শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাল মিসর ও ইতালি : নির্বাচনের প্রশংসা স্কটিশ এমপির, আরো কয়েক বিদেশি নেতার শুভেচ্ছা

আগের সংবাদ

অবশেষে পশ্চিমাদের ইউটার্ন : সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে রাজি যুক্তরাষ্ট্র > নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক

পরের সংবাদ

সচেতন-অবচেতন মনের কারসাজি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সচেতন এবং অবচেতন মনের শেখার পদ্ধতি দু’রকম। সচেতন মন চারপাশ দেখে শেখে আর অবচেতন মনকে দীর্ঘকাল চর্চার মাধ্যমে রপ্ত করাতে হয়। প্রথমদিকে নতুন কিছু শেখাতে গেলে অবচেতন মন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায় না। এই মনের দায়িত্ব হলো মানুষকে নিরাপদ রাখা। সে ভাবে, মানুষ যে স্থানে আছে সেটাই নিরাপদ স্থান। তাই প্রোগ্রামের বাইরে কিছু করতে গেলে অবচেতন মন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, সৃষ্টি করে বিভিন্ন প্রকার বাধাবিপত্তি। যেমন- বমিবমি ভাব, মাথাব্যথা, নার্ভাসনেস ইত্যাদি। এ মন তুলনামূলকভাবে বেশি শক্তিশালী হওয়ায় একে শেখানো বেশ কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই পরিবর্তনের জন্য অবচেতন মনে যা কিছু প্রোগ্রাম করা থাকে, তার বিপরীতে গিয়ে নতুন করে প্রোগ্রাম নির্ধারণ করতে হয়। একবার যদি অবচেতন মনকে আগ্রহী করে তোলা যায়, তবে সে নিজেই নতুন প্রোগ্রামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে। যদি কোনো কারণে অবচেতন মন সংকেত অনুযায়ী কাজ না করে, তবে বুঝতে হবে তার কাছে দিকনির্দেশনার বিষয়টি স্পষ্ট নয় কিংবা কোথাও ভুল আছে। তখন নতুন করে প্রোগ্রাম করতে হবে। অবচেতন মনকে রি-প্রোগ্রাম করার জন্য সচেতন মন থেকে যে-সংকেত পাঠাতে হয় তা হয় শব্দহীন। যদি অবচেতন মনকে অন্য ডায়মেনশন ভাবা হয়, তবে সেই ডায়মেনশনে বিনা তারে সংকেতবার্তা পাঠাতে হবে। এই দুই অংশের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র স্থাপনকারী মাধ্যম হলো মেডিটেশন। তাই মেডিটেশনের মাধ্যমে রি-প্রোগ্রাম করা যায়। বিভিন্ন মোটিভেশনাল স্পিচ কিংবা মহামনীষীর আত্মজীবনী পাঠ করেও পরিবর্তন করা যেতে পারে। মেডিটেশনের প্রথমদিকে সংকেতের অনুরণন একেবারে দুর্বল থাকে। এ কারণে প্রথমদিকে রি-প্রোগ্রামের সময় মন বারবার লাইনচ্যুত হয়ে বিভিন্ন চিন্তায় মগ্ন হয়। তাই যখনই সচেতন মন জেগে উঠবে, তখনই অবচেতন মনকে মেসেজ পাঠাতে হবে। এ কাজ করতে হবে খুব ধীরগতিতে। থেটা লেভেলের কম্পন একটু নিচু, তাই তাড়াহুড়া করলে ফল উল্টো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানুষ যদি বিরতিহীনভাবে চর্চা করে, তবে যে কোনো দুঃখ-কষ্ট কিংবা রি-প্রোগ্রাম অল্প সময়ের মধ্যে করা সম্ভব। আর যদি মানুষ কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেডিটেশন চালিয়ে যায়, তবে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। একবার সচেতন মনকে পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত করা গেলে, সে নিজেই অবচেতন মনের বিরুদ্ধে দ্বা›িদ্বকতার কাজ শুরু করবে। তখন পূর্বের পথে হাঁটতে গেলে সচেতন মন প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
