ভালা জার্নালিস্টস ফোরাম : সভাপতি রুমেন পরশ সাধারণ সম্পাদক

আগের সংবাদ

নাশকতার টার্গেট এখন রেল

পরের সংবাদ

প্রতীক পেয়েই প্রচারযুদ্ধ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশে ভোটের সৌন্দর্য প্রচারযুদ্ধে। সেই যুদ্ধ শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার। প্রতীক পেয়েই আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। স্লেøাগান, মিছিল-মাইকিংয়ের শব্দে সরগরম হয়ে উঠেছে জনপদ। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম- সব জায়গায় জমজমাট প্রচারণা। এরই মধ্যে প্রার্থী ও প্রতীকের ছবিসহ পোস্টার লাগানো শুরু হয়ে গেছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই প্রচারণার প্রথম স্লোগান দেন প্রার্থীর সমর্থকরা। প্রতীক পাওয়ার পরই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রার্থীদের সমর্থক নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল করেন। বিকাল থেকেই মাইকে প্রচারণায় সরগরম হয়ে ওঠে ঢাকার বাইরের নির্বাচনী এলাকাগুলো। অনেক প্রার্থীই দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। তবে প্রথম দিন থেকেই সতর্ক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা চলবে আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। সেই হিসাবে প্রচার-প্রচারণার জন্য এবার ১৮ দিন সময় পাবেন এমপি প্রার্থীরা। এমপি প্রার্থীরা প্রতীক পেয়েই প্রচারণা শুরু করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবে আগামীকাল বুধবার। দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে প্রচারণার সূচনা করবেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগরের ১৫টি সংসদীয় আসনের ১২২ জন প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা সাবিরুল ইসলাম। একেকটি প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা স্লোগানে স্লোগানে তা প্রচার করেন। ঢাকা-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ দুপুর ১২টায় বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে নৌকা প্রতীক নেন।
প্রতীক বরাদ্দের সময় প্রার্থীদের সমর্থকদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ময়মনসিংহ জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের পুরো এলাকা। প্রতীক পেয়েই ভোটারদের কাছে যাওয়া শুরু করেছেন মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সিলেটে প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন ৩৩ জন প্রার্থীর নেতাকর্মীরা। রাজবাড়ীর দুটি আসনে ১১ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের সময় প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান।
প্রচারণার বিষয়ে ভোলা-৩ আসনের প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর প্রচারণা শুরু করেছি। নির্বাচনী সব

