১০ জানুয়ারি থেকে ঢাকা-কক্সবাজার ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’

আগের সংবাদ

ফের দেশসেবার সুযোগ দিন

পরের সংবাদ

শীতের বারোয়ারি জীবন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতনের দেশ, বাংলাদেশ। এদেশে ঋতুর পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রকৃতির পরিবর্তন হয়। তাই তো বাংলার ঘরে ঘরে বারবারই ফিরে আসে ‘শীত’। ষড়ঋতুর এমন দেশে প্রত্যেক ঋতু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়েই আবির্ভূত হয়। ফলে শীতের আগমনে পত্রকুঞ্জে এবং জলে-স্থলে সর্বত্রই যেন পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। হেমন্তের প্রৌঢ়ত্বের পরে আসে জড়তাগ্রস্ত শীত ঋতুর ‘নির্মম বার্ধক্য’। শুষ্ক কাঠিন্য এবং রিক্ততার বিষাদময় প্রতি মূর্তি রূপেই শীত আবির্ভাব ঘটে। তবুও এ শীতকালের প্রকৃতি ও মানুষের পরিবর্তনের বাস্তব লীলা অনেকেরই ভালো লাগে।
সমাজের অসংখ্য মানুষ আছে যারা শীতের এই সময়কে উপভোগ করার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে। দামি বিছানায় শুয়ে বিদেশি কম্বল মুড়ি দিয়ে, সকাল বেলা এককাপ চায়ের স্বাদ নেয়ার মতো অনেকেই আছে। হরেক রকমের পিঠা শখ-আহ্লাদ করে খাওয়া তাদের শীত উপভোগের মাধ্যমগুলোর একটি। কখন শীতকাল আসবে? কখন বড় বড় শপিংমল থেকে নামি-দামি ব্র্যান্ডের শীতের পোশাক কিনে গায়ে জড়িয়ে ফেসবুক কিংবা ইনস্ট্রাগ্রামে ছবি আপলোড করবে? সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকেন। ঘরে পর্যাপ্ত নতুন উষ্ণ পোশাক থাকার পরও প্রতি বছর নিত্যনতুন পোশাক কেনার মতো মানুষ অনেক আছে আমাদের আশপাশে। কারণ অনেকটা এমন যে, আগের পোশাকে তো ফেসবুক বা ইনস্ট্রাগ্রামে ছবি আপলোড হয়েছে। দ্বিতীয়বার একই পোশাক পরে ছবি দেয়াটা যেন তাদের মানায় না।
এ বছর শীতপ্রেমীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পৌষের জানান দিতে জেঁকে বসেছে শীত। দেশের উত্তরের জেলাগুলো রীতিমতো কাঁপছে। শীত-পিপাসুদের জন্য শুভকর বার্তা হলেও এটি শীতার্তদের জন্য অনেকটা অভিশাপের মতো। তাদের শীতের সকালে ঘুম ভাঙে না। তারা পাটের বস্তা কিংবা পলিথিনের টুকরো দিয়ে সারা রাত শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টা করে যায়। যাদের সেই সম্বলটুকুও নেই, তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীরকে একটু উষ্ণ রাখতে বসে পড়েন আগুনের পাশে। যাদের কপালটা একটু বড়, ভাগ্য কিছুটা ভালো, তারা অনেক সময় শীতবস্ত্র হিসেবে পাতলা কম্বল পান। ছোট পরিবার হলেও একটি পাতলা কম্বল পরিবারের ৪-৫ জন সদস্যের কতটা উপকারে আসে তা শীতযোদ্ধারাই ভালো জানেন। শীত মানেই- ‘কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহসহ তীব্র ঠাণ্ডা’। দুচোখ বন্ধ করলেই মনের পর্দায় ভেসে উঠে হাড়কনকনে শীতে জবুথবু একটি গ্রামের ভোর। এ দৃশ্যপট বার্ষিক ক্যালেন্ডারের পাতায় না থাকলে যেন ক্যালেন্ডারের পরিপূর্ণতাই পায় না। শীতের শিশির ভেজা ভোরের দৃশ্য আহা কি অপরূপ, উদীয়মান সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত