১০ জানুয়ারি থেকে ঢাকা-কক্সবাজার ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’

আগের সংবাদ

ফের দেশসেবার সুযোগ দিন

পরের সংবাদ

শ্রমিক অধিকার হরণ নিষ্পাপ অপরাধ নয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজনীতি অর্থনীতিতে ঘটনাবহুল বছর ছিল ২০২৩ সাল। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ সমগ্র বিশ্বই অর্থনৈতিক মন্দার একটি চ্যালেঞ্জিং বছর অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রায় ৩০টির অধিক দেশে এখন নির্বাচনী আমেজ। আগামী ৭ জানুয়ারি আমাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচন আগামীর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কারণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখবে এবং আগামীর অর্থনীতিকে একটি গতিশীল কাঠামোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকার, শ্রম নীতি নিয়ে যখন বাংলাদেশের ব্যাপারে খুব সোচ্চার তখন শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের সাজা পেলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন। যদিও ড. ইউনূসের ব্যাপারে বাংলাদেশের আইনে যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই সঠিক মনোভাব দেখাতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন মুখে মানবাধিকারের কথা বলে বাস্তবে যুদ্ধ বাঁধিয়ে অস্ত্র সরবরাহ করে। ঠিক তেমনি শ্রমিক অধিকারের বেলায়ও তাদের অতি আপনজনরা যদি তা লঙ্ঘন করে তাতে কোনো দোষ তারা দেখে বলে মনে হয় না।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা এ রায় দেন। সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। রায় ঘোষণার সময় ড. ইউনূসসহ চারজনই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকারখানা অধিদপ্তরের পরিদর্শক প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে গিয়ে শ্রম আইনের লঙ্ঘন দেখতে পায়। পরে তা সংশোধনের জন্য বিবাদী পক্ষকে ১ মার্চ চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন সংশোধনের পর গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষ থেকে এর জবাবে ৯ মার্চ যে চিঠি দেয়া হয় কর্তৃপক্ষের মতে তা সন্তোষজনক ছিল না। পরে কলকারখানা অধিদপ্তর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো শিক্ষানবীশকাল পার হওয়ার পর চাকরি স্থায়ী করা হয়নি, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনানুযায়ী বার্ষিক মজুরিসহ ছুটি দেয়া হয় না ইত্যাদি। এ ছাড়া ছুটির নগদায়ন করা হয় না এবং ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থও দেয়া হয় না বলে জানানো হয়। অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি, লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইনানুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেয়া হয়নি। আদালতের রায় থেকে জানা যায় ‘কলকারখানা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের অনুমতি ব্যতীত কোনো চাকরিবিধি অনুমতি দেয়া যাবে না। গ্রামীণ টেলিকমের নিজস্ব নিয়োগবিধি করার কোনো সুযোগ নেই।’ যা তারা করেছে সেটা আইনের ব্যত্যয়।
নোবেল পুরস্কার লাভ করার পাঁচ মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রম শুরু করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। অধ্যাপক ইউনূসের আলোচনা ও সমালোচনার একটা শুরু বলা যায় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার পর রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা থেকে। সে সময় দেশের মানুষকে খোলা চিঠিতে প্রয়োজনে রাজনীতিতে আসার কথা জানান অধ্যাপক ইউনূস। ‘পুরাতন রাজনীতি’ থেকে বেরিয়ে আসতেও আহ্বান জানান মানুষকে। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছিল। যার সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে যখন মামলা চলছিল তখন বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিশিষ্টজনরা ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দেন।
একজন অর্থনীতিবিদ, বিশ্ববরেণ্য অধ্যাপক বা সামাজিক ব্যবসার পরিচিত মুখ হিসেবে তিনি তা কীভাবে করতে পারেন? আমরা মুখে আইনের শাসনের কথা বলি; কিন্তু রায় যদি নিজের পক্ষে না যায় তখন তাতে পক্ষ খুঁজি- এ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এ রায় যদি সর্বোচ্চ আদালতে বহাল থাকে তবে তা অন্যান্য পেশার শ্রমিক অধিকারের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি যদি কোনো অন্যায় করেন তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারবে না কিংবা তিনি আইনের ঊর্ধ্বে বিষয়টা এমন নয়। বরং শ্রমিক আইন শ্রমিক অধিকারের ব্যাপারে যারা সোচ্চার তাদের কাছেও শ্রমিক অধিকার হরণ কেবল একটি নিষ্পাপ অপরাধ হতে পারে না।

তানজিব রহমান : লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়