ভোটের মাঠে ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের জয়জয়কার

আগের সংবাদ

কেমন হবে ‘স্মার্ট’ মন্ত্রিসভা

পরের সংবাদ

সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের বিজয় > সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য বিনিময় : ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলাই এখন লক্ষ্য

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পৌষের পড়ন্ত বিকাল। উত্তরের হালকা হিমেল হাওয়ায়ও যেন নির্বাচনী উত্তাপের আঁচ। গণভবনের সবুজ চত্বরে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের মুখে মুখে বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে নানা মন্তব্য। ঘড়ির কাঁটায় যখন ঠিক সাড়ে ৩টা; দৃঢ়প্রত্যয়ে এগিয়ে এলেন হালকা লেমন রঙের শাড়ি পরিহিত হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন ও অভিনন্দন জানান বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। বঙ্গবন্ধু কন্যাও ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বাংলাদেশের নির্বাচন কভার করতে আসার জন্য বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
গণভবনে গতকাল সোমবার বিকালে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে নির্বাচন নিয়ে এত আগ্রহ আগে কখনো দেখিনি- মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আটবার নির্বাচন করেছি।? এবার আবার নির্বাচন করলাম। এবার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। এবারের নির্বাচন একটা যুগান্তকারী ঘটনা। নির্বাচনের জনগণের বিজয় হয়েছে। নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে তা প্রমাণিত হয়েছে। সব সময় চেষ্টা ছিল- নির্বাচন সুষ্ঠু করা, মানুষ যাকে চায় তাকে ভোট দিয়ে যেন সরকার গঠন করতে পারে।
তিনি বলেন, নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি। আপনাদের (বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক) আসার কারণে আমাদের দেশের গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার আরো সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের কথা বলবেন। আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর। আবহাওয়াও অনেক ভালো। আপনাদের আগমন আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে আরো মজবুত করবে, শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সবাই নির্বাচন কমিশনের অধীনে থেকে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করেছে। এবারের নির্বাচনটা আরেকটু ব্যতিক্রমী। সাধারণত আমরা দল থেকে প্রার্থী ঠিক করি; বা সব দলগুলো তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে দেয়। এবার আমরা আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছি, পাশাপাশি এ নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যে যার ইচ্ছামতো দাঁড়াতে পারবে। আপনারা দেখেছেন, একটি দল হয়ত অংশগ্রহণ করেনি। কারণ তারা কখনোই নির্বাচন করতে চায় না। সে দল মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি। ফলে তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সেই জন্য নির্বাচনকে ভয় পায়।
এই বিজয় জনগণের বিজয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দল জনগণের দল। এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদলগুলোরও বেশকিছু নির্বাচিত হয়েছেন। এ দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বিজয় জনগণের বিজয়। কারণ এখানে জনগণের যে অধিকার আছে, সরকার গঠন করার ক্ষমতা আছে তাদের হাতে। যা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি; জনগণের ভোটের অধিকার, তা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত

