পিবিআই কমকর্তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

আগের সংবাদ

স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা

পরের সংবাদ

নতুন কারিকুলাম এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন কারিকুলাম চালু হয়েছে এই বছর প্রথম শ্রেণিতে। ২০২৪ সালে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণিতে, পরবর্তীতে চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পাঠদান চলেছে বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনার আলোকে। নতুন কারিকুলামে পাঠদান করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করে শিক্ষকরা নতুন কারিকুলামে সফলভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়েছেন। নতুন কারিকুলামে প্রথম শ্রেণিতে প্রান্তিক মূল্যায়ন না হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। অন্যান্য শ্রেণিতে যেহেতু প্রান্তিক মূল্যায়ন করা হয়েছে, প্রথম শ্রেণিতে না হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে একটা শঙ্কা কাজ করছে। কারণ অভিভাবকদের মধ্যে একটা ধারণা হয়ে গেছে, পরীক্ষা না থাকলে সন্তানরা পড়ালেখা করে না। পরীক্ষাভীতি সন্তানকে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী করে। শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি নিশ্চিত করতে অভিভাবকরা মনে করে পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন কারিকুলাম সম্পর্কে অভিভাবকদের ধারণা না থাকায় এ কথাগুলো তারা বলছেন। দীর্ঘদিন ধরে কোনো একটি পদ্ধতি চলে এলে সেটার প্রতি সবাই অভিযোজিত হয়ে যায়, ফলে নতুন কোনো পদ্ধতি বা বিষয় এলে সেটাকে গ্রহণ করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিযোজিত হয়ে যায়। নতুন কারিকুলামে প্রান্তিক মূল্যায়ন না থাকলেও রয়েছে ধারাবাহিক মূল্যায়ন, যেটা প্রান্তিক মূল্যায়নের চেয়ে অধিক ফলপ্রসূ। প্রান্তিক মূল্যায়ন বা সামষ্টিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীকে ফলাবর্তন দেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। ধারাবাহিক মূল্যায়ন যেহেতু প্রতিটি পাঠে করা হয় তাই শিক্ষার্থীদের ফলাবর্তন দেয়ার সুযোগ থাকে, যেহেতু ফলাবর্তন দেয়া যায় সেহেতু শিক্ষার্থীদের শিখন ফল অর্জন নিশ্চিত করা যায়। প্রতিদিনই শিখন অগ্রগতি যাচাই করা যায়। ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রতিটি পাঠ শেষে মূল্যায়ন নির্দেশক অনুযায়ী শিখন ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। ধারাবাহিক মূল্যায়নে পিরিয়ডভিত্তিক মূল্যায়ন শেষে ডায়েরি ১-এ নম্বর সংরক্ষণ করা হয় এবং অধ্যায় শেষে ডায়েরি ২-এ রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি প্রান্তিক মূল্যায়ন শেষে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতির প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ধারাবাহিক মূল্যায়ন করার সময় শিক্ষকরা জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গির, মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষার্থীকে যাচাই করে থাকেন। যদি শিক্ষার্থী পুরোপুরি যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তবে শিক্ষার্থী ২ নম্বর পাবে, যদি যোগ্যতা অর্জন করতে না পারে তবে কোনো নম্বর পাবে না। তবে আংশিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে ১ নম্বর পাবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে কোনো শিক্ষার্থী যেন শূন্য না পায়। যদি শিক্ষার্থী নম্বর না পায় তবে পরবর্তী পিরিয়ডে শিক্ষার্থীকে ফিডব্যাক প্রদান, নিরাময়মূলক ব্যবস্থা এবং পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নম্বর পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা নিশ্চিত করতে হবে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় একজন শিক্ষককে সবসময় শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পাঠ পরিকল্পনা, বিষয়বস্তুর আলোকে পাঠসংশ্লিষ্ট উপকরণ, সঠিক পদ্ধতি কৌশল ব্যবহার করে শিখন শেখানো কার্যাবলি পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিখনফল যাতে অর্জিত হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পাঠদানের লক্ষ্যই হচ্ছে প্রতিটি পাঠের শিখনফল নিশ্চিত করা। শিখনফল নিশ্চিত করতে পারলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যই হচ্ছে সব শিক্ষার্থীর কাক্সিক্ষত শিখন নিশ্চিত করা।
বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, সবকিছু আপডেট হচ্ছে সে আলোকে; শিক্ষা নীতিটাকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গবেষণা করে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং কাজ চলছে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি শ্রেণিতে করার। সময়ের ধারাই এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ-পরিস্থিতির নিরিখে সবকিছু পরিবর্তন হয়। বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। পড়ালেখায়ও প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। এটা অনেক বড় একটা সুযোগ আগামী প্রজন্মের জন্য, যেটা আমি-আপনি পাইনি। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার সে পঙ্ক্তি আজ যেন সত্যি হয়ে উঠেছে পুরোপুরিভাবে, ‘বিশ্বজগত দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।’

বিভাস গুহ : শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়