আচরণবিধি মেনেই প্রচারণা চালানো হচ্ছে। রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ট্রাক প্রতীক পেয়েছেন। প্রচারণার প্রথম দিন গতকাল সারাদিন সাংগঠনিক কাজ করেছেন। সন্ধ্যায় তানোর উপজেলার মুন্ডুমালায় নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেন।
প্রতীক নিয়ে জেলা থেকে বিকালে নিজ এলাকায় এসেই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণায় নামেন কুমিল্লার প্রার্থীরা। কুমিল্লা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ হোমনায় ট্রাক প্রতীক পেয়েছেন। প্রতীক পাওয়ার পর নিজ বাড়িতে মিলাদ ও দোয়ার মধ্যে দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন তিনি। মিলাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান রেহেনা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান আবুল, মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আলী আহমেদ, পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান টিপু, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
জাপা প্রার্থী মঞ্জুরল ইসলাম শামীম লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। এ আসনের আরেক হেভিয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শফিকুল ইসলামও তার ঈগল প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। তবে দেশে রাষ্ট্রীয় শোক থাকায় শোক পালন করতে গিয়ে এদিন প্রচারণায় নামেননি নৌকার প্রার্থী সেলিমা আহমাদ।
প্রথম দিনেই প্রচারণার মাইকের আওয়াজে সরগরম হয়ে ওঠে রাজশাহী-৬ আসনের পাড়া-মহল্লা। পোস্টার সাঁটানো ও প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়ার আলম। বাঘা উপজেলা সদরসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নৌকা প্রতীকের পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি মাইকিংয়ের মাধ্যমে ভোটের প্রচারণায় নামেন তিনি।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মহসিন আলী বলেন, প্রতীক পাওয়ার পর পোস্টার ছাপাতে দেরি হয়েছে। তাই প্রথম দিন পোস্টার সাঁটানো ও প্রচার মাইক নামিয়ে প্রচারণার কাজ করতে দেরি হয়েছে। বিএনএমর প্রার্থী অধ্যক্ষ (অব.) আবদুস সামাদ বলেন, পোস্টার ছাপানোর পর পোস্টার লাগানোর কাজসহ প্রচারণা শুরু করব।
স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হান বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় প্রতীক পাওয়ার পর পোস্টার ছাপানোর কাজ করতে দেরি হয়েছে। তবে মাইকে প্রচারণা চলছে। জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন রিন্টু জানান, দলীয় প্রতীক থাকলেও দলের সিদ্ধান্ত মেনে পোস্টার সাঁটানো ও প্রচার-প্রচারণা চালাবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, পোস্টারের যাবতীয় কাজ সেরে রাখা হলেও প্রতীক বরাদ্দের পর পোস্টার সাঁটানো ও প্রচারণার কাজে মাইক ব্যবহার করছেন।
প্রচারণায় মানতে হবে বিধিনিষেধ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে মানতে হবে নিয়মকানুন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে সংসদ নির্বাচন আইনের ১০ নম্বর ক্রমিকে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনী বিধিনিষেধের উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবেন। তবে প্রতিপক্ষের সভা, শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য প্রচারাভিযান পণ্ড বা বাধা দিতে পারবেন না। প্রার্থীদের সভার দিন, সময় ও স্থান সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী সভার স্থান এবং সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। জনগণের চলাচলের বিঘœ সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করা যাবে না। কোনো সভা অনুষ্ঠানে বাধাদানকারী বা অন্য কোনোভাবে গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সভার আয়োজকরা পুলিশের শরণাপন্ন হবেন।
কোনো প্রার্থীর প্রচারণায় কোনো গেট বা তোরণ নির্মাণ করা যাবে না কিংবা চলাচলের পথে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচারণায় বিদ্যুতের সাহায্যে কোনো প্রকার আলোকসজ্জা করতে পারবেন না। মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী এলাকায় দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করে প্রচারণা চালাতে পারবেন।
এতে আরো বলা হয়, প্রার্থীরা নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ব্যবহার বা সরকারি যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।
পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহারসংক্রান্ত বিধিনিষেধ : কোনো প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সিটি করপোরেশন এবং পৌর এলাকায় অবস্থিত দালান, দেয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে, সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনায় এবং বাস, ট্রাক, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ, রিকশা কিংবা অন্য কোনো প্রকার যানবাহনে পোস্টার লাগাতে পারবেন না।
এছাড়া কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদির ওপর অন্য কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি লাগানো যাবে না এবং ওই পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ইত্যাদির কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন তথা বিকৃতি বা বিনষ্ট করা যাবে না।
একজন প্রার্থী দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় নির্বিশেষে প্রতিটি ইউনিয়নে সর্বোচ্চ একটি এবং প্রতিটি পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতি ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না।
কোনো প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল কিংবা মশাল মিছিল করতে পারবে না কিংবা কোনোরূপ শোডাউন করতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচারকার্যে হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার করা যাবে না। তবে দলীয় প্রধানের যাতায়াতের জন্য তা ব্যবহার করতে পারবেন; কিন্তু যাতায়াতের সময় হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট, ব্যানার বা অন্য কোনো প্রচারসামগ্রী প্রদর্শন বা বিতরণ করতে পারবে না।
দেয়াললিখন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : কোনো প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি দেয়াললিখনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। কালি বা রং দ্বারা কিংবা অন্য কোনোভাবে দেয়াল ছাড়াও কোনো দালান, থাম, বাড়ি বা ঘরের ছাদ, সেতু, সড়কদ্বীপ, রোড ডিভাইডার, যানবাহন বা অন্য কোনো স্থাপনায় প্রচারণামূলক কোনো লিখন বা অঙ্কন করা যাবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়