সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্প বাদ দিতে নোটিস

আগের সংবাদ

লাল-সবুজ পতাকা হাতে সমাবেশ করবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

রাজপথে ফের শক্তির মহড়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : নির্বাচন ও সরকার গঠনের ডামাঢোল পেরিয়ে ফের রাজপথে প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দুই দল। আড়াই মাস পর শক্তির মহড়া দেখাতে আজ শনিবার পৃথক পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে ব্যাপক শোডাউন করতে চায় টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। সমাবেশে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রকল্প বাস্তবায়নে দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি পূরণসহ উন্নয়নের বার্তা তুলে ধরা হবে। অন্যদিকে দেড় যুগ ক্ষমতায় না থাকা ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় হতাশায় নিমজ্জিত নেতাকর্মীদের চাঙা করতেই বিএনপির কালো পতাকা মিছিল। বড় জমায়েত ঘটাতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বিএনপি নেতারা। নিজেদের কর্মসূচি সফল করতে একাধিক বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগও। তবে দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে রাজনৈতিক টানাপড়েন নিয়ে আলোচনা থাকলেও সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মাঠের রাজনীতিতে এটি স্বাভাবিক ঘটনাপ্রবাহ। রাজনীতিবিদরা সুষ্ঠু রাজনীতির ধারাবাহিকতার স্বার্থেই ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি বর্জন করবেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ শনিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে হবে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। অন্যদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকাসহ মহানগরগুলোতে কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামের প্রতিবাদ, কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তি, সংসদ বাতিল ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিল বের করবে দলটি। এছাড়া গতকাল শুক্রবার সারাদেশে জেলা পর্যায়ে কালো পতাকা মিছিল করে তারা।
৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন শেষে দুই দলের এই প্রথম কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি ছিল। ওইদিন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনসহ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির মহাসমাবেশের কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ বিশাল শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করেছে। তবে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির ওই মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক নাশকতা, সন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াও হয়। প্রধান বিচারপতির বাসভবন এবং পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়। হামলায় একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। বিএনপির মহাসামবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এরপর থেকে কয়েক দফা হরতাল-অবরোধ ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেও ব্যাপক সেভাবে আর মাঠে নামতে পারেনি বিএনপি। বরং বিএনপির বর্জনের পরও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় আওয়ামী লীগে স্বস্তি ফিরে আসে। টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন শেখ হাসিনার সরকার শুরুতে পশ্চিমাদের অবস্থান নিয়ে খানিকটা অনিশ্চয়তায় থাকারও স্বল্প সময়ের মধ্যে তা কাটিয়ে উঠে। শেষমেশ পশ্চিমারাও নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঝালাই করে নেয়। আর আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয় বিএনপি। তবে সময়ের ব্যবধানে সেই হাতাশা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন দলটির নেতারা। আজকের কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি সেই চেষ্টারই অংশ। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির এই কর্মসূচিকে দল ও সরকারের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
শোডাউনে উন্নয়নের বার্তা দেবে আওয়ামী লীগ : আজ রাজধানীতে বড় শোডাউন করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কোনো বিজয় মিছিল হয়নি। আজকের সমাবেশকে দলের বিজয় মিছিল হিসেবেই দেখছেন মহানগরের নেতাকর্মীরা। ব্যাপক শোডাউনের জন্য মহানগরের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। উপস্থিত থাকবেন দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। এছাড়া মহানগরীর

সরকারদলীয় এমপি ও জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দেখাবেন। সমাবেশে বিএনপির কালো পতাকা মিছিলকে ঘিরে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে মহানগরের সর্বত্র সতর্ক অবস্থানে রাখা হবে নেতাকর্মীকে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি এখন বিদেশিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দেশের অভ্যন্তরে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা করছে। তাদের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে তারা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। এজন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, আন্দোলন ও নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ বিএনপি এবং তার জোট এখনো সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এ জন্যই বিএনপি কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারি দল হিসেবে জনগণের নিরাপত্তায় মাঠে আছে আওয়ামী লীগ। কোনো সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়া মাত্রই তা মোকাবিলায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন।
মনোবল চাঙা করাই বিএনপির উদ্দেশ্য : বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মুখে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ভোটের আগে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে মাসখানেক বিএনপি ও তার মিত্ররা লিফলেট বিতরণ করেছে। নির্বাচনের পর কিছুদিন বিএনপির লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখলেও এসব কর্মসূচি কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি। আর বিএনপির এমন কর্মসূচিকে আমলেও নেয়নি সরকারপক্ষ। বরং টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় এসে বহির্বিশ্বের অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশের পদক্ষেপ হিসেবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করা ও নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মকৌশল বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একদিকে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন সাফল্য আর অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা, সংগঠনে বিশৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ায় হতাশ বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল। এসব আন্দোলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীর মনোবল চাঙা করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে তাদের মিত্ররাও। কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন নেতারা। প্রতিটি ইউনিট নেতাকর্মীকে পৃথকভাবে দেয়া হয়েছে দিকনির্দেশনা। এই কর্মসূচি পালনে অনুমতি মিলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, শনিবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিল করার বিষয় জানিয়ে প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলেন তারা। তিনি জানান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী দলের পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাকে পুলিশ বলেছেন, ‘করেন’।
এদিকে বিএনপি যে কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে তাতে হামলার হুমকি এসেছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি দিয়েছি। কিন্তু হুমকি এসেছে যে কালো পতাকা মিছিল করলে নাকি ২৮ অক্টোবর যেভাবে আক্রমণ করেছে সেভাবে করবে। তবে এখন কথা বলার সময় নয়। এখন আমাদের প্রতিবাদ করার সময়। আমরা ১৫ মাস ধরে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছি। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছি। কোনো সহিংস রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাসী নয়। আমরা নাব্য বাকশাল তথা বাকশাল-২ এর পদ্ধতির মূলোৎপাটন করতে চাই।
সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখছেন না বিশ্লেষকরা : বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অতীতের মতো বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখছেন না বিশ্লেষকরা। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, মাঠের রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী দল মুখোমুখি থাকবে, এটি স্বাভাবিক। তবে বড় ধরনের কোনো সংঘাতের আশঙ্কা নেই। নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র কয়েকদিন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এছাড়া এই মুহূর্তে দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি; যে জন্য মাঠের বিরোধী দলকে শক্তিশালী আন্দোলন করতে হবে। অন্যদিকে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার মতো সাংগঠনিক শক্তিও বিএনপির নেই।
ঢাকা মেট্টোপলিটন কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, বিএনপিকে স্বল্প পরিসরে মিছিল করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে আইনের ব্যত্যয় ঘটালে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়