আইনমন্ত্রী : জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ৬৪৮ এমপির কথা বলা হচ্ছে

আগের সংবাদ

উপজেলা নির্বাচনের আগেই বিবাদ মেটাতে চায় আ.লীগ : ভোটের কোন্দল

পরের সংবাদ

নারীনেত্রীদের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আগামী ৩০ জানুয়ারি নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। এরই মধ্যে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনপ্রক্রিয়া শেষ হবে। নির্বাচিত সংরক্ষিত সংসদ সদস্যরা প্রথম অধিবেশনেই যোগ দেয়ার সুযোগ পাবেন। এদিকে সংরক্ষিত আসনের সদস্য হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন নারীনেত্রীরা। আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নারীনেত্রীরা এ তালিকায় রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নারীনেত্রীরাও প্রতিযোগিতায় রয়েছেন।
সংবিধান মতে, একটি রাজনৈতিক দলের ৬ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য থাকলে সেই দল থেকে একজন নারী প্রার্থী সংরক্ষিত আসনের সদস্য হবেন। দলীয় প্রতীক নৌকায় আওয়ামী লীগ এককভাবে ২২২টি আসন পেয়েছে। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১, স্বতন্ত্ররা পেয়েছেন ৬২টি আসন। আর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি ১টি করে আসন পেয়েছে। সেই হিসেবে চলতি সংসদে আওয়ামী লীগ ৩৭টি, জাতীয় পার্টি ২টি এবং স্বতন্ত্র এমপিরা জোটবদ্ধ হলে তারা ১০টি সংরক্ষিত আসন পাবেন।
জানা গেছে, স্বতন্ত্র ৬২ জন সংসদ সদস্য যদি জোট বাঁধে তাহলে তারা ১০টি আসন পাবে। এরপরেও অবশিষ্ট থাকে দুটি ভোট। জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। স্বতন্ত্র দুজন সংসদ সদস্য সমর্থন দিলে এই তিন

দল মিলে একজন মহিলা সদস্য নির্বাচিত করার সুযোগ পাবেন। আর স্বতন্ত্র এমপিরা যদি জোটবদ্ধ হতে না পারে, তাহলে আইন অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এই আসনে প্রার্থী নির্বাচিত করবে। সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরো ১০টি সংরক্ষিত আসন পাবে। তিন দলের জোট আর স্বতন্ত্র- দুই ভোটের ফলে আরো একটি আসন রয়েছে। এই আসনটিও যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সুযোগ নেয়, সেক্ষেত্রে ৪৮টি আসনে তারা সংরক্ষিত নারী সদস্য পাবেন। ধারণা করা হচ্ছে স্বতন্ত্র এমপিরা সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তাই তারা সংরক্ষিত আসনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দিতে চান। তিনি এক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, স্বতন্ত্ররা সেই সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন।
একাধিক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বতন্ত্র হিসেবে তারা নিজেরাও সংসদে থাকতে খুব একটা চান না। সবাই আওয়ামী লীগের হয়েই সংসদে থাকতে চান। সংরক্ষিত নারী আসনে কারা সংসদ সদস্য হবেন, সেই দায়িত্বটা তারা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দিতে চান। তিনি যাকে সংসদ সদস্য করতে চান, স্বতন্ত্ররা সেটাই মেনে নেবেন।
হবিগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র এমপিদের পক্ষ থেকে কী করা হবে, কাদের মনোনয়ন দেয়া হবে সেসব বিষয়ে আমরা এখনো আলোচনা করিনি। তবে সবাই একমত হয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমি সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গেই থাকব।
তিনি বলেন, আমরা চাই যারা পরিশ্রমী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, দীর্ঘদিন যাবত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করেছেন, তারাই আসুক। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যদের চূড়ান্ত করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হবে, আমরা সেই আলোচনা করছি।
মাদারীপুর-২ আসনে নৌকার নির্বাচিত এমপি আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান ভোরের কাগজকে বলেন, যারা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছে। তাদের মধ্যে অনেক ত্যাগী নারীনেত্রী ও কর্মী আছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশের অনেক প্রথিতযশা নারীনেত্রী, কবি, সাহিত্যিক, নারী শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকেও সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য হিসেবে নেয়া হয়। এটা নির্ধারণ করবেন সংসদনেতা শেখ হাসিনা। আমরা সবাই এই দায়িত্ব সংসদনেতার ওপর ছেড়ে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা একেবারেই তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেত্রীদের সংরক্ষিত আসনে নিয়ে আসেন। এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, যারা একবার সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি ছিলেন, তাদের বারবার দায়িত্ব দেয়া হবে, এমনটা সাধারণত হয় না। এরকম কোনো বিধিনিষেধও নাই। তবে এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি হলো; আওয়ামী লীগে বহু নারীনেত্রী আছেন, তাদের থেকে বাছাই করে অন্তত একবার করে সংসদ সদস্য বানাতে চান। এতে সবাই মূল্যায়িত হওয়ার সুযোগ পান। সে হিসেবে এবারো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সংরক্ষিত নারী আসনে বেশির ভাগ নতুন মুখ আসতে পারে।
এদিকে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নারী নেতাকর্মীরা। এ তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলা, মহানগর ও উপজেলার নেত্রী, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেত্রীরাও আছেন। তারা দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কেউ কেউ নিজেদের বিগত দিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ত্যাগ-তিতীক্ষা তুলে ধরে সিভি বানিয়েছেন। সেই সিভি আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়, দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতাদের কাছে দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেত্রীদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত নারীদের মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া মনোনয়ন পেয়েও জোট বা শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেয়া এবং যোগ্যতায় এগিয়ে থাকার পরও নানা কারণে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে যাদের মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হয়নি তারা মনোনয়নে এগিয়ে থাকবেন। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নেত্রী ও বিশিষ্টজনদেরও সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। দলের দুর্দিনে ত্যাগী ও নিবেদিত প্রয়াত নেতামন্ত্রীদের স্ত্রী-কন্যাদের মধ্যে যারা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত তারাও মনোনয়ন পেতে পারেন।
সূত্র জানায়, এবার সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে দলের সমর্থন পেতে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক ল²ীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-১ আসনে আফরোজা বারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি। অবশ্য আফরোজা বারী দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও তার মেয়ে ওই আসনটি থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। তাই আফরোজা বারীর সম্ভাবনা খুব একটা নেই। ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপিরও জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
এ তালিকায় আরো রয়েছেন অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নিলুফা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাহেরা খাতুন লুৎফা ও সাধারণ সম্পাদক শামীমা রহমান। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের কোনো নারী প্রতিনিধিকেও দেখা যেতে পারে এই সংসদে।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংরক্ষিত আসনে শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল আলীমের কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরীর এবার খুব সম্ভাবনা আছে। এছাড়া নাটোর-৪ আসনের সাবেক এমপি এম এ কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য নেহরিন মোস্তফা দিশি, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, নুসরাত ফারিয়া, অরুণা বিশ্বাস, নুসরাত ইমরোজ তিশা, তানভীন সুইটি, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তারসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের বেশ কজন আলোচনায় রয়েছেন।
জাতীয় পার্টি চলতি সংসদে ১১টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। হিসাবমতে, দলটি দুইজন নারী আসনের সংসদ সদস্য দিতে পারবেন। দলটির একাধিক সূত্রমতে, এই দুটি আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে পারেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের ও সালমা ইসলাম। এই দুজনই জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। শেরীফা কাদের ঢাকা-১৮ ও সালমা ইসলাম ঢাকা-১ আসনে নির্বাচন করেছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়