প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১০, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
ঝর্ণা মনি : ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশের চমক জাগানিয়া স্বপ্ন দেখিয়ে ‘স্মার্ট ক্যাবিনেট’ গঠন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ- প্রত্যয় বাস্তবায়ন শেষে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে সরকারের টানা চতুর্থ দফার যাত্রা শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে। স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’- এই চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার নতুন কারিগর কারা, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক ঘন্টা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চমক পছন্দ করেন, চমক দেখান এবং চমকের মাধ্যমেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। এবারো এর ব্যতিক্রম হবে না। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট ব্যক্তিত্বদেরই বেছে নেবেন তিনি। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু পোশাক কিংবা কথাবার্তাই স্মার্ট নয়, দক্ষতা এবং যোগ্যতায় স্মার্টদের হাতেই স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব থাকা উচিত। দক্ষ কাণ্ডারি না হলে নৌকা এগুবে না। এক্ষেত্রে নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধু কন্যা বরাবরের মতোই মুন্সিয়ানার পরিচয় দেবেন। এজন্য প্রাধান্য পেতে পারেন তরুণ, উচ্চশিক্ষিত, দক্ষ ও অভিজ্ঞরা। এদিকে নতুন কাণ্ডারিদের শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তুত বঙ্গভবনের দরবার হল। এতে আমন্ত্রণ পাবেন ১৪০০ বিশিষ্ট নাগরিক।
গত রবিবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল জয় পায় আওয়ামী লীগ। এবার টানা চতুর্থবারের মতো
সরকার গঠন করে রেকর্ড করতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আজ বুধবার সকাল ১০টায় শপথ নেবেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। শপথের পর দুপুর বারোটায় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হবে। সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করবেন নিরষ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। এই আনুষ্ঠানিকতার পর সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ তিনিই পড়াবেন। আর শপথ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিসভা গঠন প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের ১ ধারায় বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। যিনি সংসদ সদস্য, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
প্রস্তুত বঙ্গভবন, আমন্ত্রণ পাচ্ছেন ১৪০০ অতিথি : স্মার্ট মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে প্রস্তুত বঙ্গভবন। অনুষ্ঠানে ১৪০০ অতিথি আমন্ত্রিত থাকবেন। বঙ্গভবনের পাশাপাশি শপথ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এমন কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে যেসব সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তারা বৃহস্পতিবার শপথ নেবেন। সেই প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। ঐতিহ্যগতভাবে শপথ অনুষ্ঠান বঙ্গভবনে হয়ে থাকে, এবারো তাই হবে। সন্ধ্যা ৭টায় এই শপথ হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তুতি বলতে বঙ্গভবনের যেখানে শপথ হবে, সেটা রেডি করা, আমন্ত্রণের তালিকা করা, সেই তালিকা ও কার্ড করা হচ্ছে। বঙ্গভবনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কোথায় অনুষ্ঠান হবে, সেটাসহ সংশ্লিষ্ট কাগজ তৈরি করা হচ্ছে।
ডিজিটাল মন্ত্রিসভা থেকে স্মার্ট মন্ত্রিসভা : বিশ্লেষকদের মতে, গতানুগতিক চিন্তার বাইরে গিয়ে শেখ হাসিনা প্রথম চমক দেখিয়েছিলেন ২০০৯ সালে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট পেয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন- তাকে ‘চমকের মন্ত্রিসভা’ হিসেবে অভিহিত করেছিল জাতি। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর তিনি যাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন তাদের অনেককেই ঠাঁই দেননি সেখানে। ২০১৪ সালেও মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনেন তিনি। আর ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় ফের ব্যাপক চমক। ডাকসাইডে নেতা আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, শাজাহান খান, নুুরুল ইসলাম নাহিদ, খন্দকার মোশাররফ, মাহমুদ আলী, আসাদুজ্জামান নূর, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুরা ছিটকে পড়েন মন্ত্রিত্ব থেকে। ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ৩১ জনই নতুন মুখ। যাদের মধ্যে ২৭ জন ছিলেন একেবারেই আনকোরা। এই আনকোরাদের অনেকে এসেছেন বাঘা বাঘা সব মন্ত্রীদের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে। আর ওই সময়েই পালিত হয়েছে ‘মুজিব শতবর্ষ’ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। তরুণদের নিয়েই বৈশ্বিক মহামারি করোনার চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করেছেন সফলতার সঙ্গে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে থমকে যাওয়া অর্থনীতির চাকা যতটা সম্ভব সচল রাখাসহ উন্নয়নের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের দুরূহ কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছে বাংলাদেশ। এবারো মন্ত্রিসভা গঠনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ফোকাসে রেখে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেবেন টানা চারবারের সরকারপ্রধান। অভিজ্ঞমহলের মতে, ‘স্মার্ট মন্ত্রিসভায় প্রতিভাবান তরুণ ও উচ্চশিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দেবেন শেখ হাসিনা। পামাপাশি, বর্তমান জাতীয় ও বৈশ্বিক বাস্তবতা বিচেনায় অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারেন। কারণ বহুমুখী সংকট ও চাপ মোকাবিলায় অভিজ্ঞ মন্ত্রীদের পরামর্শ ও কাজের দক্ষতা সরকারপ্রধানের জন্য সহায়ক হবে।
স্মার্ট মন্ত্রিসভা কেমন হওয়া উচিত- এমন প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে তরুণদের স্মার্ট জনশক্তিতে রূপান্তর, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, সা¤প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে গড়ার যেসব প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে- তা বাস্তবায়নে দক্ষ, যোগ্য এবং স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন। প্রয়োজন সুশিক্ষিত মন্ত্রীর। যিনি মন্ত্রণালয়কে শুধু নয়; উন্নত বিশ্বের কাতারে এগিয়ে নেয়ার জন্য দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার ‘ক্লিন ইমেজধারী’ ও অভিজ্ঞ সদস্যরা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। নতুন করে যুক্ত হবেন দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতারা। বিশ্লেষকদের মতে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে ধারণ করে যিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, এমন জনপ্রতিনিধিকেই দায়িত্ব দেয়া উচিত। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত ভোরের কাগজকে বলেন, স্মার্ট ক্যাবিনেটের সবাইকে স্মার্ট হতে হবে। শুধু পোশাকে নয়, কিংবা মোবাইল থেকে তথ্য বের করাই নয়, সব কাজেই স্মার্ট হতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য যেসব কৌশল ও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, দক্ষতার সঙ্গে নিতে পারেন, সেসব স্মার্ট ব্যক্তিদেরই স্মার্ট মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব দেয়া উচিত।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।