ধরা পরে কানের দুল গিলে ফেলল ছিনতাইকারী

আগের সংবাদ

ইসিকে কঠোর হওয়ার তাগিদ

পরের সংবাদ

ব্যাংক খাতে লুটপাট : এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৫ বছরে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ২৪টি ছোট-বড় অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুট হয়েছে; যা বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি। গত শনিবার সিপিডি আয়োজিত অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনাবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলার খবর পুরনো। চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যবসা পরিচালনার নামে দেশের তফসিলি ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে হজম করে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। যেহেতু ব্যাংকিং খাতের টাকা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের আমানত, তাই এ খাতের দুর্বৃত্তদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই। জানা গেছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। গত ১৫ বছরে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুর্বল করপোরেট শাসন ব্যবস্থা, আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং স্বচ্ছতার অভাব বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে। এখানে ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণ করে এমন সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, যাদের আসল আগ্রহ অন্যত্র। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকরা ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্যাংকের এমডি ও সিইও নিয়োগের পেছনে যারা টাকা ব্যয় করে, তারা মূলত কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক দলের নেতারা আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকের পরিচালকরা অনেক সময় প্রভাব বিস্তার করে ঋণ অনুমোদন করে। অনেক সময় যথাযথ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান না করে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করা হয়। এসব ঋণ সময়ের ব্যবধানে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। ছোট ছোট ঋণগ্রহীতার ওপর ব্যাংকের কড়া নজরদারি, পিডিআর অ্যাক্টে মামলা ইত্যাদি থাকলেও প্রভাবশালী ঋণখেলাপিদের ধরতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কঠোর হতে পারছে না। খেলাপি ঋণ কমানোর কথা বলে বিভিন্ন সময়ে ঋণখেলাপিদের নানা সুবিধা ও প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সুফল আসেনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও আমাদের সব উচ্ছ¡াস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। বিষয়টি সবাইকে বিব্রত করে, এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দারুণ অস্বস্তি রয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্র ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়াই এর প্রমাণ। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হলে প্রথমেই ঋণখেলাপিসহ প্রতিটি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সম্পদ জব্দ করে জনগণের শ্রম-ঘামের আমানত উদ্ধার করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে যেন রিকভারি এজেন্টরা জিম্মি হয়ে না পড়ে সেদিকেও গভীর মনোযোগ দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়