রুশ রাষ্ট্রদূত : বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়

আগের সংবাদ

স্বতন্ত্রের চাপে নৌকার প্রার্থীরা

পরের সংবাদ

ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু : সামাজিক প্রেক্ষাপট

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত বিষয় ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু। পশ্চিমা বিশ্বসহ সমগ্র পৃথিবীতেই ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে অনেকের মনেই সুস্পষ্ট ধারণা নেই, কেননা অনেকে মনে করছেন এটা হয়তো হিজড়ারই আরেক রূপ বা এমন কিছু। ট্রান্সজেন্ডার অর্থ রূপান্তরিত লিঙ্গ। অর্থাৎ শারীরিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক লিঙ্গ হতে আরেক লিঙ্গে রূপান্তর হওয়া। সঙ্গে মানসিকভাবেও নিজেকে অন্য লিঙ্গের মানুষ হিসেবে মনে করা। ট্রান্সজেন্ডার লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গ বিপরীতকামী, সমকামী, উভকামী বা নিষ্কামী ইত্যাদি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন। অথবা প্রচলিত যৌন অভিমুখিতার তকমাকে বেঠিক বা অপ্রযোজ্যও মনে করতে পারেন। অন্যদিকে হিজড়া হচ্ছে জন্মগতভাবেই লিঙ্গভিত্তিক ত্রæটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তি। তারা পুরোপুরি নারীও নন, আবার পুরোপুরি পুরুষও নন। তাই ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়ার মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় হিজড়ারা সমাজের অবহেলিত মানুষ। জন্মগত ত্রæটি নিয়ে বেড়ে ওঠায় তারা সমাজের কোনো স্থানেই যথাযথ সম্মান, সুযোগ সুবিধা পায় না। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্র কর্তৃক তাদের ওপর দায়িত্ব না নেয়ায় তারা নিজেদের মতো করে জীবনযাপন করে। এক প্রকার ভিক্ষাবৃত্তি করেই বেঁচে থাকে।
অন্যদিকে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটি সমাজ অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে। কেননা এটি এমন এক ভিন্নধর্মী মতবাদ যেখানে একজন পুরুষ কিংবা একজন নারী নিজেকে মানসিকভাবে বিপরীত লিঙ্গের মতো মনে করতে পারে। অর্থাৎ নারী হয়েও নিজেকে পুরুষ মনে করতে পারেন। আবার পুরুষ হয়েও নিজেকে নারী মনে করতে পারেন। অতঃপর মানসিকতা শারীরিকভাবে বিকশিত করতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিবর্তন করে ট্রান্সজেন্ডারে পরিণত হন। যা সমাজ সমর্থন করে না। সমাজে চলতে হলে সমাজের মানুষকে সমাজ প্রত্যাশিত আচরণ করতে হয়। অথচ ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টি সমাজের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজের ভিত্তিই নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা পুরুষত্ব ও নারীসত্তা উভয়ই ধ্বংস হয় ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে। নারী-পুরুষের বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠন হয়। পরিবারই হচ্ছে সমাজ গঠনের ভিত্তি। তাই দেখা যাচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার সমাজের ভিত্তিকেই ভেঙে দেবে। অন্যদিকে এটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় এটি মূলত সমাজ বিধ্বংসী মতবাদ। সমাজে ট্রান্সজেন্ডারদের স্বীকৃতি দিলে সমাজকে নানা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। যেমন- নারীরা নিজেদের পুরুষ দাবি করে মা-বাবার সম্পত্তিতে পুরুষের সমান ভাগ দাবি করবে। এতে সম্পত্তি বণ্টন বিষয়ক নানা ঝামেলা দেখা দেবে। ঘরে ঘরে খুনাখুনি, মারামারি শুরু হবে। পুরুষরা আবার নিজেদের নারী দাবি করে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন, সুযোগ-সুবিধাগুলো ভোগ করবে। ফলে নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয় হতে নারীরা বঞ্চিত হবে। চরিত্রহীন পুরুষরা নিজেদের নারী দাবি করে নারীদের সঙ্গে একই হোস্টেলে, হলে একই রুমে বা বিছানা শেয়ার করে থাকতে পারবে, একই বাথরুম ব্যবহার করতে পারবে। ফলে সমাজে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন মহামারি আকার ধারণ করবে। মানুষের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধূলিসাৎ হবে। তাই ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কিত সঠিক তথ্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। সবাইকে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সমাজের কল্যাণের কথা বিবেচনায় পরিবার, সমাজ ও সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে সবার পারস্পরিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

তাহমিনা আক্তার : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়