রুশ রাষ্ট্রদূত : বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়

আগের সংবাদ

স্বতন্ত্রের চাপে নৌকার প্রার্থীরা

পরের সংবাদ

ধোঁকা ও প্রতারণায় ডুবছি সবাই

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আস্থা এবং বিশ্বাস একটি আরেকটির সম্পূরক বিষয়। বিশ্বাসের হাত ধরেই আস্থার সৃষ্টি। আস্থা মানবজীবনের বড় রকমের একটি বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমে মানুষের পরস্পরের প্রতি আস্থা সৃষ্টি হয়, সে লাভ করে বিশাল স্বস্তি, চরম তৃপ্তি। এটি পরস্পর নির্ভরতার প্রতীক, জীবনে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়, মানুষের ওপর আস্থা রাখতে হয়। কিন্তু বর্তমান সমাজে কতটা আস্থা রাখতে পারি মানুষের ওপর, কতটা বিশ্বাস করতে পারি একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে? হোটেলে খেতে যাবেন, কার্প মাছকে ভেজে আপনার প্লেটে দিয়ে বলবে রুই মাছ, ব্রয়লার মুরগি দিয়ে বলবে দেশি মুরগি, মরা মুরগির কথাও তো মাঝে মাঝে শুনি। পচা বাসি খাবারের কথা নাই বা বললাম। হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল কুকুরের মাংসের বিরিয়ানি খাওয়ানোর ঘটনায় দেশব্যাপী। কার ওপর আস্থা রাখবেন? ফল বিক্রেতার ওপর? ফরমালিন দেয়া, বিষমাখানো ফল কিনে নিয়ে আসতে হবে আপনার ঘরে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাবেন? সেখানে সবকিছু ঘিরে রেখেছে প্রতারকচক্র। অহেতুক টেস্ট দিয়ে বিনা প্রয়োজনে অপারেশন করে আপনার পকেট কাটবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ডাক্তার মহাশয়। ৫০ টাকার ওষুধে যে রোগ সেরে যাওয়ার কথা বিভিন্ন কলাকৌশল করে আপনার কাছ থেকে খসাবে ৫০ হাজার টাকা। নির্ভর করার জায়গাটি মসজিদ, মাদ্রাসা, আলেম সমাজ ও সম্মানিত ইমামগণ। কিন্তু এখানেও জেঁকে বসেছে প্রতারকচক্র। ফেসবুক, ইউটিউবের যুগে কতরকম ফন্দিফিকির করতে দেখা যায় অনেককেই। ভাইরাল রোগে আক্রান্ত দীনের দাওয়াত প্রদানকারীদের অনেকেই। এসব কারণে মসজিদ-মাদ্রাসা থেকেও কমতে শুরু করেছে আস্থা ও বিশ্বাস। মাজার বানিয়ে গাঁজার আসর বসিয়ে চলে মারফতের নামে আরেক ভয়ানক প্রতারণার খেলা। আমাদের দেশে পীর না ধরলে যেন চলে না। দেশে যে কত পীর আর মাজার! সৌদি আরবে কোনো মাজার নেই, পীর নেই, ওদের কি চলে না? গাড়িতে চলতে গিয়ে বাসে বসা পাশের ব্যক্তিকে বিশ্বাস করেছেন তো আপনার সব খোয়াতে হবে। রাস্তায় চলতে গিয়ে অচেনা কারো দেয়া একটি কিছু খাবেন তো আপনার জীবনটায় খোয়াতে হতে পারে। এভাবে সমাজের সর্বত্র চলছে প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, দালালি ও হারাম পথে অর্থ উপার্জনের প্রতারণার খেলা। পরস্পরে বিশ্বাস ও আস্থার অভাবে সমাজ সংসার ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাস নেই স্বামী-স্ত্রীতেও। প্রবাসী স্বামী বিশ্বাস হারাচ্ছেন দেশে রেখে যাওয়া স্ত্রীর পরকীয়াতে। স্ত্রী স্বামীকে অফিসে পাঠিয়ে রাখতে পারছে না তার ওপর বিশ্বাস বা আস্থা। অফিসের নারী সহকর্মীর সঙ্গে গড়ে উঠছে সখ্য, ফলে রেকর্ড ভেঙে বেড়ে চলছে নারী নির্যাতন, হত্যা ও বিবাহ বিচ্ছেদ। চলছে পারিবারিক আদালত মামলা-মোকদ্দমা। মিথ্যা মামলার মাধ্যমে বিভিন্ন রকম নির্যাতন। এখানেও চলছে মিথ্যা ও প্রতারণা। প্রতারক সেজে কত রকম ফন্দি করে মানুষকে জিম্মি বানিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র। এ জমানায় সহজ-সরল হওয়া মানেই প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সবকিছু হারানো। দালাল চক্র সব জায়গায় সক্রিয়, একটু অসচেতনতা মানেই প্রতারকের খপ্পরে পড়া। অনাস্থা ও অবিশ্বাসে আমরা আজ জর্জরিত। মানুষের মধ্যে এ জিনিসের বড় অভাব দেখা দিয়েছে। আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না, আস্থা রাখতে পারছি না একজন অপর জনের ওপর। নেতার প্রতি জনগণ, জনগণের ওপর নেতার আস্থা বা বিশ্বাস নেই। তাই চলছে অনাকাক্সিক্ষত অশান্তি। ভাই ভাইয়ে, পিতা-পুত্রে, বন্ধু-বন্ধুতেও আজ এ ব্যাধি সংক্রমিত।
জীবনের প্রায় সব জায়গা থেকে বিশ্বাস ও আস্থা যেন এখন বিলুপ্ত। সংঘাতময় জীবন প্রশান্তির ঠিকানা বিশ্বাস ও আস্থা। মুসলমানের বিশ্বাস আল্লাহর ওপর। এ বিশ্বাস পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি করে। তাই কোনো মুসলিম কাউকে ঠকাতে পারে না, পারে না কখনো প্রতারণা করতে। মুসলিমের অন্তর থাকে বিশ্বাসে সিক্ত, আল্লাহর ভয়, বিশ্বাসে থাকে প্রশান্ত। যে কারণে কোনো মুসলিমদের হাতে অপর মুসলিমদের ক্ষতি হতে পারে না, হতে পারে না প্রতারিত। তাহলে তো প্রশ্ন আসে, আমরা কি দিন দিন আমাদের বিশ্বাসের জায়গা থেকে সরে যাচ্ছি? আমরা কি তাহলে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছি? সময় থাকতে আমাদের বিশ্বাস ও অবস্থার জায়গাটি মেরামত করা প্রয়োজন।

হেলাল আজম : শিক্ষার্থী, সরকারি বাংলা কলেজ, অধিভুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়