উখিয়ায় ঘর থেকে বের করে রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা

আগের সংবাদ

বিভাজন রুখতে তৎপর কেন্দ্র : আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

বদলে যাওয়া মন্ত্রিসভা : স্বপ্ন ও বাস্তবতা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে আমাদের আশার কারণগুলো কী কী? দেশের রাজনীতি সঠিক পথে চলছে এমন বলা মুশকিল। পথের কাঁটা হয়ে আছে বিএনপি। যে বিএনপি গত ১৫ বছর গর্তজীবী বললে ভুল হবে না তাদের জন্য এখনো যাদের অন্ধ সমর্থন তাদের কথা বলা না বলা এক বিষয়। এরা দেশের ভেতরে-বাইরে একটি কমন সমস্যায় আক্রান্ত। আমি যার নাম দিয়েছি পাকি সিনড্রম। মূলত পাকিস্তান ভাঙার আক্রোশ আর দ্বিজাতিত্ত্বের কারণে এই হাল। মজার বিষয় বয়স্কদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত। এদের কথায় দেশ চলে না। চলবেও না। ইতিহাস বলছে এরা সুযোগ পেয়েছিল। দখল করে আধিপত্য বিস্তার করে সামরিক বেসামরিক ছত্রচ্ছায়ায় এরা দাপট দেখাতে কসুর করেনি। কিন্তু দিনশেষে তারা টেকেনি। কারণ রক্তমাখা এই ইতিহাস আর দেশ তাদের ভোলেনি। ভোলেনি তার আত্মত্যাগী সন্তানদের কথা।
তাই শেখ হাসিনার হাতেই রয়ে গেছে দেশের কর্তৃত্ব। তিনি যেসব পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন বা করেছেন তার দিকে তাকালেও অনেক সরকারপ্রধানের হাত-পা কাঁপবে। কিন্তু তিনি তা সামাল দিয়ে আজ টানা চতুর্থ মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী। এটা মানতেই হবে সবার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। জনবহুল দুর্নীতিগ্রস্ত একটি সমাজ ও দেশের সরকারপ্রধানের কাজ সহজ কিছু নয়। তারপরও গুজবের ডালপালা সরিয়ে শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন। তার কথা স্পষ্ট ও সরাসরি। মাঝে মাঝে তা আমাদের হতবাক করলেও পরে ঠিকই টের পাওয়া যায় কী কারণে কেন তিনি তা বলেন। বলছিলাম বাংলাদেশের ইতিহাসে যে আওয়ামী লীগ তার আপন মহিমায় উদ্ভাসিত তার ভিত্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। তারপরের ইতিহাসে দলটি এগিয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনার ভেতর দিয়ে। একসময় এমনও দেখেছি আওয়ামী লীগের মানুষজনই বাকশাল করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট করেছে। সেসব জঞ্জালের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের উদ্দেশ্য ছিল দলটিকে নির্মূল করে ফেলা। সে খায়েশ পূর্ণ হয়নি। আজ আওয়ামী লীগই ইতিহাসে সবচেয়ে অধিক সময় দেশ শাসনের গৌরবে গৌরবান্বিত এক দল।
বর্তমান মন্ত্রিসভার কাজ শুরু হলে এবং সময় গেলে তার মূল্যায়ন হবে। কিন্তু এটা বলতেই হবে এবারের মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু মন্ত্রীর মুখ আর তাদের পদবি আমাদের উৎসাহিত করে তুলেছে। শুরুতেই বলব চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান নওফেলের কথা। প্রয়াত মেয়র জননেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্রটি এবার শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন। এর আগেও ছিলেন কিন্তু পূর্ণমন্ত্রী নন। তার এই পদায়ন আমার মতে সেরা সিদ্ধান্ত। তার কথা শুনলেই আপনি বুঝবেন নওফেল কতটা শিক্ষিত আর চমৎকার জ্ঞানসম্পন্ন। দীর্ঘ সময় বিদেশে পড়াশোনা করা ব্যক্তিজীবনে আধুনিক এই যুবকের হাতে আমাদের শিক্ষা যে তার সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারবে এটা ভাবা যৌক্তিক। যিনি পদে আসীন হওয়ার পরই বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মানে জমি অধিগ্রহণ, বিল্ডিং নির্মাণ বা শিক্ষক নিয়োগ নয়। মূল বিষয় লেখাপড়ার মান। যার কথাতেই ডাইনামিকতার গন্ধ আছে তার মতো তরুণকে এই পদে নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
পরিবেশ জলবায়ু এখন একটি গেøাবাল ইস্যু। যে ইস্যুতে আমরা দোষী না হয়েও ভুক্তভোগী। আমি বলছি বাংলাদেশের কথা। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো দায়ী না হয়েও গেøাবাল এই ইস্যুতে কোণঠাসা। তাছাড়া দেশের জলবায়ু বা পরিবেশ নিয়েও সমস্যার অন্ত নেই। এই জায়গায় কাজ করার জন্য দরকার ছিল বহুমাত্রিক একজন ভালো ইংরেজি জানা ভদ্রলোকের। যার পরিচয় বাঙালি হয়েও আন্তর্জাতিক। সাবের হোসেন চৌধুরী সুদর্শন এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তার হাতে এই মন্ত্রণালয় যে নতুন রূপ লাভ করবে তা বলাই বাহুল্য।
