। ফলে ওই আত্মপ্রতারিত দলীয় লোকেরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পথে নামে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যকে তারা আমলে নেয় না। ভাবেন, তাতে সরকারের ইমেজ খারাপ হবে। প্রান্তিক উন্নয়ন কাজে আওয়ামী সদস্যদের এমন কেউ বাদ নেই যে যারা বিনা লাইসেন্সেও স্থানীয় সরকারের রাস্তাঘাট সংস্কার, উন্নয়নের কাজ পায়নি। তারা কাজ না করেও বা তার লাভ রেখে সাব-কন্ট্রাকের কাজ করেও লাভবান হয়েছে। এভাবে প্রান্তিক আওয়ামী কর্মীদের লালন করা হয়েছে ১৫ বছর ধরে। এতে করে একটি বড় অংশ আওয়ামী সরকারের বিরোধিতায় যোগ দেয়নি। এই রাজনৈতিক সংঘ দেশের সার্বিক মানুষের জন্য কল্যাণকে নিশ্চিত করেনি। বরং জনগণের অধিকার হরণ করতে সাহায্য করেছে। জনগণের মধ্যে যদি পেঁয়াজ কেনার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট গড়ে উঠত, যদি ১৫ দিন পেঁয়াজ না কিনে চুপচাপ বসে থাকত, ডিম, গোলআলু, মাছ মাংস কেনার ক্ষেত্রেও যদি বিরতি দেয়ার একটি যৌথ সিন্ডিকেট থাকত, তাহলে ওই সব পণ্যের ব্যবসায়ী লস টেনে বুঝতে পারত তারা চরম অন্যায় করছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এটা বোঝেন না, তারা হতদরিদ্র মানুষের পকেট থেকে বাড়তি টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে দাম বাড়িয়ে, তার লোভের পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে, যা চরম অন্যায় ও অপরাধের শামিল। ন্যায় আর অন্যায় কি তা বোঝার মতো ক্ষমতা যেন সরকারের নীতিনির্ধারকদের নেই।
ঔষধ শিল্পেও তার কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। খাদ্য ব্যবসায়ী যখন খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান, তখন এটা আমরা বুঝতে পারি, আর যাই হোক খাদ্যের দাম কখনোই কমবে না। এ বছর ৪ কোটি ১৬ লাখ টন খাদ্য উৎপাদিত হওয়ার পরও যখন ৮৬ লাখ টন খাদ্য আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার, তখন ওই শ্রেণির খাদ্য আমদানিকারকদের লাভকে পোক্ত করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে মনে হয়।
ওষুধকেও যদি ধান-চালের মতোই খাদ্য বিবেচনা করা হয়, তাহলে তো ৬ মাস পরপর দাম বাড়ানোর প্রয়োজনই পড়ে না। আর ওষুধ যদি হয় সেবাপণ্য, তাহলে যে নীতি ও আদর্শের কথা বলি আমরা সেই পথেই যেতে হবে। ডাক্তারি পেশায় যারা জড়িত, তারা যেমন জনগণের টাকার একটি বড় ভর্তুকি পেয়েই লেখাপড়া করে, তেমনি তারা এটাই জানেন যে জনসেবাই তাদের প্রধান কর্তব্য ও উদ্দেশ্য। কিন্তু আজ সেই সেবা হয়ে গেছে ব্যবসার মতোই। কোনো ভালো ডাক্তার পেশায় সুনাম অর্জন করলেই তার রোগী দেখার ফি বেড়ে যায়। আবার ওই সব ডাক্তার অলিখিতভাবে নামি ও অনামি ওষুধ কোম্পানির এজেন্ট হয়ে যান। তারা রোগীদের চিকিৎসায় ওই সব কোম্পানির ওষুধই ব্যবস্থাপত্রে লেখেন। এভাবেই গড়ে উঠেছে একটি কোম্পানির সঙ্গে ডাক্তারদের সিন্ডিকেট। এই রকম একটি ডাক্তার-ওষুধ কোম্পানির সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হয়েছিল জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের আমলে। এমবিবিএস পাস ডাক্তাররা রোগীপ্রতি ফি নিতে পারতেন ১০ টাকা। অধ্যাপক স্তরের ডাক্তার নিতে পারতেন ২০ টাকা, অ্যাসোসিয়েট স্তরের অধ্যাপকরা পেতেন ১৫ টাকা ফি। তখন একটি স্বস্তির রূপ আমরা দেখেছি চিকিৎসাপ্রার্থীদের মুখে-চোখে।
এখন একজন অ্যাসোসিয়েট লেভেলের চিকিৎসক ভিজিট নেন ৮০০ টাকা। প্রফেসর লেভেলের চিকিৎসক পান ১ হাজার টাকা। রোগীরা ওই টাকা তো দেনই একবার, তার সঙ্গে বিপুল অঙ্কের টেস্ট ধরিয়ে দেন ডাক্তাররা।
