সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

নেতৃত্বে শীর্ষে সংখ্যায় কম

পরের সংবাদ

ব্যাংক খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেকর্ড তারল্য সহায়তা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের আর্থিক বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোকে রেকর্ড ১৩ দশমিক ০৮ লাখ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা সাড়ে ৭ গুণের মতো বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেয়া হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত নথি অনুসারে, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের আঁটসাঁট অবস্থার কারণেই নজিরবিহীন মাত্রায় এ সহায়তা দেয়ার প্রয়োজন হয়েছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর ডলার সংকটের চাপ কমাতে, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে। তবে এ পদক্ষেপে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কিছুটা পূরণ হলেও এতে ব্যাংকগুলোর স্থানীয় মুদ্রার (টাকা) তারল্য একই সঙ্গে সংকুচিত হয়েছে। এজন্যই তাদের বিপুল তারল্য সহায়তা দিতে হয়েছে। যার মধ্যে রেপোর মাধ্যমে ৬ লাখ ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর অ্যাসিউরড লিক্যুইডিটি সাপোর্ট (বা এএলএস) এর মাধ্যমে প্রাথমিক ডিলার ব্যাংকগুলোকে দেয়া হয়েছে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। তারল্য সহায়তার তুলনামূলক একটি পর্যালোচনায় তা ব্যাপকভাবে বাড়ার চিত্র উঠে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ দুটি চ্যানেলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এত বেশি ধার করে না। ২০২০ সালে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়ার কারণে এই প্রভাব পড়েছে বলে আমার ধারণা। স্বল্প সুদের কারণে ব্যাংকে আমানত রাখার আগ্রহ হারিয়েছিলেন সাধারণ গ্রাহক। ফলে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে টাকা ধার করতে হয়েছে। এছাড়া গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মার্কেট থেকে টাকা উঠে এসেছিল। বিক্রেতা হিসেবে, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি সিকিউরিটিজ (ট্রেজারি বিল ও বন্ড) ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে নিলামের মাধ্যমেও বিক্রি করে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এএলএস ও রেপোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া সহায়তা আগের অর্থবছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের আঁটসাঁট সরবরাহ পরিস্থিতি এ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাজারে ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সমর্থন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি তাদের টাকায় তারল্যে সংকোচনমূলক প্রভাব ফেলে থাকতে পারে, যেকারণে রেপোতে ধারের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়ে। রেপো হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ধার দেয়ার উপায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে থাকা সিকিউরিটিজের বিপরীতে ধার দিয়ে থাকে।
যেসব কারণে ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়ছে : বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে ব্যাংকগুলোর ধার নেয়ার অন্যতম উৎস। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ডলারের প্রয়োজন আমদানি দায় মেটাতে। সে সময়ে, ব্যাংকগুলো প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কেনায় তাদের তারল্যের সংকট দেখা দেয়। এই কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কাটাতে ব্যাপক পরিমাণে রেপো ও এএলএস এর মধ্যেও টাকার ফান্ড সাপোর্ট দেয়া হয়।
গত তিন বছরে ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ক্রমাগত ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং চলতি অর্থবছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি করেছে ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। মূলত, খাদ্য, সার ও জ¦ালানিসহ ৫ থেকে ৬ ধরনের পণ্য আমদানির দায় মেটাতে এসব ডলার বিক্রি করা হয়।
এদিকে গত ১৭ জানুয়ারি নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যাংকে তারল্য সংকটের প্রধান কারণ ডলারের স্বল্পতা। গত তিন বছরে ব্যাংকগুলোর কাছে ২৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যার মাধ্যমে ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। কিন্তু একই পরিমাণ টাকা বাজারে ঢোকানো হয়নি, যে কারণে তারল্য সংকট তৈরি হয়।
তাছাড়া গত বছরের আগস্টেই সরকারকে অর্থায়নের জন্য টাকা তৈরি করা বন্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সরকারকে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ করতে হচ্ছে, যা তারল্যের ওপর চাপ তৈরি করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে দেখা যায়, গত ১১ বছরের মধ্যে ব্যাংক খাতের আমানতে সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০২২ সালে। ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১ সালেও ১০ শতাংশ হারে আমানত বেড়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের মধ্যে আমানতের প্রবৃদ্ধি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদিও ২০১৩ সালে আমানতে ১৬ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং তার আগের বছর ২০ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়