৫ মাস পর ডেঙ্গুতে মৃত্যুশূন্য, নতুন রোগী ১৭৯

আগের সংবাদ

প্রতীক পেয়েই প্রচারযুদ্ধ

পরের সংবাদ

মাঠের লড়াই জমবে এবার : আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু আজ থেকে > মোট প্রার্থী ১৮৯৬ > আ.লীগ ২৬৩, জাপা ২৮৩

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : ভোটের আবহে পুরো দেশ। আজ সোমবার প্রতীক বরাদ্দ দেবে নির্বাচন কমিশন। প্রতীক পাওয়ার পরপরই আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামবেন প্রার্থীরা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গতকাল রবিবার। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৮টি নিবন্ধিত দল। দিন শেষে এসব দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৯৬ জন। জোট শরিক ও জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে এবার ২৬৩ আসনে লড়বে আওয়ামী লীগ। আর ২৮৩ আসনে নির্বাচন করছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। বাকি আসন তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে সবকিছু অবহিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এদিকে ভোটের হাওয়া পালে লাগিয়ে প্রার্থীরা যাচ্ছেন এলাকায় এলাকায়। আজ প্রতীক পেয়েই পুরো উদ্যমে জনসংযোগে ব্যস্ত হবেন তারা। গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ-জাপা আসন সমঝোতা নাটকের অবসান শেষে নিজ নিজ নির্বাচনী মাঠে সংযোগ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা। জাপাকে ২৬ এবং ১৪ দলের শরিকদের ৬ টিসহ মোট ৩২টি

আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, এই ৩২ আসনে তাদের প্রার্থী থাকছে না। নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলগত ও জোটগতভাবে অংশগ্রহণ করবে মর্মে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছিল। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক কিংবা তাদের স্ব স্ব দলের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে এবং এ বিষয়টি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখের মধ্যে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা হবে। এমতাবস্থায় নি¤েœাক্ত আসনগুলোতে জোটের প্রার্থী থাকার কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হলো।’ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি নিয়ে যান আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। পরে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ দলের শরিকরা নৌকা মার্কায় ভোটে অংশ নেবেন। আর জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে আমাদের নিজেদের ৫টি আসনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সেসব আসন আমাদের দিক থেকে উন্মুক্ত থাকবে।
যেসব আসনে সমঝোতা : ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারী-৩ এ রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমান, রংপুর-১ এ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার, রংপুর-৩ আসনে জি এম কাদের, কুড়িগ্রাম-১ আসনে মুস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ শামীম পাটোয়ারী, গাইবান্ধা-২ আসনে মো. আব্দুর রশিদ সরকার, সিলেট-৩ আসনে মো. আতিকুর রহমান, বগুড়া-৩ আসনে নুরুল ইসলাম তালুকদার, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মো. মুজিবুল হক চুন্নু, বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ আসনে নুরুল ইসলাম তালুকদার, সাতক্ষীরা-২ আসনে আশরাফুজ্জামান, পটুয়াখালী-১ আসনে রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল-৩ আসনে হোলাম কিবরিয়া টিপু, পিরোজপুর-৩ আসনে মো. মাশরেকুল আজম রবি, ময়মনসিংহ-৫ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মুজিবুল হক, মানিকগঞ্জ-১ জহিরুল আলম রুবেল, ঢাকা-১৮ শেরীফা কাদের, হবিগঞ্জ-১ মো. আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আব্দুল হামিদ, ফেনী-৩ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনে সুলেমান আলম শেঠ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে। এর মধ্যে নানায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আগে থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না।
অন্যদিকে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জাসদ তিনটি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন পেয়েছে। তাদের জন্য বগুড়া-৪, রাজশাহী-২, কুষ্টিয়া-২, বরিশাল-২, পিরোজপুর-২ এবং ল²ীপুর-৪ আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অবশ্য ২০১৮ সালের নির্বাচনে মোট ১৬টি আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল ১৪ দল। এবার সংখ্যাটা একই রকম থাকবে বলে আশা করেছিলেন তারা। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন শরিকরা।
এদিকে সব আসনেই একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করছেন। দশম সংসদ নির্বাচনের মতো এবারো বিএনপি ভোট বর্জন করায় আওয়ামী লীগ নতুন কৌশল নিয়েছে। ২০১৪ সালের মতো অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হওয়া এড়াতে এবার মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। ফলে নৌকা কিংবা অন্য প্রতিদ্ব›দ্বীদের জিততে হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপে রাখতে কোনো কমিটি বিলুপ্ত করা হলে বা কাউকে বহিষ্কার করা হলে তা কার্যকর হবে না। কোথাও বহিষ্কার হচ্ছে না। তার পরও যদি কেন্দ্রের নির্দেশ ছাড়া কেউ বহিষ্কার বা কমিটি বিলুপ্ত করে, তা কার্যকর হবে না।
২৮৩ আসনে লড়াই করবে জাপা : আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ছাড়ের দর কষাকষির নাটকীয়তা শেষে নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৩ আসনে লড়াই করবে দলটি। গতকাল রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। চুন্নু জানান, এবার আওয়ামী লীগকে ছাড়াই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে জাতীয় পার্টি। ২৮৩ আসনে স্বতন্ত্রভাবে (জোটগতভাবে নয়) নির্বাচন করবেন তারা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৮৩টি আসনে ভোটে থাকছে জাতীয় পার্টি। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো জোট হয়নি। আসন সমঝোতা হয়নি। কিছু আসনের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল রয়েছে। নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি। সব বাধা উপেক্ষা করে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। নির্বাচনে আসার জন্য আপনাদের ওপর কোনো চাপ ছিল কিনা, জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, আমাদের ওপর কোনো চাপ ছিল না। জাতীয় পার্টি স্বতন্ত্র একটা দল, আমাদের নিজস্ব একটা রাজনীতি আছে। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কত আসনে সমঝোতা হয়েছে- এ বিষয়ে কিছুই জানাননি চুন্নু। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কত আসনে ছাড় পাওয়া গেছে বা কত আসন পাব, এটি আমাদের দলীয় কৌশল। এটি এখানে বলা যাবে না।
শেষ দিনে প্রত্যাহারের হিড়িক : গতকাল ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভিড় করেন প্রার্থীরা। দলীয় সিদ্ধান্তের পাশাপাশি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন কেউ কেউ। গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে জাকের পার্টি। ঢাকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে একে একে আসতে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন আসনের জাকের পার্টির প্রার্থীরা। মনোনয়ন প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে ‘দলীয় প্রধানের হুকুম’-এর কথা উল্লেখ করেন তারা। এদিকে, ফরিদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হক, বরিশাল-৪ আসনের শাম্মী আহমেদ প্রার্থিতা ফেরত পেতে হাইকোর্টে রিট করেছেন। উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বরিশাল-৫-এর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহও। দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে এই তিন হেভিওয়েটের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশা ইসির : গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। তবে কবে থেকে সেনা মোতায়েন হবে তা আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব। আর গতকাল গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক ভোট হবে। আপনি আপনার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসুন। নিরাপদে কেন্দ্রে আসুন। আপনি আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবেন। বাড়িতে গিয়েও আপনি নিরাপদে থাকতে পারবেন।
এদিকে ইতোমধ্যে ৬৬ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯২ সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণ হবে প্রায় ৪২ হাজার কেন্দ্রে। আসনভিত্তিক ভোটার তালিকাও চূড়ান্ত করেছে ইসি। তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ ও নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৫২ জন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়