গ্রামীণ বাড়ির উঠোন। চাদর মুড়ি দেয়া মানুষ, নিঃস্তব্ধ প্রকৃতি ধোঁয়াশা উজ্জ্বল, নরম এবং কোমলতায় ভরা প্রকৃতি। চিত্রশিল্পীরা শীতের প্রকৃতি ছবি আঁকতেও ভালোবাসেন। জলরং চিত্র আসলেই যেন শীতের সকালে খুব ভালো হয়। গাম্ভীর্যময় বৈশিষ্ট্যের জন্যই যেন শীতের সকাল বছরের অন্যান্য ঋতুর সকাল থেকে স্বতন্ত্র। কবি সাহিত্যিক আর সংস্কৃতিমনা মানুষের কাছে এই শীতকাল কাব্য সৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলতেই হয় যে, বিশ্বের যত মনোরম দৃশ্যের স্থান আছে সেগুলোর মধ্যে শীতপ্রধান স্থানই বেশি। কবি সুকান্ত বলেন, শীতের সকাল, দরিদ্রের বস্ত্রের আকাল, শীতের সকাল, অসাম্যের কাল, ধনীর সুখ আর আনন্দ, শ্রেণি সংগ্রাম এ নিয়ে চলে দ্ব›দ্ব। হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে বগুড়ার রাজা বাজারে এসেছেন চাকরিজীবী রেজাউল করিম। গায়ে গরম জ্যাকেট, গলায় উলের মাফলার। শীতের সবজি ও মাংস কেনার পর কিনলেন খেজুরের গুড়। রেজাউল করিমের কাছে শীত মানেই পিঠাপুলির সময়। শীতের সকালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে পিঠা খাওয়ার আনন্দই অন্য রকম। বাজারের ব্যাগ নিয়ে রিকশায় উঠলেন তিনি। রিকশাচালক বাদশা মিঞার গায়ে ছেঁড়া জামা, ঠাণ্ডায় কালচে মুখ। শীতের কাঁপুনিও শরীরে স্পষ্ট। বাদশা মিঞার কাছে শীত কষ্টের। দুজনের কথোপকথনের এক পর্যায়ে বাদশা মিঞার কণ্ঠে স্থান পায় ‘গরমই ভালা, শীতে কষ্ট লাগে।’ রিকশাচালক বাদশা মিঞার মতো অসংখ্য অসহায় দরিদ্র মানুষ রাত কাটায় আগুনের পাশে বসে থেকে। শীতের এমন চিত্র দেখা মিলবে রেলস্টেশন, যাত্রী ছাউনি, ফুটপাতসহ দেশের প্রতিটি এলাকায়। হাড়কাঁপানো তীব্র শীত গ্রাম-বাংলার মানুষ-জীবজন্তুর সঙ্গে প্রকৃতি অসাড় হয়ে পড়ে। এমন শীতের হাত থেকে হতদরিদ্র মানুষ বাঁচতে আপ্রাণ চেষ্টা করে।
আমাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত রীতি চালু হয়েছ। শীতকালে আমরা অনেকেই বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বস্ত্র বিতরণ করি। নিঃসন্দেহে এটি মানবতার সুন্দরতম দৃষ্টান্ত। তবে আমরা সবাই এমন একটা সময়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করি, যখন শীতকাল মাঝ বরাবর বা প্রায় শেষের পথে। শীত আর একটু বেশি হোক। তারপর বস্ত্র বিতরণ করব, এই রীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। শীতকালের শুরুর অর্ধেক সময়ে যেন শীতার্তরা কষ্ট না পায়, সেই দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
সমাজের দুটি চিত্রই বেশ স্বাভাবিক। উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্ত, এই দুই মিলেই আমাদের সমাজ। শুধু প্রয়োজন একটুখানি সহমর্মিতা, একটুখানি সহানুভূতি। এই দুটি জাগ্রত হলেই বেরিয়ে আসবে সহযোগিতার হাত। লেখা হবে মানবতার সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। আসুন আমরা সবাই মিলে উষ্ণ রাখি আমাদের প্রিয় এই দেশ, ‘আমাদের বাংলাদেশ’।

মেহেদী হাসান নাঈম : শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়