সচেতন মনকে প্রশিক্ষণের সময় দৃঢ় থাকতে হবে, নতুবা অবচেতন মন তার নির্দেশ নাও মানতে পারে। যখন এই দুই অংশের মধ্যে শিক্ষক এবং ছাত্রের সম্পর্ক গড়ে উঠবে তখন আস্তে-ধীরে সচেতন মনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। অবচেতন মন প্রশিক্ষিত (ট্রেইনড) হওয়ার পরও সব সময় তাকে পথ প্রদর্শন করতে হবে, নতুবা ভুল পথে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যেহেতু নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে অবচেতন মন বিদ্রোহ করে, তাই সময় নিয়ে আস্তে-ধীরে কাজ করলে নতুন উদ্দেশ্য অনুসারে আচরণ পরিবর্তিত হবে।
অবচেতন মন সব সময়ই অবোধ শিশু বা অযৌক্তিক অংশ। সে বাধা মানতে চায় না; অন্যের ফসল নষ্ট করতে চায়; ভাঙতে চায় গণ্ডি। তাই অবচেতন মনকে কখনোই সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করা যাবে না। অন্যথায় এই অংশের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। একবার অবচেতন মন সচেতন মনকে দখল করে নিলে মানুষের বোধবুদ্ধি নষ্ট হয়ে একখণ্ড মাংসপিণ্ডে পরিণত হতে সময় লাগবে না। বর্তমান বিশ্ব বস্তুবাদী, তাই পুঁজিবাদী জলস্রোতে ভেসে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এ কারণে নীতি-নৈতিকতার পথে দৃঢ় থাকার জন্য পুনঃপুন সচেতন মন থেকে সংকেত পাঠাতে হবে, যেমন সুদ খাওয়া হারাম, মিথ্যা বলা মহাপাপ ইত্যাদি। সচেতন মনের নির্দেশনামা বারবার নীরবে পাঠ করে বোধের জগতে দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিতে হবে। এত কঠোর পাহারার মধ্যেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে ভেঙে না পড়ে সামনে এগোতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে সবসময়। বস্তুত কোনো পরিবর্তনই সহজ নয়। পরিবর্তনের জন্য বিপরীত শক্তির প্রয়োজন হয়। কেবল সাহসী ব্যক্তিরাই স্রোতের বিপরীতে যেয়ে পরিবর্তন করতে পারে।
নতুন কাজের জন্য নতুন নিউরাল সার্কিটের প্রয়োজন পড়ে, তাই এ সময় স্নায়ুতে অনেক বেশি নিউরন তৈরি হয়; অনুভূত হয় শেখার আনন্দ। মূল বিষয় হলো, নতুন কিছু শিখলে মানুষের মধ্যে একটা বিকল্প পথ তৈরি হয়। এই পথ নতুন ধরনের আচরণ তৈরি করে মানুষকে নিয়ে যায় নতুন অভিজ্ঞতার দিকে। নতুন অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম হয় নতুন অনুভূতির। যে কোনো চিন্তা মানুষের মনে যে অনুভূতির জন্ম দেয় তা শরীরে এক ধরনের কম্পন তৈরি করে। মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতিতে যা কিছু কম্পন তৈরি করে, তা একলাইনে দাঁড়িয়ে যায় এবং তৈরি করে শারীরিক ক্রিয়া।
যদিও দার্শনিকরা সচেতনতাকে ব্যক্তিগত বিষয় বলে অভিহিত করেছেন, তবে আমার ধারণা, কথোপকথনের মাধ্যমে ব্যক্তির সচেতনতাকে অনুভব করা যায়। যেমন সচেতন ব্যক্তি কৌতূহলী। তার মধ্যে জ্ঞানের আগ্রহ থাকে। ব্যক্তিগত বিষয়ের চেয়ে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দেশ এবং ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি তাকে ব্যাকুল করে। