পিবিআই কমকর্তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

আগের সংবাদ

স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা

পরের সংবাদ

৫২ বছরে অর্জন ও দেশের অগ্রযাত্রা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাঙালি জাতি এবার বিজয়ের ৫২ বছর পালন করেছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য গৌরবের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। তারা জনগণের খাদেম, সেবক, ভাই। তারা জনগণের বাপ, জনগণের ভাই, জনগণের সন্তান। তাদের এই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।’ বিজয়ের এসময়ে হিসাব মেলাতে চাই, স্বাধীনতার কর্ণধার শেখ মুজিবুর রহমানের কথার কতটুকু মূল্যায়ন করতে পেরেছে দেশ। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন, তবুও দেশের সাধারণ মানুষ সরকারি সব অফিস-আদালতের কর্মচারীদের কাছ থেকে আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না। আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে ওষুধপত্র ক্রয় করতে হয়, সেখানেও ওষুধের গায়ে দাম লেখা না থাকায় ক্রেতারা নিয়মিত প্রতারিত হচ্ছেন হরহামেশা। এ ছাড়া শিক্ষা উপকরণের দাম প্রায় দ্বিগুণ, যা মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে। দুর্নীতি এখনো শতভাগ বন্ধ হয়নি। মূলত সরকারের যে বিভাগগুলো এই দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বলে সাধারণ মানুষের আজ এই দুর্গতি। আজকে দেশের যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, তাতে বিজয়ের সার্থকতা দৃশ্যমান। কিন্তু মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে এখনো সুশীল সমাজ চিন্তিত। স্বাধীনতার যথার্থতা হয় তখনি যখন দেশের মানুষের ক্ষুধা, দারিদ্র্য জয় করে দেশে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা আনতে সক্ষম হওয়া যায়। বাংলাদেশ এখন সাবেক ইউএস সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে বেরিয়ে এসেছে। যিনি এই অপবাদ দিয়েছিলেন, তিনিও আজ নেই। হয়তো তিনি বেঁচে থাকলে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিজ চোখে দেখে নিজেও লজ্জা পেতেন। কিন্তু যে অর্থে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই অর্থের শতভাগ বাস্তবায়ন করতে না পারলেও স্বাধীনতার ৫২ বছরে অন্তত বিশাল কাজ বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে বিশ্বকে।
গণমাধ্যম সূত্রে দেশের মানুষ দেখতে পারছে, আমরা যে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম, সে দেশের জনগণই আজকে বলতে শুরু করেছে আমরা এগিয়ে গেছি, এটা সত্য। হয়তো আগামীতে সময় বলতে বাধ্য করাবে, তারা সেই সময়ে ভুল ছিল। যে দেশে মুজিবকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করেছিল, সে দেশেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মহান নেতা বলা শুরু হয়েছে। এমনকি শেখ মুজিবকে নিয়ে তারা এখন গর্ববোধ করেন। এখানে আমরা অনেকটা সফল হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে ঘোষণা এবং পরিকল্পনা করেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এবং তিনি তা ২০৪১ সালের ভেতরে তা সমাপ্ত করতে চান। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কি সম্ভব হতো? আমরা যদি আমাদের বীর সন্তানদের জীবন উৎসর্গ না করতাম? তাই আমরা জেনে নেই সেই বীর সন্তানদের অবদানের কথা। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর বাঙালি জাতি যখন বুঝতে পারে ধর্মের ভিত্তিতে আমরা অভিন্ন হলেও জাতিতে কিংবা সংস্কৃতিতে আমরা তাদের থেকে ভিন্ন। সেই থেকে শুরু হয় বাঙালির নতুন চিন্তা-চেতনা।
আর সেটা প্রথমে ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ঐতিহাসিক ‘আসসালামু আলাইকুম’ সম্বোধন করার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থাপিত ৬ দফা প্রস্তাব ছিল স্বাধীনতার ইঙ্গিত। তাতে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক চিত্র তুলে ধরা হয় এবং তাদের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় মানুষের মাঝে। ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলাকে কেন্দ্র করে অসহযোগ আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়ার পর ক্ষমতা না দিয়ে আলোচনার নামে টালবাহানা শুরু করে পশ্চিমারা। দেশবাসী অধীর আগ্রহে আশা করেছিল, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির এই আশাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল। ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরামর্শক্রমে ১ মার্চ দুপুরে পাকিস্তান রেডিও মারফত সে অধিবেশন স্থগিত করা হয়। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র বাঙালি জাতি। রাজপথে বেরিয়ে আসে প্রতিবাদী মানুষ। বঙ্গবন্ধু তখন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ঢাকার হোটেল পূর্বাণীতে মিটিং করছিলেন। ততক্ষণে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল হোটেল পূর্বাণীর সামনে এসে সমবেত হয়। বঙ্গবন্ধু পরবর্তী কী নির্দেশ দেন তা জানার জন্য। বঙ্গবন্ধু হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভরত জনতার মুখোমুখি হলেন। তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইয়াহিয়া খানের ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এর প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকায় ও ৩ মার্চ সারাদেশে হরতালের ডাক দেন। পশ্চিমারা কারফিউ দিয়ে চেষ্টা করে বাঙালিদের দমিয়ে রাখতে। কিন্তু ২ মার্চ কারফিউ ভেঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে আয়োজিত ছাত্র-জনতার সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত নির্দেশ দেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সমঝোতার নাটক ব্যর্থ হওয়ার পর ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। ওই রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। সেই রাতের সামরিক অভিযানের কোড নেম ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। রাত ১:৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। (সূত্র : উইটনেস অব স্যারেন্ডার, লেখক : সিদ্দিক সালিক)। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তাটি তাৎক্ষণিকভাবে মগবাজার ওয়্যারলেস স্টেশনে পাঠানো হয়। স্বাধীনতার বার্তাটি ডিএইচএফ চ্যানেলে মগবাজার থেকে চট্টগ্রামের সলিমপুর ওয়্যারলেস স্টেশনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাতিসংঘের জাহাজ মিনি-লা-ট্রিয়া, গ্রিক জাহাজ সালভিস্তার ডিএইচএফ চ্যানেলে সমগ্র বিশ্বে প্রচারিত হয়। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা থেকে লয়ালপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়। লয়ালপুর মার্শাল ল কোর্টে মুজিবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়। বাংলার মানুষ শুরু করল প্রতিরোধ সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রণীত ‘স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক ঐতিহাসিক ও অনন্য দলিল। ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন সাংবিধানিক সরকার গঠন করা হয়, যা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রথম গণতান্ত্রিক ও আইনানুগ সরকার, যা ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকতা পায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হন রাষ্ট্রপতি। তিনি জেলে থাকায় তার অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দীন আহমদ। শুরু হয় এই সরকারের কার্যক্রম।
মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়, ওই যুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুপ্রতিম ভারত সরকারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ওই সরকারের ভূমিকা ছিল অনন্য। এম এ জি ওসমানীকে সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক এবং এম এ রবকে চিফ অব আর্মি স্টাফ নিয়োগ দেয়া হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সর্বাধিনায়ক আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন। তখন থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আর ১৬ ডিসেম্বর হয় আমাদের বিজয় দিবস। ৩০ লাখ প্রাণ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা লাভ করেছি সেই অমূল্য সম্পদ স্বাধীনতা। এই যুদ্ধে যে লোকবল এবং ধনসম্পদ আমরা ক্ষয় করেছি, তা অন্য কোনো যুদ্ধে লক্ষ্য করা যায় না। তাই আসুন দেশটার জন্য আমরা সব সময় শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা দেখানোর দীক্ষা গ্রহণ করি বিজয়ের মাসে।

ড. আজিজুল আম্বিয়া : কলাম লেখক ও গবেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়