যাত্রী কল্যাণ সমিতি : লক্করঝক্কর বাস উচ্ছেদ করে ৫ হাজার উন্নত বাস নামান

আগের সংবাদ

সমন্বয়হীনতার খেসারত : দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভিন্ন অবস্থানে আটকে আছে তিন শ্রেণির পাঠ্যবই লেখার কাজ > নতুন শিক্ষাক্রম

পরের সংবাদ

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ঠুনকো অজুহাতে দফায় দফায় বাড়াচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। বিপাকে সীমিত আয়ের মানুষ। নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। এবার আসছে কার্যকর পদক্ষেপ। সুনির্দিষ্টভাবে সিন্ডিকেটদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে অসাধু ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিল ও ব্যবসার ছাড়পত্র বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার কথাও বলা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাম বাড়ার লাগাম টানতে গতকাল রবিবার এক জরুরি সভায় বসেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব কথা জানান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এ জরুরি সভা শুরু হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, রমজানে যেসব পণ্যের প্রয়োজন হয় দেশে সেসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। রমজানের সুযোগ নিয়ে কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, রমজান আসছে। রজমানের সময় যেসব পণ্যের প্রয়োজন হয়, সেগুলো নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কোনো কোনো মহল চেষ্টা করে কীভাবে সুযোগ নিয়ে বাজার অস্থির করা যায়। আমরা মনে করি, চিন্তার কোনো কারণ নেই। দরকার হলে আমরা অনেক কঠোর পদক্ষেপের দিকে চলে যাব। দরকার হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের দিকে যাব, কাউকে ছাড় দেব না। 
এখনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, না, এখনো হয়নি। তাহলে জরুরি বৈঠকের কারণ কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের পর সবাই বলছে- কী করছেন, কী করলেন? আমরা কাজ করছি। বাজার তদারকির টার্গেট শুধু রমজান ঘিরে কিনা জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, শুধু রমজান নয়, রমজান নিয়ে চিন্তা আছে মানুষের মধ্যে, সেজন্যই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চালের দাম বাড়ানোর পর সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে, এটি জানানোর পর অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আলোচনা করছি, দেখছি। দেখেন আপনারা। ইতোমধ্যে দাম কমেছে। বাজারে মনোপলি হচ্ছে, সেখানে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন- এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি। আমদানিকে প্রাধান্য দেবেন কিনা- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, দরকার হলে আমদানি করতে হবে, এখনো এরকম কিছু হয়নি। আবুল হাসান আরো বলেন, ডলার সংকট মোকাবিলায় মাল্টি কারেন্সি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারি খাত সংকটের মধ্যে আছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা কি চলতে পারছে, আপনি কী মনে করেন? এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট খাত তো প্রাইভেট খাতই। সরকার প্রণোদনা ছাড়া; আর মাল্টিপুল অ্যাপ্রোচেস ছাড়া অন্য কিছু করা যায় না। তবে ব্রড সেক্টরসগুলো

তো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। 
মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পাঁচ মন্ত্রণালয় বা আন্তঃমন্ত্রণালয় একত্রে বসেছে অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার হচ্ছে- এ দেশের মানুষের নিত্যদ্রব্যাদি তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং তাদের জন্য যেন সহজলভ্য হয় সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া। তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারসাজিতে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। কিন্তু এই ব্যত্যয় যেন না ঘটে এবং সেই বিষয়ে যেন আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি- সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। সব ধরনের পরিসংখ্যান আছে। সেখান থেকেই জানা গেছে, পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী আছে, কিছু মতলববাজ যারা কারসাজি করে- সেই মতলববাজ শ্রেণির দ্বারা সংঘটিত কৃত্রিম সংকটের কারণে আমরা মাঝে মধ্যেই বিপদে পড়ি। সুতরাং আমরা আজ থেকে আশ্বস্ত করতে পারি- আমরা কঠিনভাবে বিষয়গুলো দেখছি এবং আমরা আশা করি শিগগিরই আমাদের লক্ষে পৌঁছাতে পারব। আব্দুর রহমান বলেন, পূর্ণাঙ্গভাবে সিন্ডিকেটের শেকড় চিহ্নিত করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। আমরা সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যখন সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যাবে; তখনই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে, ব্যবসাবাণিজ্যের ছাড়পত্র বাতিল করা হবে।
কিসের ভিত্তিতে আপনারা বলছেন রমজানের পণ্যের সংকট নেই? এমন প্রশ্নের উত্তরে আব্দুর রহমান বলেন, সব পরিসংখ্যান আছে, কোনো কিছুতে ঘাটতি নেই। কৌশলগত কারণে সেই পরিসংখ্যানের বিস্তারিত দিতে চাই না। অনুমাননির্ভর এক জিনিস, সন্দেহ করা এক জিনিস, সন্দেহের তালিকা এক জিনিস, সেটিকে সুস্পষ্ট করা আরেক জিনিস। সেই সুস্পষ্টকরণ সম্পন্ন হলেই চিহ্নিত করা যাবে কারা এর সঙ্গে জড়িত। এজন্য একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
ডলার সংকট নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, রজমানের যেসব পণ্য আমদানি করি গত বছরের জুলাই থেকে জানুযারি পর্যন্ত ৮টি পণ্যের যত এলসি হয়েছিল, এবার তার থেকে ১০-১৫ শতাংশ বেশি এলসি হয়েছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার তথ্য ঠিক নয়। পণ্যগুলো সময়মতো দেশে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করছি। কোনো মধ্যসত্ত্বভোগী সমস্যা না করেলে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। পণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়