ভারতীয় হানি ট্র্যাপ চক্রের ২ এজেন্ট গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

রংপুরে তিনটি নির্বাচনী জনসভায় নৌকায় পক্ষে গণজোয়ার তুললেন শেখ হাসিনা : বাহে, হামাক একখান ভোট দিবা

পরের সংবাদ

ইসিকে কঠোর হওয়ার তাগিদ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বেশির ভাগ আসনেই বেপরোয়া আচরণ করছেন প্রার্থীরা। তোয়াক্কা করছেন না নির্বাচনী আচরণবিধির। সহিংসতায় ইতোমধ্যে মারা গেছেন দুজন, দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইসি, সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এক প্রার্থীকে। এছাড়া দেশের অধিকাংশ আসনেই প্রচারের সময় নির্বাচনী সহিংসতা, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়, প্রচার গাড়ি ভাঙচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ইতোমধ্যে ২১০ জন প্রার্থীকে শোকজের নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় দায়মুক্তি পেয়ে মাঠে ফিরে আবারো বেপরোয়া আচরণ করছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতা, মারামারির ঘটনা ঘটছে বেশি। এসব বন্ধ করতে নির্বাচন কমিশনকে আরো কঠোর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, শুধু শোকজের নোটিসে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; সহিংসতা ও গণ্ডগোল এড়াতে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে ইসিকে। প্রয়োজনে আইনের কঠোর প্রয়োগসহ প্রার্থিতা বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নিতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ পর্যন্ত যতগুলো আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে- এর মধ্যে শুধু সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় কুমিল্লা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ইসি। এ ঘটনার তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। বাহারকে সশরীরে ইসিতে হাজির হয়ে তাকে কেন শাস্তি দেয়া হবে না- তার জবাব দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধেও তেমন কঠোর হওয়ার আগ্রহ নেই ইসির। বড়জোর তাকে শেষবারের জন্য সতর্ক করা হতে পারে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। তারা দুজনই বর্তমানে সংসদ-সদস্য। গত রবিবার রাতে নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবার রহমান সরকার সাংবাদিকদের জানান, ঝিনাইদহ-১ আসনের মো. আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে পৃথক ঘটনায় দুটি মামলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে বেসরকারি টেলিভিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সাংবাদিককে মারধর ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় মামলা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বরগুনা-১ আসনের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে তলবের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে, কবে ডাকা হবে, তা এখনো নির্ধারণ হয়নি বলে জানান মো. মাহবুবার রহমান সরকার। তিনি বলেন, তবে কারও প্রার্থিতা বাতিলে ইসির সিদ্ধান্ত নেই।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা দিলীপ কুমার আগরওয়ালার অভিযোগ, গত শনিবার রাতে প্রচার চালানোর সময় নৌকা প্রতীকের কর্মীরা তার পথ অবরুদ্ধ করে দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। আবার পিরোজপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ক্যাডার দিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর, পুড়িয়ে দেয়া, সমর্থক ও কর্মীদের বাসায় গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করা এবং শহরে সশস্ত্র মহড়ার অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম। ঝালকাঠি-১ আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর নৌকার প্রার্থী হয়ে প্রথমবার এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রকাশ্যে লাইসেন্স করা বন্দুক প্রদর্শন করায় তাকেও শোকজ করেছে ইসি। নোয়াখালী-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোরশেদ আলমকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মানিক।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর গণসংযোগের সময় হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামশুলের পক্ষের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৮টি গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি কুপিয়ে চাকা পাঞ্চার করে দেয়া হয়েছে। এ সময় প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারা এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারী নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বেড়ে চলায় আমরা উদ্বিঘœ, এটা মোটেই কাম্য নয়। এ সময় সহিংসতা বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। কাদের বলেন, ইসি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে বা শাস্তি হলে তাতে আওয়ামী লীগ কোনো আপত্তি করবে না বা প্রার্থীর পক্ষ নেবে না। তিনি ইসিকে নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।
আবার আওয়ামী লীগের মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী নির্বাচনী সহিংসতায় মাদারীপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী হত্যার বিষয়ে বলেছেন, নির্বাচনী সহিংসতা, কর্মী হত্যা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। এর জন্য কোনো নেতাকর্মী যদি শাস্তির মুখে পড়ে তাহলে দলের কিছু করার থাকবে না, দল তাকে সাপোর্ট করবে না। তিনি ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হাতে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বহু জায়গায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনী অফিস, প্রচারণার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের প্রার্থীরা ইসিতে অভিযোগ করেছেন। তবে ইসি শোকজ নোটিস দেয়া ছাড়া তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন চুন্নু।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের হাতে প্রচুর ক্ষমতা দেয়া আছে আরপিওতে। তাদের সেটা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার উচিত ছিল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া। এর পরিবর্তে ইসি নির্বাচনী তদন্ত কমিটির ওপর নির্ভর করছে, যাদের তিন দিনের মধ্যে এই জাতীয় অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত ও সুপারিশ করার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। আর বরাবরই শোকজের গৎবাঁধা জবাব দিয়ে প্রার্থীরা পার পেয়ে যায়। নির্বাচন কমিশন একা কিছু করতে পারবে না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তৎপর হতে হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে একেবারে শুরু থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না- এটা বলাই বাহুল্য। এবারে নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে তারই প্রকাশ ঘটছে। এখানে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ইসি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণত সরকার দলের প্রার্থীর পক্ষ অবলম্বন করার জন্য এ ধরনের সহিংসতা ঘটে। সরকারদলীয় প্রার্থী ও তাদেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে মূলত ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
এবারের সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে মোট দুই হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৯৮৫ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রচারে রয়েছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়