রুশ রাষ্ট্রদূত : বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়

আগের সংবাদ

স্বতন্ত্রের চাপে নৌকার প্রার্থীরা

পরের সংবাদ

নিরাপদ হোক অতিথি পাখির আবাস

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুই সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যে স্বতন্ত্র। ঋতুচক্রের ধারাবাহিকতায় নিজস্ব সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্য নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয় শীতকাল বা শীতের ঋতু। নানা দিক থেকেই শীতের ঋতুতে অন্য ঋতু থেকে একটু ভিন্ন রকম ভালো লাগা কাজ করে। বার্ষিক ঘূর্ণায়নে শীতের ঋতুতে আমাদের মাঝে হাজির হয় বাংলাদেশের মহান বিজয়ের গল্পগাঁথা মাস ডিসেম্বর। একই সঙ্গে খ্রিস্টীয় নতুন বছরের আগমন। নবান্নের আমেজ ভরা গ্রামবাংলার মাঠ ঘাট। নতুন ধানের গন্ধ জড়ানো শীতল বাতাসে খেজুর রসের ম ম গন্ধ। এই সময়ে প্রকৃতি সেজে ওঠে নানান সাজে। মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের দোলা। যতদূর চোখ যায় শুধু সরিষা ক্ষেত আর সরিষা ক্ষেত। পথের ধারে অবহেলায় বেড়ে ওঠা বুনো গাছগুলোও এ সময়ে ছেয়ে যায় ফুলে ফুলে। মাটির বুকে লেপ্টে থাকা ঘাসেও শিশিরের ছোঁয়ায় হেসে ওঠে ফুল ঘাসফুল। বিলজুড়ে শাপলার ঢ্যাপ আর পদ্মফলের সমারোহ চলে। এর মাঝে বাড়তি সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় অতিথি পাখিগুলো। বাংলাদেশের হাওর বিলে ঝিলে পুকুর ডোবায় দেখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব নাম না জানা অতিথি পাখির। ইট-পাথরে ঘেরা শহরের বন্দি লেকগুলোও ভরে যায় অতিথি পাখির মেলায়। এ সব অতিথি পাখিদের নিজ দেশ থেকে দেশান্তরিত হয়ে অন্য দেশে আসার বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণায় বিভিন্ন মত প্রকাশ পেয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের সাধারণ ধারণা অনুযায়ী তীব্র শীত থেকে বাঁচতে অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশে পাখিরা পাড়ি দেয়।
হিমালয়, সাইবেরিয়া, আসাম, পিলিপাইন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ পশ্চিম চীনের মালভূমি, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, তিব্বতের উপত্যকা, ইংল্যান্ড, নর্থ হ্যামাশায়ার ও অ্যান্টার্কটিকার চেয়ে দক্ষিণের দেশে তুলনামূলক শীত কম। তাই শীত শুরু হতেই পাখিরা চলে আসে বাংলাদেশে। শারীরিক গঠনের দিক থেকে এ পাখিগুলো প্রকৃতগতভাবেই শক্তিশালী ও মজবুত দেহের অধিকারী। দিনরাত মিলে এরা প্রায় ২৫০ কিমি উড়তে পারে। ছোট পাখিগুলো ঘণ্টায় ৩০ কিমি উড়তে পারে আর বড় পাখিরা ঘণ্টায় ৮০ কিমি উড়তে পারে অনায়াসে। এরা ৬০০-১৩০০ মিটার উঁচুতে দিয়ে ওড়ে। পাখি গবেষকদের মতে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সব থেকে বেশি পাখি আসে। তবে আসা শুরু হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে আর মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত থাকে। এ সময়টা কলকাকলিতে মুখরিত করে রাখে আমাদের দেশের জলাশয়গুলো। অসাধারণ তাদের বিচরণ ভঙ্গি, বাসা তৈরির কৌশল। দারুণ বৈচিত্র্যময় তাদের বাচ্চা পালন দক্ষতা। এসব অতিথি পাখির মধ্যে যাদের নাম জানা যায়-বালিহাঁস, চখাচখি, রাজহাঁস, মানিকজোড়, গাংকবুতর, নারুদ্দি, চিনাহাঁস, নাইরাল ল্যাঙ্গি, ভোলাপাখি, হারিয়াল, বনহুর, বুরলিহাস, সিরিয়া পাতিরা, পিয়াংচিনা, কবালি, যেনজি, প্রোভায়, নাইবাল, ডেলা ঘেনজি, গ্রাসওয়ার, গেন্ডাভার, বারহেড, সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, দুর্গা, টুনটুনি, রাজশকুন, লালবন মোরগ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, জঙ্গি বটের, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা ও কুলাউসহ নাম না জানা শত শত পাখি। এসব পাখির মধ্যে কোনো কোনো পাখি পুরো শীতকালজুড়ে আমাদের দেশে অবস্থান করে। আবার অনেক পাখি আছে যারা আমাদের দেশের মাটি জল সাময়িক আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে। গ্রীষ্মকালে আবার ফিরে যায় নিজ দেশে। আশ্চর্যজনক সত্য, এ সব পাখি তাদের গন্তব্যস্থল ঠিক রাখতে পারে হাজার মাইলের ব্যবধানেও। যখন অতিথি হয়ে আমাদের দেশে আসে তখন এদের গায়ে কোনো পাখনা থাকে না। কিছুদিন পর অনুকূল আবহাওয়া নতুন পাখনা গজায়। তীব্র শীত, তুষারঝড়ের কবল থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসব পাখি আমাদের দেশে আসে। অথচ আমাদের দেশের কিছু অসৎ লোভী লোক এ সব অতিথি পাখিদের ফাঁদে ফেলে ধরে নেয়। শিকার করে মাংসের জন্য। সামান্য একটু মাংসের লোভে পাখি মারে তারা। আমাদের দেশের নদী নালা খাল বিলগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এমনিতেই পাখি কমে গেছে পাখির আবাসস্থলের অভাবে। পাখি খেকো অমানবিক মানুষগুলোর কারণে আগের মতো পাখি দেখা যায় না। অথচ আমাদের দেশেই দেখা মিলত নানা জাতের পাখি। ভোরে ঘুম ভাঙত পাখির ডাকে। যা এখন শুধুই অতীত। এই শীতের সময়ে অতিথি পাখির আগমনে আমাদের দেশের পাখিপ্রেমী মানুষগুলো একটু পাখির দেখা পায়। তাদের সংস্পর্শে আসতে পারে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে পাখি শুধু বইয়ে পড়া কাল্পনিক প্রাণী হয়ে যাচ্ছে। তাদের বাস্তবে পাখি দেখানোর সুযোগ এ সময়। আমাদের সবার উচিত অতিথি পাখির আবাস নিরাপদ রাখা। হাজার মাইল দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে যে প্রাণের মায়ায় আমরা যেন অমানবিক হয়ে পাখিদের সে প্রাণ কেড়ে না নিই। এরা পাখি হলেও আমাদের দেশের অতিথি। এ কথাটা মাথায় রেখে তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখা উচিত। প্রশাসনিকভাবেও পাখি নিধনে কঠোর আইনের প্রয়োগ দরকার। আমাদের দেশের সৌন্দর্যের অংশ এসব অতিথি পাখি। ভালো থাকুক নিরাপদ থাকুক।

নূরজাহান নীরা : চিকিৎসক ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়