উদ্দেশ্য ‘দোয়া’ নেয়া : কাজী ফিরোজ রশীদের বাসায় সাঈদ খোকন

আগের সংবাদ

আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর জনসভায় শেখ হাসিনা : নৌকাতেই দেশের উন্নয়ন

পরের সংবাদ

শক্তিশালী রেমিট্যান্সের জন্য দক্ষ জনশক্তি দরকার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদেশিক সম্পদ অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হলো রেমিট্যান্স। আর রেমিট্যান্স হলো দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের অবদান মোট জিডিপির ১২ শতাংশ এবং বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। শক্তিশালী রেমিট্যান্সের জন্য দরকার দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি। আর দক্ষ ও প্রশিক্ষিত অভিবাসীদের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেই অভিবাসন হওয়া দরকার; কিন্তু বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের বিশেষ চাহিদা থাকায় অনেক শ্রমিক অভিবাসন করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা অতি সামান্য যোগ্যতা বা দক্ষতা অর্জন করে অথবা একেবারেই অদক্ষ হয়ে অভিবাসন করছে। ফলে তারা কাক্সিক্ষত কাজে যুক্ত হতে পারছে না। দক্ষতার অভাবে এবং অজ্ঞতার কারণে তারা নানা অপব্যবহার ও বহুবিদ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একটু সচেতন হলেই এই অপব্যবহার ও নির্যাতন রোধ করা সম্ভব। অধিক দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে যেমন সাহায্য করে, ঠিক তেমনিভাবে যে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়তেও তাদের সাহস জোগায়।
শুধু প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতিই নয় বরং অনেক অভিবাসী অভিবাসনের পূর্বে গন্তব্য দেশের ভাষা, আইন-কানুন, আবহাওয়া সম্পর্কে সামান্যই ধারণা রাখে। বিদেশে একসময় কাজ করেছেন এমন ১০০ জনেরও বেশি অভিবাসীর ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, তাদের একদিকে রয়েছে প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক সচেতনতার অভাব, যোগাযোগের অদক্ষতা, নির্মাণ শ্রমিকদের নিজেদের দুর্বল শারীরিক কাঠামো, খাদ্যাভাসসহ স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব, আধুনিক যন্ত্রপাতি চালনায় সিদ্ধহস্ত না হওয়া, পেশাদারি মনোভাবের অভাব। মজার বিষয় হলো- এসব অভাব বা দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও অভিবাসীরা দিনের পর দিন দেশের রিজার্ভ বাড়িয়ে দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে এদেশ থেকে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখের বেশি মানুষ ১৭৪টির বেশি দেশে শ্রম দিচ্ছেন এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। এদের বেশিরভাগই কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩১ কর্মী বিদেশে গেছে, এর বিপরীতে ২ হাজার ১৬১ দশমিক ৭০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশ গিয়েছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ জন এবং এর বিপরীতে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ দশমিক ১৭ কোটি ডলার। সে হিসাবে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও সে তুলনায় রেমিট্যান্স আসছে না দেশে। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স হ্রাস পাওয়ার পেছনে হুন্ডিকে দায়ী করা হলেও প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের দক্ষতা তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ।
বাংলাদেশ থেকে দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ কর্মী যাওয়ার ফলে শুধু প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শ্রম অনুযায়ী রেমিট্যান্স বাড়ছে না। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের কর্মীদের মান অনেক নিচে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে লাখ লাখ কর্মী বিদেশ গেলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে না। গুণগতমান ঠিক করতে না পারলে দেশের শ্রমবাজারগুলো হারাতে হতে পারে। বিশ্বে শ্রমবাজারে অদক্ষ বা আধা দক্ষ শ্রমিকদের কদর ক্রমান্বয়ে কমছে।
অন্যদিকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। জনশক্তি আমদানিকারী দেশগুলোর চাহিদা ও পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের জনশক্তিকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি এবং তারাই ঘুরিয়ে দিতে পারে রেমিট্যান্সের চাকা। এজন্য উন্নয়ন সহায়ক দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারকে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মো. জিল্লুর রহমান : ব্যাংকার ও লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়