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে তার পক্ষে ক্ষমা করা সহজ হয়। সর্বোপরি দ্বা›িদ্বক বিচারে সে নিজেই নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করার ক্ষমতা রাখে। সচেতনতার ক্ষেত্রে দ্বা›িদ্বকতা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একমাত্র দ্বা›িদ্বক ব্যক্তি নিজেকে সমালোচকের মতো বিচার করতে পারেন। এই দ্বা›িদ্বক ব্যবচ্ছেদ এবং বিভিন্ন ধর্মে যে স্বীকারোক্তির (কনফেশন) কথা বলা হয়েছে, তা এক নয়। ধর্মীয় স্বীকারোক্তির পর মানুষ অহরহ পাপ বা অপরাধ কাজকর্মে লিপ্ত হয়। কিন্তু সচেতনতা জন্মের পর যে দ্বা›িদ্বকতার যুদ্ধ, তা সহজে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, শতকরা ৯০-৯৫ জন মানুষ অচেতন। খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, এই বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে অনেকে শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও তারা নিজেদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তাই তারা রাগ নিয়ন্ত্রণ না করে রাগের পক্ষে যুক্তি খুঁজে বেড়ান। এ পর্যায়ে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। পারভেজ আলম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকে যুক্ত হয়েছিলাম। তিনি ভালো লিখেন। একদিন একটা স্ট্যাটাস নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে, ওনার বই সম্পর্কে না জানার হেতু আমাকে বিদ্রুপ করলেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ব্লকও করেন। উনার মতো জানাশোনা/জ্ঞানী একজন মানুষের রাগ নিয়ন্ত্রণে নেই দেখে সেদিন বিস্মিত হয়েছিলাম। এখানে কে দোষী, কে ভুক্তভোগী তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূল বিষয় হলো রাগ নিয়ন্ত্রণ। একসময় আমি নিজেও অসহিষ্ণু ছিলাম, বর্তমানে সচেতনতা জাগছে এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ করতেও সমর্থ হয়েছি অর্থাৎ লেভেল অতিক্রম করার পর আমি পার্থক্যটা বুঝতে পারছি।
এমন অনেক মানুষ আছেন যারা নিজের জীবনযাপন না করে পূর্বপুরুষের জীবনযাপন করে থাকেন, যেমন আমার বাবা। তিনি নিজের অজান্তে দাদার মতো রাগী হয়ে উঠেছেন। দাদার মতোই তার আচরণ, ব্যবহার। আমি দূর থেকে বিষয়টা ধরতে পারলেও তিনি বুঝতে পারছেন না। প্রকৃতপক্ষে সচেতন না হলে এই বিষয়গুলো অনুধাবন করা যায় না।
আমাদের চারপাশের অনেক মানুষ অর্থের পেছনে ছুটছেন, অনেকের ঘুমের সমস্যা। প্রায় দেখি ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টি জাতীয় খাবারের লোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। আসলে যে কোনো অনুভূতি দীর্ঘ সময় ধরে লালিত-পালিত হলে তা একসময় আগ্রাসী রূপ লাভ করে, তখন মানুষ স্নায়ু দ্বারা পরিচালিত না হয়ে শরীর দ্বারা পরিচালিত হয়। বস্তুত লোভ মানুষের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। তাই শরীর কোনো আকাক্সক্ষা তৈরি করলে তারা লোভ সংবরণ করতে ব্যর্থ হন। এ ক্ষেত্রে একটা সহজ সূত্র মেনে চললে সকল জটিলতা এড়ানো সম্ভব বলে মনে করি। ছোটবেলা থেকে শিশুদের সব আকাক্সক্ষা পূরণ না করে কিছু আকাক্সক্ষাকে বাদ দিতে হবে। এভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে শিশু একদিকে অভাব শিখবে, অন্যদিকে তার মধ্যে তৈরি হবে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা।

রোমেনা আফরোজ : কবি ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়