শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ মহাসচিবের অভিনন্দন

আগের সংবাদ

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

পরের সংবাদ

উপজেলা নির্বাচনের আগেই বিবাদ মেটাতে চায় আ.লীগ : ভোটের কোন্দল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে নৌকা ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সারাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগেই এই গৃহবিবাদ মেটাতে চায় দলটি। এরই মধ্যে সারাদেশের তৃণমূণ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। জেলা-উপজেলা সফর করবেন নেতারা। তৃণমূলে সব ভেদাভেদ মিটিয়ে ঐক্য সৃষ্টি করাই এখন মূল টার্গেট দলটির। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরে তৃণমূলে সৃষ্ট সংকট দূর করা সম্ভব।
গত সোমবার দলের জরুরি যৌথসভা ডাকে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দলের গৃহবিবাদের কথা বিস্তারিত আলোচনা হয়। কীভাবে দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন দলটির নেতারা। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হয়, তৃণমূলে সৃষ্ট সংকট কাটাতে সারাদেশ সফর করবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দল। খুব শিগগির এই সফর শুরু করবেন দলটির নেতারা। ওইদিন বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কৌশলের অংশ হিসেবে। জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, এখন ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। কোথাও সহিংসতা হলে দায়ী ব্যক্তিদের ছাড় দেয়া হবে না। এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের সারাদেশের জেলায়-উপজেলায় সফরের কথা বলেন তিনি। সফরের সময়সূচি ও কারা কোন জেলায় যাবেন, তা পরে ঠিক করা হবে বলেও জানান কাদের।
নির্বাচনের পর থেকে যেসব এলাকায় নৌকাকে হারিয়ে স্বতন্ত্র কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হারিয়ে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, সেসব এলাকায় বিজয়ী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘরেও হামলার করছেন। কেউ কেউ কারচুপি করে হারানোর অভিযোগও করেছেন গণমাধ্যমে। কোনো কোনো এলাকায় নৌকার পরাজয়ের পেছনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারচুপি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেদের হারানোর পেছনে নৌকার প্রার্থীর হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। নির্বাচনের পর নিজেদের

মধ্যে সহিংসতার ফলে সারাদেশে ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগরই কর্মী-সমর্থক। এমনকি একে অপরের ওপর হামলা, মামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। আর এসব কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচন কড়া নাড়তে শুরু করেছে দরজায়। দলীয় প্রতীকেই অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। এবারো বিএনপির এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা কম। তাই জাতীয় নির্বাচনের পর সৃষ্ট গৃহবিবাদ না মেটানো গেলে, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সমস্যা আরো প্রকট হতে পারে, যা দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে- যা ভাবাচ্ছে আওয়ামী লীগকে। আর সেই ভাবনা থেকেই তৃণমূল সফর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
গত ১৫ জানুয়ারি দলের এক যৌথসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচন ঠেকাতে অনেক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ছিল। তা মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচনটা করেছি। সব আসনেই আমরা মনোনয়ন দিয়েছি, আর আমাদের বড় দল অনেকেই নির্বাচন করেছে। তাছাড়া সবাই যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সেজন্য নির্বাচনটাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। নির্বাচনে কেউ জয়ী হয়েছে কেউ জয়ী হতে পারেনি। সেক্ষেত্রে আমি অনুরোধ করব, একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কী দোষ ছিল খুঁজে বের করা- এগুলো বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে কেউ জিততে পেরেছে কেউ পারেনি। হার-জিত যাই হোক সেটা মেনে নিয়ে দেশের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। কাউকে বেশি দোষারোপ করা এবং একে অপরের দোষ ধরা নিয়ে যদি আমরা ব্যস্ত থাকি তাহলে এটা বিরোধী দলকে আরো উৎফুল্ল করবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যেখানে যেখানে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত বা কোন্দল তৈরি হয়েছে, সেখানে সেখানে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের দরকারি নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরজমিন সফরে গেলে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
দেশের ৮টি বিভাগে সাংগঠনিক টিম আছে আওয়ামী লীগের। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত এসব টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ স্ব স্ব বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতারা। খুব শিগগিরই প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলা-উপজেলা সফরের কর্মসূচি নির্ধারণ শুরু করছেন। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, দলীয় হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূলে যে দ্বন্দ-কোন্দল তৈরি হয়েছে, তা আমরা সমাধান করব। বিভাগভিত্তিক আমাদের সাংগঠনিক টিম আছে। সেই টিম সারাদেশ সফর করবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা বসব। সবার সমস্যার কথা শুনব। সেগুলো কীভাবে দূর করা যায়, তার উপায় বের করব। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা খুব শিগগিরই তৃণমূলে যাব। এই সফরে তৃণমূলের গৃহবিবাদ কতটুকু দূর করা সম্ভব হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় এবং শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দল। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে এ দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ। যেহেতু আওয়ামী লীগ একটি বড় পরিবার, সেখানে কিছু গ্রুপিং-লবিং থাকেই। এগুলো আমরা নিজেরাই বসে সমাধান করি। এবারো সমাধান হবে। কারণ আওয়ামী লীগ একটি ঐক্যবদ্ধ পরিবার।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতার ফলে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসন করতে পারবে দলটি। এরপরও যারা দলীয় শৃঙ্খলা মানবে না, তাদের বিষয়ে উচিত হবে দলের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, তৃণমূলে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের। সেদিক থেকে প্রধানমন্ত্রী তার দলের নেতাদের যে নির্দেশা দিয়েছেন তা তৃণমূলে দলটির শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজে দেবে। নির্বাচনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী- সবারই আদর্শ এক। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার জন্য হাইকমান্ড দলের আগ্রহী নেতাদের প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। ফলে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ বা সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন শেষ হয়েছে, এখন তা থাকার কথা নয়। যেহেতু সবাই আওয়ামী লীগরই নেতাকর্মী। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা যদি নিজেদের মধ্যে বাড়তেই থাকে, তাহলে বুঝতে হবে কোনো জায়গা থেকে তাদের উসকানি দেয়া হচ্ছে। যারা এসব কাজ করছে অর্থাৎ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে, তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা উচিত। দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি দরকার হলে আইনি ব্যবস্থাও নিতে হবে। তাহলে উপজেলা নির্বাচনের আগে দলের কোন্দল নিরসন করা সম্ভব হবে। নির্বাচনে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে সফরের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়ন করা হলে উদ্বেগের কারণ থাকবে না। কিন্তু দ্রুততম সময়ে এটা করা দরকার। আর যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কোনো শান্তির ব্যবস্থা না নেয়া হয়, দলের মধ্যেই যদি তাদের রাখার সুযোগ করে দেয়া হয় তখন এটা আবার অন্যদিকে সংক্রমিত হবে। এই সুযোগ যেন না দেয়া হয়, সেটাই প্রত্যাশা করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়