ধরা পরে কানের দুল গিলে ফেলল ছিনতাইকারী

আগের সংবাদ

ইসিকে কঠোর হওয়ার তাগিদ

পরের সংবাদ

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই হোক তরুণ প্রজন্মের রায়

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রূপকল্প ২০৪১-এর সমন্বিত পরিকল্পনার জন্য ২০১৫ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ প্রদান করেন। এই রূপকল্প ২০৪১-এর দুটি মূল দর্শন রয়েছে। একটি হলো ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করা। দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ। এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন দর্শনের আলোকে রূপকল্প ২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছিল। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০০৯ সালে। মূলত সেই সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এটিকে দিন বদলের সনদ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল। সেই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রচলন ও প্রয়োগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। মানবসম্পদ উন্নয়ন, ইন্টারনেট সংযোগ, ই-প্রশাসন ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প খাত গড়ে তোলাকে স্তম্ভ ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি খাতেই ডিজিটাল সেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে; যার সুফল ভোগ করছে জনগণ। এটি সম্ভব হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
মূলত ২০০৯ সালের পর থেকে রূপকল্প ২০২১-এর রোডম্যাপ বাস্তবায়নে অনেক সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। রূপকল্প ২০২১-এর রোডম্যাপ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। আর তা বাস্তবায়নে দেশের ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে দেশ অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নানা কর্মসূচি-কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। রূপকল্প ২০২১-এর সব লক্ষ্য ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন পায়। ছয়টি মূল বিষয়কে কেন্দ্র করে এই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এগুলো হলো- করোনা মহামারি থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার, সহস্রাব্দ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, বিস্তৃত অন্তর্ভুক্তির কৌশল, টেকসই উন্নয়নের পথপরিক্রমা, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন ঘটিয়ে অর্থনীতিকে ২০৩১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া, দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসৃজনের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী অভিযোজনের প্রভাব নিরসন। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সফলতার ওপর দাঁড়িয়ে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রূপকল্প ২০২১-এর সব লক্ষ্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সময়কালে অর্জিত হয়েছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রচলন ও সাফল্যের পর বর্তমান বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
স্মার্ট বাংলাদেশের নির্মাণ শুধু তথ্য ও প্রযুক্তিগত খাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সব খাতের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়িত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্য ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। এই চারটি স্তম্ভের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৪০টি মেগা প্রকল্প রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ মহাপরিকল্পনায় ২০২৫, ২০৩১ এবং ২০৪১ এই তিনটি সময়রেখায় প্রকল্প বাস্তবায়নের গতিপথ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোকে চারটি স্তর পার করতে হবে। এগুলো হচ্ছে- চালু, স্থায়ীকরণ, মানদণ্ড প্রস্তুতকরণ এবং উত্তরণ। এই প্রকল্পের শুরুতে অর্থাৎ ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলা ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি, আইসিটি নীতিমালা (তথ্য গোপনীয়তা ও সাইবার নিরাপত্তা, বাণিজ্য সহজীকরণ), জাতীয় প্রকিউরমেন্ট ই-বাজার, ডিজিটাল চাকরির প্ল্যাটফর্ম, স্মার্ট পাবলিক সার্ভিস (জনপরিষেবা) ও পেপারলেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (কাগজবিহীন প্রশাসন), ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্সিয়াল (অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক সংস্থান), গভর্নমেন্ট ক্লাউড অ্যান্ড ডেটা সেন্টার ইত্যাদি কার্যক্রম শুরুর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পরবর্তী ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইউনিভার্সাল ডিজিটাল আইডি, ডিজিটাল কারিকুলাম, স্মার্ট ডিভাইস অ্যাকসেস, ডিজিটাল কারিকুলাম প্ল্যাটফর্ম, স্মার্ট বাংলা ক্যাম্পেইন, স্মার্ট হেলথ কেয়ার, স্মার্ট ট্যাক্স, ব্লেন্ডেড লার্নি, ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
২০২৫ সালে আইসিটি রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। সেই সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে স্মার্ট ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট পোর্টাল সার্ভিস, স্মার্ট জুডিশিয়ারি, স্মার্ট বর্ডারস, স্মার্ট সোশ্যাল সেফটি নেট, পুলিশ মর্ডানাইজেশন, ফিনটেক অ্যাকসেলারেটর, উদীয়ন প্রযুক্তিবিষয়ক সেন্টার অব এক্সিলেন্স বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি এবং সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া ৯২টি সরকারি হাইটেক পার্ক ও বেসরকারি হাইটেক পার্ক মিলিয়ে মোট ১০৯টি হাইটেক পার্কের বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যত দ্রুত স্মার্ট টেকনোলজিতে যাওয়া যাবে, তত দ্রুতই স্মার্ট বাংলাদেশে যাওয়া সম্ভব।
সরকার ইডিসি প্রকল্পের আওতায় ৫৫৫টি জয় ডিজিটাল সার্ভিস এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করবে। সরকারের লক্ষ্য জেলা-উপজেলায় স্কুল-কলেজ পর্যায়ে বেকার যুব সমাজ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ লাখ ছাত্রছাত্রী, কিশোর-কিশোরীদের ফ্রিল্যান্সিং, কোডিং এবং প্রোগ্রামিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে; যেন বাংলাদেশ চতুর্থ বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি নেতৃত্বেও এগিয়ে থাকবে। একটি বিজ্ঞানমনস্ক ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিটি সংসদীয় আসনে একটি করে মোট ৩০০টি ‘স্কুল অব ফিউচার’ প্রতিষ্ঠার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়া ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে আরো ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি স্থাপন করা হবে। সরকারের লক্ষ্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিকস, এআই, আইওটি, বিগডাটা, ব্লকচেইন, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, এআর/ভিআরসহ বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা। গবেষণা ও উন্নয়নে সরকার-ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা শুরু করার জন্য দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়া নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য ইতোমধ্যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশে উদ্ভাবন সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে খুলনা এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি প্রতিষ্ঠা করা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ১ লাখ স্টার্টআপ তৈরি করার লক্ষ্যে সিস্টেমাইজেশন, স্ট্রাকচারালাইজেশন ও স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের মাধ্যমে একটি স্মার্ট ইনোভেশন ইকো-সিস্টেম গড়ে তোলা হবে।
আগামী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা চাই, সংবিধান অনুযায়ী একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে জয়যুক্ত করতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এবারের বিজয়ের মাসে অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জয়রথ অব্যাহত রাখতে তরুণ ভোটারদের শপথ নিতে হবে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এটি আরেকটি যুদ্ধ, তবে যুদ্ধটি হচ্ছে ভোটযুদ্ধ। এ যুদ্ধ শুধু বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী শক্তির সঙ্গে নয়, এটা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধেও বিজয় অর্জন করতে হবে।

ড. মো. মোরশেদুল আলম : শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়