পিবিআই কমকর্তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

আগের সংবাদ

স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা

পরের সংবাদ

পাহাড় রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চাই

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আদালত ও সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা চলছে। এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে প্রতি বছর বর্ষায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোতে পাহাড়ধসে মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটে। পাহাড় রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের নানা উদ্যোগ বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি। কিন্তু কার্যকর কোনো সাফল্য দেখা যায় না। গত সোমবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মহানগরের বায়োজিদ লিংক রোড-সংলগ্ন এলাকাসহ ২৬টি পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাদদেশে দৃশ্যমান সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলছেন, পাহাড়খেকোরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাহাড় কাটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে এসব বিজ্ঞপ্তি দেখে অন্তত জনসাধারণ পাহাড় কাটার বিষয়ে সচেতন হবে। জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগে আশাবাদী হতে চাই। কার্যকর পরিবর্তনও দেখতে চাই। জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের হিসাবে চট্টগ্রাম নগরীতে বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের মালিকানাধীন ১৬টি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় ১০টি পাহাড়সহ সর্বমোট ২৬টি পাহাড়ে প্রায় ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার অবৈধভাবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। হাইকোর্ট এবং সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি হওয়া আদেশ উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতে পাহাড় কাটা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামে ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক দুই বর্গকিলোমিটারে নেমে আসে। এছাড়া ১৯৮৩ সালে সরকারি আদেশ অনুযায়ী চট্টগ্রামের কোথাও কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, জাতীয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না। উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদেশ জারি করেন- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি করা আদেশ এবং উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করেই এই অঞ্চলে পাহাড় কাটা হয়েছে। এটা স্পষ্ট, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে না পারলে পাহাড়ধস রোধ করা সম্ভব নয়। এছাড়া পাহাড় কাটার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। নির্বিচারে পাহাড় কেটে অসংখ্য ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য। এমনকি সরকারি উদ্যোগেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড়ধস। মারা যায় পাহাড়ের ঢালে বস্তিতে বাস করা নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ। গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম মহানগর এবং আশপাশের এলাকায় পাহাড়ধসে ২৫০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ। এসবের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি পাহাড় রক্ষায় সরকারের শীর্ষ মহলকেই এগিয়ে আসতে হবে। পাহাড় কাটা রোধ ও পাহাড়ের সুরক্ষায় সমন্বয় সেল বা আলাদা এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করতে হবে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়