করাই লক্ষ্য। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। জনগণ ভোট দিয়েছেন, এটিই মূল বিষয়। বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি না আসে এর মানে এই নয়- গণতন্ত্র নেই। তারা আসেনি তাদের ব্যাপার। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।? তারা আমাদের অনেক মানুষ হত্যা করেছে। আমরা ধৈর্য্য ধরেছি। এটি গণতন্ত্র নয়, সন্ত্রাসী। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে তারা মানুষ হত্যা করেছে, এখনো করছে। এটি গণতন্ত্র নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে। সেখানে যদি কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেয়; তার মানে এই না যে, গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে মানুষ অংশ নিয়েছেন কিনা। আপনি যে দলের (বিএনপি) কথা বলেছেন, তারা আগুন দেয়, মানুষ হত্যা করে। কিছুদিন আগে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছে। এটা কি গণতন্ত্র? এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। মানুষ এটা গ্রহণ করে না। এ ধরনের ঘটনা এ দেশে একাধিকবার ঘটেছে। আমরা ধৈর্য দেখিয়েছি। মানুষের অধিকারকে রক্ষা করতে হবে।
বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন এবং অর্ধেকের কম ভোট পড়া নিয়ে বিদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যদি এখানে গণতন্ত্রের আর কোনো সংজ্ঞা থাকে, সেটা ভিন্ন। মানুষের অংশগ্রহণই বড় কথা। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি মানুষকে এ নির্বাচনে ভোট না দিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মানুষ তাদের কথা শোনেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কত মানুষ মেরেছে? তারা ২০১৪-১৫ সালে যা করেছে, তাতে তাদের কীভাবে গণতান্ত্রিক দল বলা যায়? তারা সন্ত্রাসী দল এবং মানুষ তাদের সমর্থন করে না।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সম্পূর্ণ ফলাফল এলে গেজেট হবে তখনই শপথ হবে। এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবে সেটা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সেটা নির্বাচিত করবেন। মেজরিটি পার্টি যাকে নির্বাচিত করবেন তিনিই হবেন সংসদীয় দলের নেতা, তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে, সরকার গঠন হবে। এটাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, সেই অনুযায়ী করতে চাচ্ছি। বিরোধী দলের ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দল গঠন করেছি। বিরোধীদেরও তা করতে হবে। আমরা তো আর বিরোধী দলকে সংগঠিত করে দিতে পারব না।
প্রধানমন্ত্রী জানান, নির্বাচন নিয়ে যারা সমালোচনা করতে চায়, তারা করতে পারে। সেটা তাদের স্বাধীনতা। ভুল-ঠিক নিয়ে আমার নিজস্ব বিশ্বাস আছে। আমি সেটাতেই বিশ্বাস করি। হ্যাঁ, আমি ঠিক কাজটি করেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমা করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ড. ইউনুসের বিষয়টি শ্রম আদালতের বিষয়। তিনি শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন। তার শ্রমিকদের ঠকিয়েছেন। শ্রমিকরা মামলা করেছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।
শ্রীমাভো বন্দরনায়েক, মার্গারেট থ্যাচার প্রমুখদের উদাহরণের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী একজন মা। সে মায়ের মমতা নিয়ে মানুষ করে। আমিও তাই। দেশের মানুষকে আমি সেভাবেই দেখি। আমি অতি সাধারণ। সাধারণ মানুষ। আমি সবসময় আমার মানুষের দায়িত্ব ও তাদের উন্নয়ন নিয়ে ভাবি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই নীততে বিশ্বাসী। এখন যুক্তরাষ্ট্র কী চায়, সেটা তাদের বিষয়।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাই এখন লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষ যেন উন্নত জীবনের অধিকারী হতে পারে। আমরা সরকারে এসে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করি। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছোট বোন শেখ রেহানা আর আমি বেঁচে যাই। ছয় বছর আমরা রিফিউজি ছিলাম। খুব কষ্টকর জীবন ছিল। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা নারী ধর্ষণ করেছিল, লুটপাট করেছিল,অগ্নিসংযোগ করেছিল, স্বাধীনতার পরপর তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। কিন্তু মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় এসে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসায়। যখন আমার মা-বাবার খুনিরা এবং যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়, ওই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি। আমার আসার একটাই লক্ষ্য ছিল- বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা; মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা; গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আর্থসমাজিক উন্নতি করা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার চলার পথটা এত সহজ ছিল না, অনেকবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আমি মুখোমুখি মৃত্যুকে দেখি, কখনো গুলি, কখনো বোমা হামলা, কখনো গাড়িতে হামলা। আমি যখন শান্তি র‌্যালি করছিলাম তখন গ্রেনেড হামলা করা হয়। আমার দলের নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষা করে মানবঢাল রচনা করে। অনেকে জীবন দেয়। জনগণের কথা বলতে গিয়ে অনেকবার গ্রেপ্তার হয়েছি, বন্দি হয়েছি। তারপরও আমি দমে যাইনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। ২০৪১-এ স্মার্ট বংলাদেশ গড়ে তোলাই এখন লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়