সঙ্গে দেন অমুক ল্যাব থেকে করে আনুন। আবার এ রকমও আছে যেখান থেকেই টেস্ট করানো হোক না কেন, ল্যাব মালিকরা ওই ডাক্তারের অ্যাকাউন্টে তার কমিশন রেখে দেন বা পাঠিয়ে দেন। এটাও এক দীর্ঘজীবী সিন্ডিকেট। কেউ এর প্রতিবাদ করে না।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কাঁচামালের দাম গড়ে কিছু বেড়েছে। আবার বেশ কিছু ওষুধের কাঁচামালের দাম কমেছে। তবে সেসব ওষুধের দাম কমতে দেখা যায়নি। প্যারাসিটামল তৈরিতে কাঁচামাল কেজিপ্রতি ৯০০ থেকে কমে ৭০০ টাকা করা হলেও এর দাম কমেনি। এছাড়া ওষুধ কোম্পানিগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রে যে জটিলতার কথা উল্লেখ করছে, আসলে ততটা সংকট নেই।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে দেড় হাজারের বেশি এসেনসিয়াল ড্রাগের (জীবনরক্ষাকারী ওষুধ) ২৭ হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে ২১৯টি। এগুলোর মধ্যে ১১৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। অন্য সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বছরজুড়ে চলে। তবে গত বছর ডলার সংকটের যুক্তি দেখিয়ে একসঙ্গে অনেক কোম্পানি ওষুধের দাম বাড়াতে আবেদন করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম ৫০ থেকে শতভাগ বাড়ানো হয়। আর ৪০ টাকার অ্যামোক্সিলিনের দাম বাড়িয়ে করা হয় ৭০ টাকা এবং ২৪ টাকার ইনজেকশনের দাম ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া মেট্রোনিডাজল, অ্যামোক্সিলিন, ডায়াজিপাম, ফেনোবারবিটাল, এসপিরিন, ফেনোক্সিমিথাইল পেনিসিলিন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জেনেরিকের ওষুধের দাম বাড়ানো হয় ১৩-৭৫ শতাংশ।
সে সময়ও ওষুধের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এদিকে যেসব ওষুধের দাম কোম্পানিগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করে, সে ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়িয়ে বাজারে শৃঙ্খলা আনার দাবি দীর্ঘদিনের।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে প্রতি বছর দেশে ৮৬ লাখ মানুষ আর্থিক সমস্যায় পড়েন। ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ১৬ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নেয়া থেকে বিরত থাকেন।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, নতুন করে ওষুধের দাম সমন্বয় না হলে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ডলারের দাম দীর্ঘদিন ছিল ৮৪ টাকা, এখন ১৩০ টাকা। বর্তমানে প্রয়োজন অনুযায়ী এলসি করা যায় না। নতুন সরকারকে দাম বাড়াতে বললে সরকার আমাদের ওপর চাপ দেবে, আবার বাজারে ওষুধ পাওয়া না গেলেও চাপ দেবে। তিনি আরো বলেন, ‘৬ মাস ধরে ডলারের দাম বেশি। বেশি দাম দিয়ে কাঁচামাল আনতে হচ্ছে। আমাদের অনেক বিপদ। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যস্ততা কমলে আমরা তাঁর কাছে যাব। (সমকাল/জানুয়ারি ২৪/২৪)
এই অংশটুকু পাঠ করলেই ঔষধ শিল্পের বিষয়টি জানা ও বোঝা যাবে। অনেক ওষুধের কাঁচামালের দাম কমেছে, কিন্তু উৎপাদক কোম্পানি সেসব ওষুধের দাম কমায়নি। এই যে অন্যায় ও অপরাধ এবং তা দেখে, জেনেও তা মেনে নিয়েছে ওষুধ প্রশাসন, তাদের এই গাফিলতি ও মানসিকভাবে দুর্নীতিপরায়নতা অপরাধের শামিল। লাভ কম করার কোনো মানসিকতাই ওষুধ কোম্পানিগুলোর নেই। সেটা অন্যান্য খাদ্যপণ্য উৎপাদকদেরও নেই। নেই খাদ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেই রাজনৈতিক আদর্শের ব্যক্তির মধ্যে, নেই ন্যায় ও কল্যাণবোধে জাগ্রত ধর্ম মানা রিচুয়ালি পালনকারী ধার্মিকদের মধ্যেও। আমরা মানসিকভাবে অন্যায় আর অপরাধপ্রবণ জাতিতে পরিণত হয়েছি। ফলে ওষুধসহ সব রকম কোম্পানি অবৈধ পথ ঘুষের একটি সেতু তৈরি করেছে। তার জন্য তারা কাঁচামালের দাম কমার পরও কমানোর উদ্যোগ নেয়নি।
এই অবস্থা কেবল ঔষধ শিল্পেই বিরাজিত নয়, দেশের প্রতিটি সেক্টরে এই দুর্নীতি চর্মরোগের মতোই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। একটি জায়গায় রোগের মলম লাগিয়ে কোনো ফল হবে না। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত, সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ-প্রয়াস।

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়