১০ জানুয়ারি থেকে ঢাকা-কক্সবাজার ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’

আগের সংবাদ

ফের দেশসেবার সুযোগ দিন

পরের সংবাদ

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দুর্দশা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ি জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু বাংলাদেশের বিজয়ের ৫৩ বছরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার সংগ্রাম নিষ্ঠুর পদ্ধতি চলছে। তাদের দুঃখ, দুর্দশা, সংকট দেখার কেউই নেয়। তাদের তো মানুষ বলে ভাবতেই লজ্জা হয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর। তাদের প্রাত্যহিক জীবন শুরু হয় বাঙালি সম্প্রদায়ের অত্যাচার, নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। এ অত্যাচার, নির্যাতন কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর কাছে। কারণ বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ অপসংস্কৃতির চর্চা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে যে পাহাড়ের মানুষরা হচ্ছে দুর্দশা, উপজাতি ও ভিন্ন মানুষ। অর্থাৎ তাদের সামাজিকভাবে অবমূল্যায়ন করা হয় এ দেশে। এ ছাড়াও উপহাস করা হয় তাদের খাদ্য উপাদান নিয়ে, উপহাস করা হয় তাদের চেহারা নিয়ে। উপহাস করা হয় তাদের উপজাতি হিসেবে। পাহাড়ের মানুষ চাইলেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না, পাহাড়ের মানুষ চাইলেই স্বাস্থ্যসেবা পায় না, পাহাড়ের মানুষ চাইলেই খাদ্য পায় না। পাহাড়ের মানুষ চাইলেই কাজ করার সুযোগ পায় না। বর্ণবাদী কায়দায় পাহাড়ের মানুষকে দেখা হয়। তাদের স্বাধীনতা, তাদের কথা বলার অধিকার থেকেও তাদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের মদদে অঘোষিত সেনা শাসন জারি রাখা হয়েছে পাহাড়ে। পাহাড়ে প্রাত্যহিক জীবনে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নিষেধাজ্ঞা ছাড়া আর অন্য কোনো শব্দের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে না। তাদের নাগরিক অধিকারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনিশ্চিত জীবনের প্রতীক্ষায় তাদের বেঁচে থাকা, স্বপ্ন, ইচ্ছে এবং প্রত্যাশা।
অন্যদিকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটা বিচ্ছিন্ন অংশকে পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সংঘাত ছড়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। যাতে সম্পূর্ণ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করা যায়। এবং সে সুযোগে পাহাড়ের মানুষদের শোষণ, নিপীড়ন করা। সমতলের মানুষ সুপ্রভাতে মুক্ত আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখে, পাহাড়ের মানুষ সুপ্রভাতে পরাধীন আকাশকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্নের আকাক্সক্ষায় যখন পাহাড়ের নাগরিকরা লড়াই, সংগ্রাম করে তখন তাদের বাকরুদ্ধ করার জন্য যতরকম জঘন্য, অমানবিক, নিষ্ঠুর নির্যাতন, নিপীড়ন করা যায় তার সবটুকুই করা হয়।
পাহাড়ের স্বায়ত্তশাসন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মৌলিক দাবি (যা রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম অধিকার) আদায় নিয়ে পাহাড়ের নাগরিকরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই, সংগ্রাম করছে। এবং নানা সময়ে এই লড়াই, সংগ্রামকে প্রতিহত, প্রতিরোধ করার জন্য পাহাড়ের নাগরিকদের হত্যা, গুম করা হয়। উল্লেখযোগ্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আঞ্চলিক সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে ১৯৯৬ সালের ১১ জুন মধ্যরাতে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাইল্যাঘোনার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের ২৭ বছর হলেও কল্পনা চাকমা এখনো নিখোঁজ।
গত ১১ ডিসেম্বর রাতে পানছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পিসিপির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে হত্যা করা হয়। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। শুধু এই ঘটনায় নয়, পাহাড়ে আজ পর্যন্ত সংঘটিত হওয়া কোনো ঘটনার সুস্থ তদন্ত কিংবা বিচার হয়নি।
সবুজ পাহাড় রক্তাক্ত হয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর রক্তে। পাহাড়ের মানুষদের কেন বারবার রক্ত ঝরাতে হয়? এই প্রশ্ন কেউই তোলে না, কারণ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বর্ণবাদী দৃষ্টিতে দেখা হয়। তাদের নিয়ে কেউ কথা বলে না, কারণ তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে উপজাতি হিসেবে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে এদেশের নাগরিক, নাগরিক হিসেবে একজন সমতলের মানুষের যেমন অধিকার, স্বাধীনতা রয়েছে। ঠিক অনুরূপভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে সেই অধিকার, সেই স্বাধীনতা রয়েছে। সুতরাং সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে পাহাড়ে অঘোষিত সেনাশাসন প্রত্যাহার করে পাহাড়ে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

মারুফ হাসান ভূঞা : ফেনী সদর, ফেনী।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়