এবারের চমক টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হয়ে আসা ডা. সামন্ত লাল সেন। পারিবারিকভাবে তাকে জানি। দেখা না হলেও তার কথা, তার গল্প শুনেছি অজস্রবার। মন্ত্রী হওয়ার আগেও তিনি শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের হয়ে দেশ ও জাতির নজর কেড়েছেন। কখনো রাজনীতি না করলেও তার সেবা আর পরিশ্রম আমাদের দৃষ্টি কেড়েছে। বিশেষত বিএনপি জোটের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি জ্বালাও-পোড়াও যখন দেশে আগুনসন্ত্রাসের বিভীষিকা তৈরি করে তখনই তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন ত্রাণকর্তার মতো। প্রধানমন্ত্রী খাঁটি জহুরি। ডা. সামন্ত লাল সেনের নির্বাচন যে স্বাস্থ্য খাতের জন্য জরুরি ছিল সময় সেটাই বলে দেবে। আপামর মানুষ এই পদায়নকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অকুণ্ঠচিত্তে।
সবচেয়ে কঠিন অবস্থায় পড়ার কথা অর্থমন্ত্রীর। একদা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মোহাম্মদ আলী কীভাবে সামাল দেন সেটা হবে দেখার বিষয়। বাংলাদেশের আর্থিক খাত আছে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়। ব্যাংক বিমাসহ প্রায় সব জায়গাতেই সীমাহীন দুর্নীতি। মানুষজনের মনে ব্যাপক ক্ষোভ। তাদের মনে ভয়ও আছে প্রচুর। দেশ-বিদেশে ছড়ানো গুজবের ১০ শতাংশও যদি সত্য হয় আর্থিক খাতের অবস্থা করুণ। সহজ হবে না গুছিয়ে আনা।
গাধা পিটিয়ে যেমন ঘোড়া বানানো যায় না তেমনি লোহা পিটিয়েও সোনা বানানো যাবে না। মন্ত্রীরা আশার আলো দেখালেও সবকিছু নির্ভর করবে সুশাসনের ওপর। যে সুশাসন নয়া মন্ত্রী বা বদলে যাওয়া দপ্তরের মন্ত্রীদের পাশাপাশি নির্ভর করবে তাদের বাক সংযম পরিমিতি বোধ আর কাজের ওপর। বাদ পড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাই বলি না কেন। ভদ্রলোক দায়িত্ব পাওয়ার কিছু সময় পর থেকেই লাগামহীন কথা বলতে শুরু করেছিলেন। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নাজুক হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে। কার দোষ কার দায় সে আলোচনায় না গিয়েও বলা যায় এ বিষয়ে যত কম বলা যায় বা যতটা পারা যায় সম্পর্কোন্নয়নই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। কিন্তু তিনি তার বাইরে গিয়ে এমন সব হাস্যরস ও বিতর্কের জন্ম দিতেন, যা সরকার ও দেশের ভাবমূর্তিকেই বিপদে ফেলে দিত। তাকে সরিয়ে দেয়াটা মানুষ পছন্দ করেছে। যেমন করেছে বাণিজ্যমন্ত্রীর অপসারণ। আপনি কাজ করতে এসে উঠোন বাঁকা বলবেন, সিন্ডিকেট থাকবে বলে বিপদে ফেলবেন- সেটা কি সম্ভব না গ্রহণযোগ্য?
মোটকথায় বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতা করে আগুন লাগিয়ে ভোটদানে বাধা দিয়ে নৈরাজ্য তৈরির অপচেষ্টা করলেও শেখ হাসিনার অদম্য ইচ্ছা ও নেতৃত্বে আবার আওয়ামী লীগ সরকার শপথ নিতে পেরেছে। যে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত পিটার হাসের হাসিমাখা ছবিও দেখছি আমরা। রাজনীতির এসব সমীকরণ জটিল। যারা ভাঙচুর করে বিদেশিদের আশায় রাত গুজরান করেছে তাদের জন্য এখন করুণা ছাড়া আর কিছুই নেই। জনগণের সুপ্ত ইচ্ছা বা দ্রোহকে ন্যায়সঙ্গত করাটাই রাজনীতির দায়িত্ব। বিএনপি তা পারেনি। তাদের আগামী ৫ বছর অস্তিত্ব আর টিকে থাকার লড়াই। সে যুদ্ধে জয়ী না হলে টা টা বাই বাইও হয়ে যেতে পারে দলটি।
প্রবাসীদের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শফিকুর রহমানের কাছে আমাদের অনুরোধ আমরা আনুকূল্য চাই না। আমাদের দরকার নিরাপত্তা আর হয়রানিমুক্ত ভ্রমণ। যথাযথ সম্মান আর মর্যাদা। রেমিট্যান্সের পাহাড় বানিয়ে তোলা প্রবাসীদের শক্তিকে সম্মান ও স্বাগত জানালেই তা সম্ভবপর হতে পারে। নতুন মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা কাজ শুরু করলেই আমরা টের পাব কোথাকার পানি কোথায় গড়াবে। তারপরও আশাই জীবন। ভালো কিছুর আশা মানুষ করতেই পারে।

অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়