শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাল মিসর ও ইতালি : নির্বাচনের প্রশংসা স্কটিশ এমপির, আরো কয়েক বিদেশি নেতার শুভেচ্ছা

আগের সংবাদ

অবশেষে পশ্চিমাদের ইউটার্ন : সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে রাজি যুক্তরাষ্ট্র > নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক

পরের সংবাদ

পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা জরুরি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ রক্ষায় পাখিদের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনি পাখিদের সুরক্ষায়ও প্রয়োজন তাদের বাসযোগ্য পরিবেশ। কিন্তু ক্রমেই দেশে বাড়ছে পাখি নিধন। বিলুপ্ত হচ্ছে নানা বিরল প্রজাতির পাখি। তাই পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পাখি হত্যা অপরাধ এ কথাটি গ্রামের মানুষ জানেই না। তাই তারা নির্বিচারে প্রতিনিয়ত পাখি হত্যা করে চলেছে। এখন আর পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙে না গ্রামবাংলার ক্ষেত্রেও কথাটি শোনা যায়। গ্রামবাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পাখি। দেশীয় পাখিরা গ্রামগঞ্জের ঝাউ-জঙ্গল, বাঁশ-ঝাড়ে বাস করলেও দ্রুত জনবসতি গড়ে ওঠায় এসব পাখিরা তাদের বাসস্থান পরিবর্তন করছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রয়োজনের তাগিদেই এনসব ঝাউ-জঙ্গল কেটে ফেলছে। ফলে হারিয়ে ফেলছে তাদের চিরাচরিত বাসস্থান। কিছুদিন আগেও মাঠ-ঘাট, ক্ষেতে-খামারে বিচিত্র ধরনের পাখিদের বিচরণ ছিল। পাখিরা সে সময় ঝাঁকে ঝাঁকে এসে তৃষ্ণা মেটাত আর খাদ্য অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকত। ফসলের মাঠে পাখি বসার দৃশ্য সচরাচর দেখা গেলেও এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে। অতীতে গ্রাম এলাকায় ব্যাপকহারে বক, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, বাবুই, টুনটুনি, চিল, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালিহাঁস, কোকিল, কাকসহ বিভিন্ন পাখিদের দেখা যেত। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, কাঠ ঠোকরা, কোকিল, ডাহুক, ক্যাসমেচি, বাবুই, মাছরাঙা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাচাসহ অনেক পাখিকে আর দেখা যায় না। শোনা যায় না এসব পাখির ডাক। গ্রামবাংলার অতি পরিচিত বসন্তে যে পাখি ‘বউ কথা কও’ বলে গ্রামের প্রতিটি মানুষকে মাতিয়ে তুলতো সেই পাখির দেখা আর পাওয়া যায় না। বর্তমান প্রজন্ম চেনে না এসব পাখি। এসব পাখির ডাকও শোনে না কোনো দিন। ফলে শিশু-কিশোরদের কাছে দিন দিন হয়ে যাচ্ছে এসব পাখি ইতিহাস। পাখি কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার অনেকাংশেই দায়ী। কৃষকরা এখন বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে সব সময় কীটনাশক প্রয়োগ করে। এতে করে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ মরে যায় বা আক্রান্ত হয়। পাখিরাও দিনের পর দিন এসব খেয়ে মারা যাচ্ছে। তাছাড়া পাখি শিকারিদের নিষ্ঠুরতা তো রয়েছেই। কখনো কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঝড়ে পাখির বাসা ভেঙে পাখির ছানার মৃত্যু ঘটে ও ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পাখির বিলুপ্তি ঘটায় যেমনি জীববৈচিত্র্যের সংকট বাড়ছে, তেমনি আমরা হারিয়ে ফেলছি সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পাখির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই কেবল মানব জাতিই জীবের প্রতি দয়া, সহনশীলতা এবং সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে পাখির স্বাভাবিক বেঁচে থাকা বংশবিস্তারের সুদৃঢ় ভবিষ্যৎ। জানা যায়, বাংলাদেশে ৬৫০ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে ৩০টি বর্তমানে বিলুপ্ত, অতীতে ছিল। ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ১৪৩টি প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে কালেভদ্রে দেখা যায়। বাকি ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়। এই ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের ‘আবাসিক’ পাখি যেগুলো স্থায়ীভাবে এদেশে বাস করে। বাকি ১৭৫টি বাংলাদেশের ‘পরিযায়ী’ পাখি যেগুলো খণ্ডকালের জন্য নিয়মিতভাবে এদেশে থাকে। এই ১৭৬ প্রজাতির মধ্যে ১৬০টি শীতে এবং ৬টি গ্রীষ্মে বাংলাদেশে থাকে, বাকি ১০টি বসন্তে এদেশে থাকে, যাদেরকে ‘পান্থ পরিযায়ী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। আমাদের দেশে যে পাখি সংরক্ষণে আইন আছে তা অনেকেই জানে না। তাই চলুন পাখি সংরক্ষণে সকলে সচেতন হই।
আহমাদ কাউসার : কথাসাহিত্যিক
ব্রাহ্মণ পাড়া, কুমিল্লা।
kausarfreetalk24@gmail

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়