রুশ রাষ্ট্রদূত : বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়

আগের সংবাদ

স্বতন্ত্রের চাপে নৌকার প্রার্থীরা

পরের সংবাদ

নতুন পাঠ্যক্রম ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আসা পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মন্তব্যে আর ভিডিও। যেখানে অনেকে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের ভিডিও ভাইরাল করে বিষয়টি নিয়ে সস্তা সমালোচনার আসরও বসিয়েছেন। কোনো কোনো অভিভাবক বর্তমান যুগ আর পরিস্থিতির সঙ্গে এমন শিক্ষাব্যবস্থা উপযোগী মনে করলেও বেশিরভাগ অভিভাবক বিষয়টিকে অন্যভাবে চিন্তা করছেন। ফলে দোদুল্যমান এমন অবস্থায় নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে অনেক শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক প্রকার ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে এক শ্রেণির প্রাইভেট টিউটর আর গাইড ব্যবসায়ীদের বেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। তারা কোমলমতি শিশু এবং অভিভাবকদের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে নতুন প্রণীত পাঠ্যক্রমের মূল উদ্দেশ্যকে ভিন্নধারার প্রবাহিত করছে।
কারণ নতুন পাঠ্যক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর দৃষ্টি দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যেখানে একজন শিক্ষার্থীর মেধা-মনন শানিত করার জন্য একটি পরীক্ষা বা পুঁথিগত বিদ্যাকে বিবেচনা করা হবে না; বরং প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখল পারল সেটা ক্লাসেই মূল্যায়ন করা হবে। এতে এসব প্রাইভেট টিউটর এবং বিদ্যালয়ের এক শ্রেণির ঘরোয়া শিক্ষকদের শিক্ষা-বাণিজ্য কমে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা ক্ষোভে ফুলেফেঁপে উঠছে এবং নানা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে এটিও অস্বীকার করার মতো নয় যে, আধুনিক এই শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করে তোলার আগে আমাদের শিক্ষকদের আরো বেশি দক্ষ এবং কৌশলী করে তুলতে হবে। কারণ এখনো আমাদের অনেক শিক্ষকরা নতুন শিক্ষানীতির সঙ্গে নিজেদের গড়ে তুলতে পারিনি। যদিও সর্বশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে একঝাঁক তরুণ মেধাবীকে শিক্ষক পেশায় আগ্রহী হতে দেখা গেছে। যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষ করে বিগত শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা দেখেছি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে কোমলমতি শিশুদের মূল্যায়ন করা হয় বছর শেষে পরীক্ষার খাতার ওপর ভিত্তি করে। যা তাদের শিক্ষাজীবনের শুরুতে একটি মানসিক চাপ আর ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। এ জন্য শিশুদের শিক্ষাগ্রহণকে আনন্দময় করে তুলতে এই শিক্ষানীতির প্রবর্তন করছে বর্তমান সরকার। অনেক অভিভাবক বিষয়টিকে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও বাস্তবিক প্রেক্ষাপট যে ভিন্ন সেটি তারা উপলব্ধি করতে পারছে না। কারণ নতুন এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ পরিবর্তন হচ্ছে, তাদের জানার আর শেখার আগ্রহও বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের চিন্তার জগৎকে বড় করে ভাবতে পারছে। নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম বই আর গাইড নির্ভর না হয়ে নিজস্ব চিন্তাভাবনা আর ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে বেড়ে উঠবে। এজন্য দেশের শিক্ষাবিদদের এমন পরিকল্পনাকে শুধু সমালোচনা আর হাসির খোরাক না বানিয়ে এই শিক্ষাব্যবস্থার মহৎ উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি করতে হবে।
তবে শিক্ষাব্যবস্থার এই পরিবর্তন এক বছর বা এক মাসে কখনো সম্ভব নয়। কারণ দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমরা একটি শিক্ষানীতির ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছি। সেখান থেকে বের হতে সময় লাগবে এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য নতুন এই শিক্ষাক্রমকে আগে শিক্ষকদের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে; শিক্ষক সহায়িকায় বিস্তারিতভাবে এর মূল উদ্দেশ্য তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের এ নীতিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রেক্ষাপটনির্ভর অভিজ্ঞতা, প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণ, বিমূর্ত ধারণায়ন ও সক্রিয় পরীক্ষণের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন শিক্ষা নীতিমালা যে জটিল নয় বা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে আরো সহায়ক ভূমিকা রাখবে এটি আগে শিক্ষকদের উপলব্ধি করাতে হবে। আর তার জন্য নতুন করা সিলেবাস সরাসরি শিক্ষার্থী নয়, আগে শিক্ষকদের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় এ শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের সৃষ্টিশীল জগৎকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করবে- তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

রিয়াদ হোসেন : শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়